ফ্রিল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গাইডলাইন
আমাদের দেশের বিপুল সংখ্যক বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের চাহিদা অনেক অংশে কমিয়েছে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং। এটি এমন একটি পেশা যেখানে কাজ করার কোনো ধরাবাঁধা সময় নেই। আপনার যখন ইচ্ছা, যেখানে ইচ্ছা কাজ করতে পারেন।
এখানে আপনার শুধু দরকার একটি নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের উপর দক্ষতা অর্জন করা। ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) ও আউটসোর্সিং (Outsourcing) এর আওতা অনেক বড়। ফটো এডিটিং (Photo Editing) থেকে শুরু করে ভিডিও তৈরি, এডিট করা (Video Editing) সহ গ্রাফিক্স ডিজাইনের সকল বিভাগই এর আওতাভুক্ত। এছাড়া ওয়েব ডিজাইন (Web design), কোডিং (Coding), এনিমেশন তৈরি (Animation Making), ব্লগিং (Blogging) সহ অনেক কাজ আপনি এখানে পেয়ে যাবেন।
যাহোক, এই বিষয়ক সব কিছুই আমরা এই পোস্টে তুলে ধরবো। এই পোস্টে আমাদের আলোচ্য বিষয় ফ্রিল্যান্সিং কি এবং ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং ক্যারিয়ার গাইডলাইন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্র:
ফ্রিল্যান্সিং কি?
ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) মূলত এমন একটি পেশা যেখানে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এটি অনেকটা চাকরির মতোই, কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং এর ভিন্নতা হলো এখানে আপনি আপনার স্বাধীন মতো কাজ করতে পারবেন।
মনে করেন, আপনার এখন কাজ করতে ইচ্ছা করছে না; আপনি করবেন না। নির্দিষ্ট কোনো অফিস টাইম নেই। এরপরে এখানে আপনার নির্দিষ্ট কোনো ইমপ্লয়ার (Employer) নেই। যখন যে বায়ারের কাজ নিবেন তখন সেই আপনার ইমপ্লয়ার (Employer)।সাধারণ চাকরি থেকে এখানে আরেকটি বিষয়ের ভিন্নতা আছে। সেটি হলো কাজের স্থান। ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) এর নির্দিষ্ট কোনো অফিস বা স্থান নেই। মূলত আপনার বাড়িই হচ্ছে আপনার অফিস।
আপনি বাসায় বসেই বিভিন্ন দেশের বায়ারদের সাথে কাজ করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) এর ক্ষেত্রে খুব সহজেই সরকারি বেসরকারি অনেক চাকরির থেকে বেশি বেতনে কাজ করতে পারবেন আপনার যদি যথেষ্ট পরিমাণে দক্ষতা বা স্কিল থাকে।
আমরা সবাই জানি যে, সেভাবে আমাদের দেশে দক্ষতার কদর হয় না; কিন্তু বাইরের দেশ গুলোতে হয়। আপনি সেসব দেশের বায়ারদের সাথে কাজ করে বাংলাদেশের তুলনায় দ্বিগুণ/তিনগুণ অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
কি কি দক্ষতা লাগবে ফ্রিল্যান্সিং করতে?
অনেকেরই কনফিউশন থাকে যে আসলেই কি আমি ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) করতে পারবো? কি কি জিনিস দরকার এই কাজের জন্য? সত্যি কথা বলতে তেমন কিছুই লাগবে না আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং পেশা শুরু করার জন্য। প্রথম যে জিনিসটা আপনার লাগবে সেটি হলো ইচ্ছাশক্তি ও ধৈর্য্য। এগুলো থাকলেই আপনি এই সেক্টরে সফল হবেন।
এর পাশাপাশি আপনার দরকার হবে ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগের দক্ষতা এবং কাজ চালানোর মতো ইংরেজি জানা। ইন্টারনেট সম্পর্কিত ভালো ধারনা ও গুগল এবং ইউটিউব থেকে বিভিন্ন রিসোর্স খুঁজে বের করার দক্ষতা এক্ষেত্রে আপনাকে অনেক সহায়তা করবে। এই ছিল মুলত প্রয়োজনীয় বিষয়াবলী যা আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য যোগ্য করে তুলবে।
কিভাবে শুরু করবেন ফ্রিল্যান্সিং?
