তারাবিহ নামাজ-তারাবিহ নামাজের নিয়ত ও নিয়ম ও দোয়া
রমজান মাসের রাতের বিশেষ ইবাদত তারাবিহ নামাজ। রমজান মাসের রাতে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে নামাজ আদায় করা হয়, একে ‘তারাবিহ নামাজ’ বলা হয়।
তারাবিহ (تَرَاوِيْح) শব্দটি আরবি। এর অর্থ হলো বিশ্রাম করা। অর্থাৎ দীর্ঘ কেরাতে তারাবিহ নামাজ পড়ার কারণে চার রাকাআত পর পর বিশ্রাম নিয়ে তারাবিহ নামাজ পড়া হয় বিধায় এটিকে তারাবিহ নামকরণ করা হয়। তারাবিহ নামাজ রমজানেই আদায় করা হয়। দীর্ঘ ১১ মাস তারাবিহ নামাজের চর্চা না থাকায় অনেকেই তারাবিহ নামাজের নিয়ত,নিয়ম,দোয়া ও মুনাজাতগুলো ভুলে যায়। যে কারণে রমজান মাস এলেই তা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য এই পোস্টটি। দীর্ঘ কেরাতের তারাবিহ নামাজ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
হজরত সাঈর ইবনে ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের রাতের (তারাবিহতে) নামাজে শত শত (শ’-এর ওপর) আয়াত পড়তেন। এর ফলে সুদীর্ঘ সময় দাঁড়ানোর কারণে আমরা লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম।(মুয়াত্তা মুহাম্মদ)
আরো পড়ুন:তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত ও নিয়ম-jorip24
রমজানের রাতের বিশেষ ইবাদত তারাবিহ নামাজের রয়েছে তাৎপর্যপূর্ণ ফজিলত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারাবিহ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন-
‘যে ব্যক্তি রমজানের রাতের (তারাবিহ) নামাজ ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের নিয়তে পড়বে, তার জীবনের আগের সব গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’ সুবহানাল্লাহ!
পোস্ট সূচিপত্র:
তারাবিহ নামাজের নিয়ত-
نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر
উচ্চারণ: নাওয়াইতুআন উসালিয়া লিল্লাহি তাআলা, রাকাআ’তাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআ’লা মুতাওয়াযজ্জিহান ইলা যিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার। (যদি জামাআতের সহিত নামাজ হয় তবে- ইক্বতাদাইতু বি হাজাল ইমাম বলতে হবে)।
অর্থ: আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাআ’ত তারাবিহ সুন্নাত নামাজ আল্লাহর জন্য আদায়ের নিয়্যত করছি, আল্লাহু আকবার। (যদি জামাআ’তের সহিত নামাজ হয় তবে- এই ইমামের ইমামতিতে জামাআ’তের সহিত)।
যাদের আরবী উচ্চারণ করতে সমস্যা হয় অথবা পড়তে পারেন না, তারা বাংলায় নিয়ত করতে পারবেন।
বাংলায় নিয়ত: "আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাআ’ত তারাবিহ সুন্নাত নামাজ আল্লাহর জন্য (জামাআত হলে- এ ইমামের পেছনে) আদায়ের নিয়্ত করছি-(اَللهُ اَكْبَر) আল্লাহু আকবার।"
তারাবিহ নামাজ পড়ার নিয়ম-
এশা’র চার রাকাত ফরজ নামাজ ও ২ রাকাত সুন্নত আদায় করার পর এবং বিতর নামাজের আগে তারাবিহ নামাজ আদায় করতে হয়। তারাবিহ নামাজ দুই রাকাআত করে নিয়ত করতে হয়। দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা। আবার দুই রাকাআত নামাজ পড়া। এভাবে ৪ রাকাআত আদায় করার পর একটু বিশ্রাম নেয়া। বিশ্রামের সময় তাসবিহ তাহলিল পড়া, দোয়া-দরূদ ও জিকির আজকার করা। তারপর আবার দুই দুই রাকাআত করে আলাদা আলাদা নিয়তে তারাবিহ নামাজ আদায় করা।
তারাবিহ নামাজের দোয়া-
চার রাকাআত তারাবিহ নামাজ আদায় করার পর ব্যাপক প্রচলিত একটি দোয়া রয়েছে। যে দোয়াটি দেশের প্রায় সব মসজিদে পড়া হয়। তা হলো-
سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ
উচ্চারণ: "সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।"
আরো পড়ুন:মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম
উল্লেখ্য যে, তারাবিহ নামাজের চার রাকাআত পড়ার পর এ দোয়াটি ব্যাপক প্রচলিত। তবে এ দোয়ার সঙ্গে তারাবিহ নামাজ হওয়া কিংবা না হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এমন নয় যে, এ দোয়া না জানলে তারাবিহ নামাজ আদায় হবে না। বরং যে কোনো দোয়াই পড়া যাবে। তবে এ সময়টিতে কুরআন-সুন্নাহর দোয়াগুলো পড়াই উত্তম।
তারাবিহ নামাজের মুনাজাত-
অনেকেই ৪ রাকাআত পর পর তারাবিহ নামাজের মুনাজাত করে থাকে। আবার অনেকে পুরো নামাজ শেষ করে মুনাজাত করে থাকে। তবে তারাবিহ নামাজ শেষ করে বিতর নামাজ পড়ে মুনাজাত করা উত্তম। মুনাজাতের ক্ষেত্রে ও একটি দোয়া ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এই মুনাজাতটিকে ও অনেকে আবশ্যক মনে করে। কেউ কেউ এমনও মনে করে যে, এই দোয়াটি ছাড়া তারাবিহ নামাজের মুনাজাত হবে না। এটি মোটেও ঠিক নয়। তবে এ দোয়ায় মুনাজাত দিলে গোনাহ হবে তা নয়। মুনাজাতটি হলো-
اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ - اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’
উল্লেখ্য, রমজান জুড়ে বিশ্বনবীর এই দোয়াগুলো বেশি বেশি করা জরুরি। আর তাহলো-
- اَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ اﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আ’ন্নি।
তাছাড়া তারাবিহ নামাজের পর সাইয়্যিদুল ইসতেগফারও পড়া যেতে পারে-
- اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : "আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্বা’তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।"
তারাবিহ নামাজের ফজিলত-
রমজান মাসে তারাবিহ নামাজের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমান ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে পুণ্য লাভের আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তাঁর জীবনের পূর্বের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
তারাবিহ নামাজ কত রাকাত?
উত্তর: তারাবিহ সালাত দুই রাকআত দুই রাকআত করে যেকোনো সংখ্যক রাকআত পড়া হয়। তারাবিহ নামাজ কত রাকাত হবে, রাসুলুল্লাহ (স.) তা নির্ধারণ করে যাননি। হানাফি, শাফিয়ি ও হাম্বলি ফিকহের অনুসারীগণ বিশ রাকআত, মালিকি ফিকহের অনুসারীগণ ৩৬ রাকআত এবং আহলে হাদীসরা আট রাকআত তারাবিহ নামাজ পড়েন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে তারাবিহ নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। রাতের নামাজ (তারাবিহ) আদায়েল মাধ্যমে বিগত জীবনের সব গোনাহ থেকে মুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
পোস্টটি পড়ে উপকৃত হলাম
ইনশাল্লাহ