ড্রপশিপিং কি? Drop shipping বিজনেস করে টাকা ইনকাম করার উপায়
বর্তমান যুগে প্রতিনিয়ত ব্যবসার বিস্তার বাড়ছে । সময়ের সাথে যেমন আমরা হয়ে যাচ্ছি অনলাইন ভিত্তিক তেমনই ব্যবসাও হয়ে যাচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক। বর্তমানে অনলাইনে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ব্যবসা হলো ড্রপশিপিং। অনেক বেশি সম্ভাবনাময় একটি ব্যবসা এটি এবং লাভজনকও বটে।
আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে শেয়ার করব ড্রপশিপিং কি? (What is dropshipping) কীভাবে করে? ইত্যাদি সকল যাবতীয় বিষয়ে৷ তাই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। ড্রপশিপিং বিজনেস কি? Drop shipping বিজনেস করে টাকা ইনকাম করার উপায়।
পোস্ট সূচিপত্র:
ড্রপশিপিং কি?(What is dropshipping)
আপনি যদি একটা ব্যবসা দাড় করাতে চান তাহলে আপনার কি কি দরকার হয়? আপনার প্রথমেই দরকার হয় যে পণ্য নিয়ে ব্যবসা করবেন সেই পণ্যটি। অর্থাৎ যথেষ্ট পরিমাণ পণ্য আপনাকে স্টকে রাখতে হবে। তারপরে কাস্টমার যখন আপনাকে অর্ডার করবে তখন আপনি পণ্যটি ডেলিভারি করে দিবেন। এভাবেই একটি নরমাল অনলাইন বিজনেস করা হয়ে থাকে।
কিন্তু ড্রপশিপিং এর জন্য আপনাকে পণ্য স্টক করে রাখার কোন প্রয়োজন/দরকার নেই। মনে করুন “A” নামক অনলাইন স্টোরে পণ্যের দাম অনেক কম এবং “A” স্টোরটির জনপ্রিয়তা কম।
ধরা যাক, “A” স্টোরে একটি প্যান্টের দাম ১০০ টাকা এবার আপনি আপনার নিজের একটি ই-কমার্স বিজনেস শুরু করবেন এবং সেখানে সেই “A” স্টোরের প্যান্ট গুলোর ছবি দিয়ে বিক্রয় করা শুরু করবেন। এখন আপনি প্রতিটি প্যান্টের দাম দিবেন ২০০ টাকা। এবার কেউ যদি আপনাকে অর্ডার করে তখন সে ২০০ টাকা আপনাকে দিয়ে দিবেন এবং সাথে তার ডেলিভারি অ্যাড্রেসও দিয়ে দিবে।
আপনি আবার সেই “A” স্টোরে গিয়ে ১০০ টাকা দিয়ে প্যান্টেটি কিনবেন এবং ডেলিভারি অ্যাড্রেসে সেই কাস্টমারের অ্যাড্রেস দিয়ে দিবেন। এবার “A” স্টোরটি পণ্যটি আপনার কাস্টমারের কাছে পৌছে দিবেন। এভাবেই ড্রপশিপিং করা হয়।
একটু লক্ষ্য করে দেখুনতো উপরের ঘটনায় “A” স্টোরটি হলো নরমাল বিজনেস এবং আপনার বিজনেসটি হলো ড্রপশিপিং বিজনেস। এবার ড্রপশিপিং বিজনেসে আপনি ঐ ঘটনায় একটি প্যান্টের জন্য ১০০ টাকা করে প্রফিট জেনারেট করতে পারছেন। তাহলে বুঝতে পেরেছেন কিভাবে ড্রপশিপিং করে আয় করা যায়।
কেন ড্রপশিপিং করবেন? (Why do dropshipping?)