সকলের প্রশ্ন থাকে যে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন। ফ্রিল্যান্সিং পেশা শুরু জন্য আপনাকে প্রথমেই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে যে কাজটি আপনি ভালো বুঝেন সে কাজটি বেছে নিবেন।ফলে আপনি কাজ করে যেমন ছন্দোবদ্ধ করবেন, তেমন অনেক দূর যেতে পারবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত সেক্টরটিতে।
যে কাজটি আপনি বেছে নেবেন তার পূর্বেই আপনি দেখবেন যে, এই কাজটি আপনি কেমন পারছেন, কেমন আগ্রহ আছে আপনার ওই কাজের উপর। যদি দেখেন সব কিছু ঠিকঠাক, সেক্ষেত্রে এটিকে নির্ধারিত করে ওই রিলেটেড যত কাজ আছে সব শিখবেন।এগুলো আপনি নিজে নিজেই গুগলে বা ইউটিউবে রিসোর্স খুঁজে সেখান থেকে দেখে দেখে শিখতে পারেন, আবার চাইলে বিভিন্ন কোর্স আছে অনলাইনে সেগুলোও করতে পারেন। পুরোটাই আপনার ইচ্ছার উপরে নির্ভরশীল।
কাজ শেখার পরে এবার কাজ করার পালা। কাজ করার জন্য আপনাকে প্রথমেই একটি ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে (Freelancing Platform) একাউন্ট খুলতে হবে। বর্তমানে এরকম অনেক প্লাটফর্ম রয়েছে। যেমন: Fiverr, Freelancer, Upwork ইত্যাদি। একাউন্ট খোলার পর সেটিকে সুন্দর করে সাজাতে হবে। দোকানে যেমন বিভিন্ন পন্য সাজানো থাকে, ঠিক তেমন করেই আপনার করা কাজগুলো পোর্টফোলিও আকারে সাজিয়ে রাখতে হবে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস (Marketplaces) গুলোতে। এর পরে শুধু প্রথম কাজের জন্য অপেক্ষা।
আসলে প্রত্যেকটা কাজের ক্ষেত্রেই প্রথম ধাপটা একটু কষ্টকর হয়ে থাকে। ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রেও বিষয়টি ভিন্ন নয়। এক্ষেত্রেও প্রথম কাজটা পাওয়া একটু কষ্টসাধ্য। তবে কারো রেফারেন্সের মাধ্যমে কাজ পাওয়া অনেক সহজ এখানে। সেক্ষেত্রে আপনি পরিচিত কোনো ফ্রিল্যান্সারের সাহায্য নিতে পারেন।
বাংলাদেশে একটা বড় কমিউনিটি আছে ফ্রিল্যান্সারদের। সেখান থেকেও সাহায্য নিতে পারেন। প্রথম কাজ পাওয়া গেলে এর পর থেকে আর কাজের অভাব হয় না। তবে তার জন্য আপনাকে আপনার কাজের কোয়ালিটি বজায় রাখতে হবে, আপনাকে আপনার ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করতে হবে।
নতুনরা কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আসতে পারে
ফ্রিল্যান্সিং এর জগতে নতুনদের আসতে এখন আর খুব বেশি কোনো সমস্যা হয় না। ফ্রিল্যান্সিং সর্ম্পকিত সমস্ত তথ্য ইন্টারনেটেই আছে। আপনি গুগল কিংবা ইউটিউবে কিছুটা ঘাটাঘাটি করলে এই বিষয়ে আরো জানতে পারবেন। তাছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন প্রফেশনাল মানের অনলাইন কোর্স থেকে শুরু করে অনেক ভালো ভালো ট্রেনিং সেন্টারও রয়েছে; যেখানে আপনি ট্রেনিং করে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন।
তবে একটি বিষয় অবশ্যই চিন্তা করা প্রয়োজন। ফ্রিল্যান্সিং এমন কোনো পেশা নয় যেখানে আপনি এক মাস কাজ করলেই খুব ভালো আয় করতে পারবেন। আপনাকে ধৈর্য্য সহকারে কাজ করে যেতে হবে।
কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন?
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য সর্ব প্রথম আপনাকে যেকোনো একটি বিষয়ে উপর খুব ভালো মানের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। যেমন ধরুন আপনি ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর উপর খুব ভালো দক্ষতা অর্জন করলেন। এবার আপনাকে যেকোনো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট তৈরি করতে হবে। একাউন্ট তৈরি করার পর আপনাকে যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে একটি অর্ডার পাওয়ার জন্য।
সত্যি কথা বলতে একজন নতুন ওয়েব ডিজাইনারকে কেউই কাজ দিতে খুব একটা আগ্রহী প্রকাশ করে না। কিন্তু আপনার প্রোফাইলে যদি ভালো কিছু রিভিউ থাকে, তাহলে আপনাকে আর কাজ পেতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কাজ কিভাবে পাবেন?
