বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম

বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম ২০২২-বিকাশ একাউন্ট বন্ধ বা ডিলিট বা বাতিল করব কিভাবে? বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার বিষয় নিয়ে অনেকের মনে অনেক রকম প্রশ্ন থাকে। বিকাশ একাউন্ট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক। ছোট-বড় প্রায় সব ধরনের মানুষ বিকাশে একাউন্ট খুলে লেনদেন করার জন্য। তাছাড়া প্রায় সময় বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম সম্পর্কে জানার প্রয়োজন পড়ে।

বাংলাদেশে বিকাশ একাউন্ট লেনদেনের ক্ষেত্রে খুবই জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। এজন্য প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিকাশ একাউন্ট খুলে থাকে। বর্তমানে মানুষ ঘরে বসেই অনেক জিনিস কেনা-বেচা করতে পারে বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে। এছাড়াও বিদ্যুত বিল, গ্যাসের বিল, পানির বিল ইত্যাদি পরিশোধ করা যায় বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে। এজন্য ও বিকাশের জনপ্রিয়তা এবং ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পোস্ট সূচিপত্র:

বিকাশ একাউন্ট কেন বন্ধ করবো?

বর্তমান সময়ে অনেক অসাধু মানুষ বিকাশে প্রতারণা করে থাকে। এছাড়াও বিকাশ ব্যবহারকারীরা অনেক সমস্যায় পড়ে থাকে। বিভিন্ন কারণে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার প্রয়োজন পড়ে। প্রতারকদের প্রতারণা থেকে বাঁচতে। হ্যাকারদের হাত থেকে বাঁচতে। যে সিমে বিকাশ একাউন্ট খোলা ছিল সেই সিম হারিয়ে গেলে বা বিকাশ একাউন্টের সিম চুরি হয়ে গেলে ইত্যাদি কারণে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার প্রয়োজন পড়ে। আজকে আমরা বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করতে কি কি ডকুমেন্ট লাগে?

বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করতে যে জিনিস গুলো প্রয়োজন হয় তা নিম্নরূপ:
১. যে NID ( National ID Card ) দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলা হয়েছিল সেই এনআইডি কার্ড নিয়ে বিকাশের অফিসে যেতে হবে এবং আপনি যদি পরিবারের কোন সদস্যের যেমন-বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা-চাচি বা অন্য কারো NID কার্ড ব্যবহার করে বিকাশ একাউন্ট খুলে থাকেন। তাহলে যার এনআইডি কার্ড দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খুলেছেন তাকেও বিকাশের অফিসের সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
২. আপনি যদি অন্য কোন ডকুমেন্ট দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খুলে থাকেন তাহলে সেটি প্রয়োজন হবে। যেমন-পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি।

৩. আপনার বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার আগে সেই একাউন্টে টাকার পরিমাণ শূন্য (০) করে দিতে হবে।

বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম

প্রধানত বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার তিনটি ধাপ রয়েছে। নিম্নে এই তিনটি ধাপ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

প্রথম ধাপ:-বিকাশ একাউন্টের জমা টাকা শূন্য করা

বিকাশের নিয়ম অনুযায়ী বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার প্রথম শর্ত হলো-বিকাশ একাউন্টে কোন টাকা রাখা যাবে না অর্থাৎ একাউন্টের ব্যালেন্স শূন্য বা জিরো করতে হবে।
বিকাশ একাউন্টের ব্যালেন্স শূন্য (0) করা নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকে-কিভাবে বিকাশ একাউন্টের ব্যালেন্স শূন্য করবো? বিকাশ একাউন্টে কোনো না কোনো পয়সা বা টাকা থেকেই যায়। যেমন- ০.৬৫ পয়সা বা ২১.৪৬ টাকা।

কিভাবে বিকাশ একাউন্টের ব্যালেন্স শূন্য করবো?