আপনার মনে হয়ত প্রশ্ন আসবে কেন আপনি ড্রপশিপিং বিজনেস করবেন। এটি করে আপনি অন্য ব্যবসা থেকে কেন লাভবান হবেন? পোস্টের শুরুতে বলেছিলাম ড্রপশিপিং হলো সবচেয়ে প্রফিটেবল অনলাইন বিজনেস।চলুন একটু ব্যাখ্যা করে আসি কেন বলেছি এসব কথা।
সেইফ ইনভেস্টমেন্ট:- প্রথমে বলে রাখি অনেকেই বলে ড্রপশিপিংয়ে কোন ইনভেস্টমেন্ট দরকার হয় না। এটি সম্পূর্ণ ভুল একটি কথা। ড্রপশিপিংয়ে অবশ্যই অন্য বিজনেসের মতো ইনভেস্টমেন্ট দরকার হয়।
ড্রপ শিপিংয়ের প্রথম ইনভেস্ট থাকে মার্কেটিং-এ যেহেতু আগেই বলেছি এটি সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক একটি ব্যবসা। তাই অনলাইনে মার্কেটিংয়ের জন্য একটি ইনভেস্টমেন্টের দরকার হবে। একটি নরমাল বিজনেসে আপনাকে প্রোডাক্ট আগে থেকেই স্টোর করে রাখতে হয়। যার ফলে আগেই আপনাকে ইনভেস্ট করতে হয়। প্রোডাক্ট যদি সেল না হয় সেক্ষেত্রে আপনি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
কিন্তু ড্রপশিপিংয়ের ব্যাপার অন্য রকম। আপনার প্রোডাক্ট সেল হওয়ার পরেই আপনি ইনভেস্ট করবেন অর্থাৎ আপনার প্রোডাক্ট যখন একজন কাস্টমার কিনে নিবে তখন আপনি অন্য স্টোরে অর্ডার প্লেস করবেন অর্থাৎ আপনার ইনভেস্টমেন্টটি সেইফ হবে। অর্থাৎ লস হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
এক্ষেত্রে অনেকেই ব্যাপারটা এমন মনে করে, যে আপনি প্রথমে ক্রেতা থেকে ২০০ টাকা নিয়ে নিবেন তারপরে ১০০ টাকা আপনার কাছে রেখে ১০০ টাকা দিয়ে প্রোডাক্ট কিনে পাঠিয়ে দিবেন এবং আপনার কোন ইনভেস্টমেন্ট লাগবে না৷ এটি সম্পূর্ণ ভূল কথা কারণ আপনার ক্রেতা আপনাকে টাকা দিবে কিন্তু ক্রেতা পণ্য হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি পাবেন না৷
তাই ক্রেতাকে পণ্য আপনার থেকে টাকা দিয়েই পাঠাতে হবে। হ্যা এটি সত্য যে আপনি পণ্য বিক্রয়ের পরে ইনভেস্ট করছেন যেটিতে আপনার ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ট্রেন্ডিং প্রডাক্ট নিয়ে ব্যবসা করা যায়:- আপনি যখন নরমাল একটা বিজনেস করবেন। তখন প্রথমেই আপনি যে পণ্যটি স্টক করে রেখেছেন সেই পণ্যের স্টক শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত সেই পণ্য নিয়েই ব্যবসা করতে হবে।
কিন্তু ড্রপশিপিং এর ক্ষেত্রে আপনি যখন তখন আপনার পণ্য পরিবর্তন করতে পারবেন এবং ট্রেডিং প্রোডাক্ট গুলো নিয়ে ব্যবসা করতে পারবেন। কারণ ড্রপশিপিং এর ক্ষেত্রে তো আর আপনি পণ্য স্টক করছেন না। স্টোক শেষ হওয়ার চিন্তা থাকে না।
প্রোডাক্ট স্টোর করার চিন্তা নেই:- আপনি যখন নরমাল একটি ব্যবসা পরিচালনা করেন তখন আপনার প্রোডাক্ট স্টোর করার জন্য আলাদা জায়গা দরকার হয় এবং প্রোডাক্ট গুলোকে ঠিক রাখার মতো পরিবেশের ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু ড্রপশিপিং এর ক্ষেত্রে যেহেতু প্রোডাক্ট স্টোর করতে হয় না তাই স্টোর হাউজ নিয়েও কোন চিন্তা নেই।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বিজনেস:- আপনি যখন নরমাল ব্যবসা করবেন তখন আপনার টার্গেটেড কাস্টমার হবে শুধু মাত্র বাংলাদেশের। কিন্তু ড্রপশিপিং এর ক্ষেত্রে আপনি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড সকলের কাছেই পণ্য বিক্রয় করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি যাদের কাছে থেকে প্রোডাক্ট কিনবেন তাদের অবশ্যই গ্লোবাল ডেলিভারি সার্ভিস থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি ইন্টারনেশনাল ই-কমার্স গুলো থেকে প্রোডাক্ট নিতে পারেন।