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কাজ পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। একটা বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে অনেক অনেক ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। একজন ক্লায়েন্ট কেন আপনাকেই কাজটি দিবে? তার জন্য আপনাকে অবশ্যই খুবই ভালো মানের যোগাযোগ ব্যবস্থায় দক্ষ হতে হবে। তাছাড়া ক্লায়েন্ট আপনাকে যে কাজটির জন্য পেমেন্ট করবে সেই কাজটিও আপনাকে অত্যন্ত ভালোভাবে সম্পন্ন করতে হবে।
আরো পড়ুন: এসইও কি? SEO এর কাজ শেখার উপায়
মনে রাখবেন, বায়ারের সাথে যতো ভালো সম্পর্ক তৈরি হবে আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার ততো বেশি সুন্দর হবে। তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন প্রতিটি বায়ারের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করার।
ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা
ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। তারপরও সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলো নিচে বর্ণনা করা হলোঃ
সময়ের স্বাধীনতা-
আগেই বলেছিলাম, এই কাজে আপনার সুবিধামত সময়ে আপনি কাজ করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার উপরে। আপনি যদি চান আপনি এখন কাজ করবেন না, আপনাকে কেউ জোর করবে না এখন কাজ করতে।
কাজের স্বাধীনতা-
আপনি নিজেই নিজের কাজ বেছে নিতে পারবেন। আপনার যে কাজটি সব থেকে ভালো লাগে সেটিকে বেছে নিতে পারবেন এবং চাইলে যতদিন ইচ্ছা ওই কাজ করে যেতে পারবেন।
নিজের বেতন নিজে ঠিক করা-
আপনার নিজের পেমেন্ট রেট (Payment Rate) আপনি নিজে বেছে নিতে পারবেন। প্রায় প্রত্যেকটা মার্কেটপ্লেসেই নিজের পেমেন্ট রেট উল্লেখ করার সুযোগ রয়েছে। আপনি যত বেতনে কাজ করতে চান সেটি অনুযায়ী কাজ পাবেন।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করা সুযোগ-
ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কাজ না করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বা বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করতে পারবেন। এক্ষেত্রেও ক্লায়েন্ট (Client) বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন পুরোটাই আপনার নিজের উপরে নির্ভর করে।
পড়ালেখার পাশাপাশি কাজের সুযোগ-
ফ্রিল্যান্সিং পেশাটি আপনি চাইলে ফুল টাইমও নিতে পারেন আবার পার্ট টাইম হিসাবেও কাজ করতে পারেন। তাই ছাত্র থাকা অবস্থায়ও এই কাজ আপনি করতে পারবেন বিনা ঝামেলায়।
নিজের মন মতো কাজের পরিবেশ-
আপনি চাইলেই নিজের ইচ্ছা মতো ওয়ার্কস্টেশন (Workstation) বানিয়ে নিতে পারবেন কাজ করার জন্য। আপনার কাজের জায়গা আপনি নিজেই তৈরি করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) এর অসুবিধা
ফ্রিল্যান্সিং এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ এক্ষেত্রে। চলুন দেখে নিই ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) এর অসুবিধাগুলোওঃ
- ফ্রিল্যান্সেরদের (Freelancer) দীর্ঘ সময় একই জায়াগায় বসে কাজ করতে হয়। এজন্য কোমর, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাথা সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
- কম্পিউটার এর সামনে একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফ্রিল্যান্সারদের চোখের সমস্যা দেখা যায়।
- ফ্রিল্যান্সেরদেরফিনান্স অর্দের সব কাজ বাসায় বসে করতে হয়। এর ফলে একাকীত্বের মাধ্যমে মানুষ অবসাদগ্রস্ত হয়ে যায় যেটি পরবর্তীতে বড় রুপ ধারন করতে পারে।
- প্রায়শই ঘুমের নানা রকম সমস্যায় সম্মুখীন হন ফ্রিল্যান্সাররা। কারন দেখা যায় আমাদের দেশে যখন রাত, ক্লায়েন্টের দেশে তখন দিন।
- বাইরে তেমন বের না হওয়ার কারনে রোদের স্পর্শ পায় না তেমন এই পেশার লোকজন। সেক্ষেত্রে ভিটামিন ডি এর অভাব হওয়াটা ব্যতিক্রম কিছু না।
পরিশেষে বলা যায় যে,এই ছিল মূলত ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) ও আউটসোর্সিং (Outsourcing) নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। প্রত্যেকটা জিনিসেরই ভালো মন্দ উভয় দিক থাকে। এক্ষেত্রেও ভালো মন্দ উভয় দিক বিদ্যমান। এখানে একটু নিয়ম মেনে চললে ফ্রিল্যান্সিং এর অসুবিধাগুলোকে খুব সহজেই এড়িয়ে চলা যায়।যদি আপনার আরো কিছু জানার থাকে, সেক্ষেত্রে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
nice post
ধন্যবাদ
Beautiful post
thank you so much