আপনি যদি চান তাহলে অন্যান্য ব্যাংক একাউন্টের মতো বিকাশ একাউন্টের ব্যালেন্স 0 করতে পারবে। এটা কিভাবে করবো? এমন প্রশ্ন আপনার ভেতরে আসতে পারে। এর সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে-আপনার কাছে এর বা প্রিয়জনের কারো নাম্বার টাকা পাঠিয়ে দেওয়া।

আপনি যদি বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনি ৫০০ টাকা পর্যন্ত ফ্রিতে টাকা পাঠাতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে কোন চার্জ পে করতে হবে না। কিন্তু আপনি যদি ইউএসএসডি কোড *247# ডায়াল করে টাকা পাঠান তাহলে প্রতিবার টাকা পাঠানোর জন্য ৫ টাকা চার্জ প্রযোজ্য হবে। প্রয়োজনে আপনি চাইলে দশমিকের পরের পয়সাগুলোও পাঠাতে পারবেন সেন্ড মানি ( Send Money ) করে।

দ্বিতীয় ধাপঃ-প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই বলতে আপনার -মূল জাতীয় পরিচয় পত্র/ড্রাইভিং লাইসেন্স/পাসপোর্ট এর অনুলিপি। বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার জন্য Online NID প্রিন্ট কপি নিয়ে যেতে হবে।

মনে রাখবেন বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিক হতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যেমন- NID কার্ডে যদি কোন সমস্যা থাকে। তাহলে আপনি বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করতে পারবেন না। তাই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র ঠিক আছে কিনা যাচাই করে নিবেন। যদি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র ঠিক থাকে তাহলে আপনি পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুত।

তৃতীয় ধাপঃ:-গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে যোগাযোগ করা

ধরে নিলাম আপনার বিকাশ একাউন্টের ব্যালেন্স শূন্য। এবার যে ব্যক্তির নামে বিকাশ একাউন্ট খোলা হয়েছিল তার NID কার্ডের মূল কপি নিয়ে নিকটবর্তী বিকাশ গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে যেতে হবে। মনে রাখবেন য়ার জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলা হয়েছিল তাকেও সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে। যার জাতীয় পরিচয় পত্র কার্ডটি দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলা তাকে নিতে হবে এবং রেজিস্ট্রেশন মোবাইল নাম্বার নিতে হবে।

আপনার সিম কার্ডটি প্রয়োজন হতে পারে আবার নাও প্রয়োজন হতে পারে। তবে সঙ্গে করে সিম কার্ডটি নিয়ে যাওয়া ভালো। আশাকরি কোন ঝামেলা ছাড়াই খুব সহজে আপনি বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করতে পারবে। এবার আপনি গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলুন-আপনি আপনার বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করতে চান। এরপর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র কার্ড থেকে মালিকানা নিশ্চিত করবে এবং আপনার অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এই হল বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার প্রক্রিয়া।

বিকাশ একাউন্টের পিন নাম্বার ভুলে গেলে কি করবেন?

আপনি যদি আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন নাম্বার ভুলে যান। তাহলে আপনি বিকাশ একাউন্টে কোন প্রকার লেনদেন করতে পারবেন না। অনেকে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করতে চাই। কিন্তু বিকাশ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে হলে বিকাশে ব্যালেন্স শুন্য করতে হবে। এর জন্য আপনাকে অবশ্যই পিন নাম্বার জানতে হবে। এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে খুব সহজেই বিকাশের একাউন্ট বন্ধ করতে পারবে।

আপনি যদি আপনার বিকাশের পিন নাম্বার ভুলে যান। তবে আপনি আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন নাম্বার রিসেট বা পরিবর্তন করে নিবেন। এরপর রিসেট করা পিন নাম্বার দিয়ে আপনি আপনার বিকাশ একাউন্টের ব্যালেন্স শুন্য করতে পারবেন।

কিভাবে বিকাশ একাউন্টের নাম পরিবর্তন করবেন?