সোর্সিং এর চিন্তা নেই:- আপনি যেই পণ্য নিয়ে ব্যবসা করবেন সেই পণ্যের সোর্স কোথায়, কোথা থেকে আনবে হবে, কিভাবে আনবেন অনেক ধরণের চিন্তা থাকে। কিন্তু ড্রপশিপিং-এ যেহেতু আপনি কোন প্রোডাক্ট সোর্সিং করবেন না আপনি সরসরি অন্য একটি শপ থেকে পণ্য কিনে দিবেন তাহলে আপনার সোর্সিং চিন্তা করতে হবে না।
ডেলিভারি নিয়ে ঝামেলা হয় না:- আপনার নরমার কোন ব্যবসায় পণ্য বিক্রয়ের পরে আপনাকে খুঁজতে হয় ভালো ডেলিভারি সার্ভিস। তার পরে আবার চিন্তা থাকে পণ্য সঠিকভাবে ডেলিভারি হয়েছে কিনা ইত্যাদি। কিন্তু ড্রপশিপিং-এ আপনার পণ্য কাস্টমার পর্যন্ত পৌঁছানোর দ্বায়িত্ব অন্য জনের যার কারণে আপনার এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করা লাগে না।
কিন্তু যদি পণ্যে কোন সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে আপনার কাস্টমার রিফান্ড দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তখন আপনার কোন ক্ষতি না হলেও আপনার ব্রেন্ড নিয়ে কাস্টমারের একটি নেগেটিভ ইমপ্রেশন তৈরি হয়৷
মার্কেটিং এর বিশাল সুবিধা:- যেহেতু পুরো বিষয়টি অনলাইন ভিত্তিক এবং সারাবিশ্ব ব্যাপি সেক্ষেত্রে আপনার মার্কেটিং করার বিশাল এাটি সুযোগ থাকে। খুব অল্প সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মাধ্যমে হাজার হাজার ক্রেতার কাছে পৌছে যাওয়া যায়। আর সব কিছু খুব ভালো মতো ট্রেক করা যায় এবং কাস্টমারের সাথে এনগেজড থাকা যায় ৷ উল্লেখ্য কারণগুলোর জন্যই ড্রপশিপিং শুরু করা দরকার।
ড্রপশিপিং করতে কি কি লাগবে?
একটি ব্যবসা করতে হলে আপনার অনেক উপকরণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে। ড্রপশিপিং তেমনই একটি ব্যবসা যার কারণে আপনার অনেক উপকরণ নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে হবে। ড্রপশিপিং শুরু করতে আপনার কি কি দরকার হবে তা নিয়ে আলোচনা করব।
নিশ রিসার্চ:- প্রত্যেক ব্যবসার শুরু করার আগে আপনাকে নিশ সিলেক্ট করতে হয়। নিশ বলতে বোঝানো হচ্ছে আপনি কোন প্রোডাক্ট গুলো নিয়ে ব্যবসা করবেন সেটি। সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ট্রেন্ড মেইনটেইন করতে হবে। অর্থাৎ ট্রেন্ডিং প্রোডাক্ট গুলো খুঁজে নিয়ে সেগুলোর উপর রিসার্চ করবেন।
প্রো টিপস:- ড্রপশিপিং এর ক্ষেত্রে সব সময় এমন সব প্রোডাক্ট সিলেক্ট করবেন যেগুলো অনেক এট্রাকটিভ এবং ইউনিক যা মানুষ সহজেই কিনতে চায়। এসব প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসা করলে বেশি সফল হওয়া যায়।
প্রোডাক্টের সোর্স :- সর্বপ্রথমে প্রোডাক্টের সোর্স দরকার। আপনি যে প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসা করবেন সে প্রোডাক্টটি কম দামে কোথায় পাওয়া যাবে সেটি আগে আপনাকে রিসার্চ করে বের করতে হবে। বেশিরভাগ ড্রপশিপাররা প্রোডাক্ট সোর্স হিসেবে আলি এক্সপ্রেসকে ব্যবহার করে।
ডোমেইন:- আপনার বিজনেসের একটি নাম সিলেক্ট করে সেই নামে একটি ডট কম ডোমেইন কিনে নিতে হবে। এটি একটা ব্যবসার জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যেহেতু ড্রপশিপিং বিজনেসটি পুরোই অনলাইন কেন্দ্রীক তাই আপনাকে অবশ্যই ডোমেইন কিনে নিতে হবে।
একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট:- ড্রপশিপিং বিজনেসের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইট ছাড়া ড্রপশিপিং সম্ভবই না। আপনাকে একটি প্রোফেশনাল লুক ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। তার জন্য আপনি দুটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেন শপিফাই অথবা ওয়ার্ডপ্রেস।
- শপিফাই:- শপিফাই প্রধানত একটি সিএমএস। এটি তৈরি করা হয়েছে ই-কমার্স ওয়েবসাইটের জন্য। আপনার একটি ডোমেইন থাকলে আপনি সেই ডোমেইন দিয়ে সহজেই একটি প্রিমিয়াম লুকিং ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলতে পারেন শপিফাই দিয়ে। শপিফাইয়ের মধ্যে মাসিক একটি পেমেন্ট দিতে হয়।
- ওয়ার্ডপ্রেস:- ওয়ার্ডপ্রেস এখন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সিএমএস। ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে আপনাকে ডোমেইনের সাথে হোস্টিংও দরকার হবে। তারপরে দরকার হবে ইকমার্স নামক একটি প্লাগিন। যার মাধ্যমে আপনি কয়েক ক্লিকেই একটি প্রিমিয়াম লুকিং ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলতে পারবেন।
সোশ্যাল প্রোফাইল:- আপনার বিজনেসের নামে সব ধরনের সোশ্যাল প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। এটি আপনার প্রতি মানুষের আস্থা আরো বাড়াবে। সোশ্যাল প্রোফাইল তৈরির সময় নিজের বিজনেসের লগো এবং ব্যানার যুক্ত করতে হবে। সব মিলিয়ে প্রোফেশনাল হতে হবে।
পেমেন্ট গেটওয়ে:- আপনাকে যখন আপনার কাস্টমার পেমেন্ট করবে এবং এই পেমেন্ট আপনাকে রিসিভ করতে হবে। কিন্তু হতে পারে কাস্টমার যে মেথডে পেমেন্ট করতে চায় আপনার কাছে সেটি এভেইলএবেল নেই। তাহলে কি হবে? আবার এমনও হতে পারে কাস্টমার আপনাকে পেমেন্ট করার পরে আপনি কাস্টমারকে প্রোডাক্ট দিলেন না। তাহলে কিভাবে কাস্টমার আপনাকে বিশ্বাস করবে? এসব সমস্যার সমাধানের জন্য পেমেন্ট গেটওয়ে দরকার হয়।
পেমেন্ট গেটওয়ের কাজ হলো সে কাস্টমার থেকে পেমেন্ট নিবে এবং তাদের কাছে রাখবে যখন কাস্টমার প্রডাক্ট রিসিভ এনসিউর করবে তখন পেমেন্টটা আপনার একাউন্টে চলে আসবে। এমন জনপ্রিয় দুটি পেমেন্ট গেটওয়ে হলো পেপাল এবং স্ট্রাইপ৷
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো এ দুটি পেমেন্ট গেটওয়ে বাংলাদেশ সাপোর্ট করে না। আমি মনে করি বাংলাদেশর ড্রপশিপারদের জন্য এটি বেশ বিশাল একটি সমস্যা। সেক্ষেত্রে অনেকে অন্য দেশের ভেরিফাইড পেপাল একাউন্ট কিনে নেই। তার সত্তেও সেসব একাউন্ট অনেক দাম এবং ব্যান হওয়ার একটি ঝুঁকি তো থাকেই।
মার্কেটিং স্কিল:- ড্রপশিপিং মানেই আপনি বুঝেছেন অন্যের পণ্য আপনি বেশি দামে বিক্রয় করে মাঝখানে একটি প্রোফিট জেনারেট করবেন৷ কিন্তু আপনি কি ভেবে দেখেছেন মানুষ কেন কম দামে পণ্য না কিনে বেশি দামে আপনার কাছে থেকে পণ্য কিনে আপনাকে লাভবান করবে? তার কারণ হলো মার্কেটিং স্কিল।
ইনভেস্টমেন্ট:- প্রথমেই আপনার সাথে ড্রপশিপিং এর ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। তাই পণ্য কেনার জন্য মোটামুটি একটি ইনভেস্টমেন্ট আপনার থাকতে হবে। তারপরে মার্কেটিং এর জন্যও কিছু ইনভেস্টমেন্ট লাগবে।
যদি উপরোক্ত সকল জিনিস আপনার তৈরী থাকে। তাহলে চলুন এবার আলোচনা করি কিভাবে করবেন ড্রপশিপিং।
কিভাবে ড্রপশিপিং শুরু করবেন ?