অনেকে বিকাশ একাউন্টের নাম পরিবর্তন করা নিয়ে ঝামেলায় পড়ে থাকেন এবং নাম পরিবর্তন করা নিয়ে দুশ্চিন্তা করে বা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে। এই বিষয়ে আপনার চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। আপনি খুব সহজেই বিকাশ এর নাম পরিবর্তন করতে পারবেন। চলুন তাহলে জেনে নেই কিভাবে বিকাশের নাম পরিবর্তন করবেন-

বিকাশ একাউন্টের নাম পরিবর্তন করার জন্য আপনাকে নিকটবর্তী গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে কল করতে হবে এবং আপনাকে জানানো হবে যে, বিকাশ একাউন্টের নাম পরিবর্তন বা মালিকানা পাল্টানোর আগের সেই অ্যাকাউন্টটি Deactivate বা বন্ধ করতে হবে। এর জন্য আপনাকেও উপরের নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে এবং অবশ্যই ব্যালেন্স শুন্য (০) করতে হবে।

তারপর বিকাশ একাউন্ট পুনরায় যার নামে খুলবেন তার পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রয়োজন হবে। তাই আপনারা বিকাশ সেবা কেন্দ্রে যাবার আগে যার একাউন্ট তাকে ও যার নামে অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করবেন এই দুইজনের এনআইডি কার্ড সঙ্গে নিয়ে যাবেন। মনে রাখবেন যার নামে অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন হবে তার পাসপোর্ট সাইজ ছবি নিয়ে যেতে ভুলবেন না।

বিকাশ একাউন্টের সর্বশেষ ৬টি লেনদেনর তথ্য কিভাবে দেখবো?

বিকাশ একাউন্টের সর্বশেষ ৬টি  লেনদেনের তথ্য কিভাবে দেখবেন তা নিম্নে আলোচনা করা হল:-
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৮০% মানুষ বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। কেউ বিকাশে টাকা জমা পড়ে থাকে, কেউ আবার টাকা তুলে থাকে, আবার কেউ টাকা অন্য কাউকে পাঠায়। আবার কেউ বিকাশের মাধ্যমে রিচার্জ বা কেনাকাটা করে থাকে। বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ বিকাশ ব্যবহার করে থাকে।

এতে করে অনেকের ভুলে অন্য নাম্বারে টাকা চলে যায়। কেউবা বলে দোকানদারের নাম্বারে টাকা ক্যাশ আউট করে দিয়েছে। কিন্তু দোকানদারের নাম্বারে টাকা আসেনি। এতে করে বিকাশের টাকা লেনদেনে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এক কথায় বলা যায়, আমরা মানুষ, মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে টাকা চলে এসেছে কিন্তু টাকার মেসেজ আসে নাই। এমনকি অনেকে আবার মেসেজ ডিলিট করে ফেলেছে।

এজন্য অনেকে বিকাশ একাউন্টের সর্বশেষ টাকা লেনদেনর তথ্য খুজে পায় না। এজন্য অযথা চিন্তা করার কারণ নেই। তাহলে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে সর্বশেষ টাকা লেনদেনের তথ্য বের করা যায়।
  • প্রথমে আপনি আপনার মোবাইলে *247# নম্বরটি ডায়াল করুন।
  • এরপর মাই বিকাশ My Bkash অপশন সিলেক্ট করে ওকে করুন।
  • তারপর Request Statement অপশন সিলেক্ট করে ওকে করুন।
  • এরপর Enter Pin নাম্বার ঘরে আপনার কাঙ্খিত পিন নাম্বারটি দিয়ে ওকে করুন।
  • এরপর আপনি খুব সহজে আপনার টাকা লেনদেনের ৬টি তথ্য পেয়ে যাবেন।

নিকটবর্তী বিকাশ গ্রাহকসেবা কেন্দ্র কোথায়?

যেকোনো ধরনের সহযোগিতা পেতে নিকটবর্তী বিকাশ গ্রাহক সেবার ঠিকানা জানতে বিকাশ Helpline নাম্বার ১৬২৪৭ কল করুন।

পরিশেষে বলা যায় যে, আপনি অবশ্যই এই আর্টিকেলটি পড়ার পরে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম সম্পর্কে জেনেছেন। এ পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভাল লাগে তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আর যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
2 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Raju Hassan
    Raju Hassan March 29, 2022 at 9:08 PM

    Nice 👍

    • jorip
      jorip March 30, 2022 at 7:10 AM

      ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url