আপনার কাছে যদি ড্রপশিপিং এর উল্লেখিত উপকরণ গুলো থাকে। তাহলে আপনি ড্রপশিপিং বিজনেস শুরু করার জন্য প্রস্তুত। তাহলে চলুন স্টেপ বাই স্টেপ দেখে নিই কিভাবে ড্রপশিপিং করবেন (How to do dropshipping?)।
স্টেপ ১:- প্রথমেই আপনি যে পণ্য নিয়ে ব্যবসা করতে চাচ্ছেন সেই পণ্য কোথায় পাওয়া যায় এবং কত দামে পাওয়া যায় তা দেখবেন।
মনে করুন আপনি শো পিস এর ব্যবসা করবেন এখন আপনি দেখলেন যে আলি এক্সপ্রেসে শো পিসের দাম ১৫-২০ ডলারের মধ্যে তারপরে আপনি অন্য মার্কেট গুলো রিসার্চ করে দেখলেন যেমন এমাজন ইবে। এসব মার্কেটে দেখলেন একই শো পিস ৭০ ডলারে বিক্রয় হচ্ছে। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আলীএক্সপ্রেস থেকে ঐ পণ্য নিয়ে আপনি লাভ করতে পারবেন।
স্টেপ ২:- আপনার পণ্যের খরচ, ডেলিভারি চার্জ সহ যাবতীয় সকল খরচ একটি জায়গায় নোট করে আপনার পণ্যের দাম নির্ধারণ করুন। মনে রাখবেন অতিরিক্ত লাভের আশায় পণ্যের দাম বৃদ্ধি করবেন না এতে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
স্টেপ ৩:- তারপর আপনার পণ্যের আর্কষণীয় কিছু ছবি নিয়ে তা আপনার ওয়েবসাইটে পাবলিশ করুন সাথে পণ্যের ডেসক্রিপশন এবং দাম যুক্ত করবেন। আপনার ওয়েবসাইটকে প্রোপারলি এসইও অপটিমাইজড করুন। সার্চ কনসোলে ওয়েবসাইট এড করুন ৷
স্টেপ ৪:- ওয়েবসাইটের ডিজাইনসহ যাবতীয় কাজ শেষে কয়েকটি প্রোডাক্ট এড করুন এবং পেমেন্ট গেটওয়ে সেটিং করুন। ওয়েবসাইটে পণ্যে ছবি, ডেসক্রিপশন এবং টাইটেল আর্কষণীয় হতে হবে। এছাড়া এসইও’র দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
স্টেপ ৫:- আপনার ওয়েবসাইট রেডি। এবার আপনার পণ্যের ছবিগুলো নিয়ে সুন্দর কিছু ব্যানার তৈরি করুন সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোডের জন্য। তারপরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেগুলো শেয়ার করুন। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার সময় কিছু নিয়ম মেইনটেইন করবেন:-
- ডেইলি পোস্ট করার চেষ্টা করবেন। এতে আপনার এনগেজমেন্ট বাড়বে।
- মানুষকে সরাসরি আপনার পণ্য কিনতে বলবেন না। প্রথমে আপনার পণ্যটির উপকারীতা নিয়ে কথা বলুন তারপরে কিনতে বলুন।
- পোস্টে সরাসরি লিংক ব্যবহার করবেন না। কমেন্টে লিংক ব্যবহার করবেন।
- সব সময় সেল পোস্ট করবেন না। মানুষের যাতে উপকারী আসে এমন কিছু ইনফরমেটিভ পোস্টও করবেন। যাতে তারা বুঝতে না পারে যে আপনি তাদের কাছে পণ্য বিক্রয় করার জন্য এসেছে।
- যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় লিংক শেয়ার করবেন প্রত্যেক মিডিয়ার জন্য লিংক ট্রেকারের মাধ্যমে আলাদা আলাদা লিংক তৈরি করে সেগুলোকে ট্রেক করে দেখবেন কোন মিডিয়া থেকে বেশি রেসপন্স পাচ্ছেন।
স্টেপ ৬:- এবার আপনি যাবেন পেইড মার্কেটিংয়ে। আপনাকে প্রথমেই এনালাইসিস করে নিতে হবে কোন পণ্য কোন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালো চলবে। তার জন্য অল্প বাজেটে সব সোশ্যাল মিডিয়ায় সব প্রোডাক্টের এড রান করবেন।
তারপরে রিপোর্ট দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যেমন:- ইনস্টাগ্রামে একটি পণ্য অনেক রেসপন্স পাচ্ছে কিন্তু সেটি ফেসবুকে পাচ্ছে না তাহলে সেই পণ্যটি আপনি ইনস্টাগ্রামেই বেশি মার্কেটিং করুন। আর যেটি ফেসবুকে ভালো রেসপন্স পাবে সেটি ফেসবুকে প্রমোট করুন। যদিও মার্কেটিংয়ের আরো অনেক অনেক ব্যাপার আছে সেগুলোর বিষয়ে ধারণা নিয়ে তবেই কাজ করতে হবে।
স্টেপ ৭:- প্রথম দিকে চেষ্টা করবেন মুনাফা কম রেখে পণ্যের দাম কম দিতে। এতে করে আপনার কাস্টমার আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে। আর আপনি কাস্টমারদের তাদের রিভিউ শেয়ার করতে বলবেন ওয়েবসাইটে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায়। আপনার প্রতি যখন সবার একটি বিশ্বাস তৈরী হবে তখন আপনি ভালো সাপোর্ট পাবেন। আবার নিয়মিত কাস্টমারদের সাথে এনগেজড থাকার চেষ্টা করবেন। কাস্টমারদের প্রতিটি মতামতকে প্রাধান্য দিবেন হোক ভালো কিংবা খারাপ মতামত।
ড্রপশিপিংয়ের মাধ্যমে কেমন আয় করা সম্ভব?
অন্যান্য সকল ব্যবসার মতো মুনাফা এবং সাফল্যের মাত্রা নির্ভর করে কিছু বিষয়ের উপর- পণ্য নির্বাচনের প্রতি ব্যবসায়ীর সুক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ এক্ষেত্রে সবচেয়ে লক্ষ্যণীয়। কিন্তু একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে কঠিন পরিশ্রম ও সঠিক কাজ দ্বারা প্রায় দশগুণ আয়ের উপযোগী একটি ড্রপশিপিং ব্যবসা গড়ে তোলা সম্ভব।
নিজে ই-কমার্স সাইট তৈরি করে একটি দীর্ঘমেয়াদী সফল ও মুনাফা অর্জনকারী ড্রপশিপিং ব্যবসা চালানো সম্ভব। কি পরিমান আয় করতে পারবেন এটি মূলত আপনার উপর নির্ভর করছে। আপনি যে পরিমান খরচ করবেন সেই অনুপাতেই রিটার্ন পাবেন। ড্রপ শিপিং মোটেও কোন ম্যাজিক ফর্মূলা নয় – উল্লেখযোগ্য কাজ এবং সময়ের মাধমে মূল সাফলতা পাওয়া সম্ভব। তবে এটি একটি টেকসই এবং ঝুঁকিহীন অনলাইন ব্যবসা।
কিছু কথা
আপনি যদি ড্রপশিপিং করতে চান। তাহলে আপনার দুটি জায়গায় অনেক বড় বাঁধা আসবে। প্রথমটি হলো পেমেন্ট মেথড। যদিও বর্তমানে চিপচিপ নামক একটি কোম্পানি এই পেমেন্ট মেথডের সলিউশন নিয়ে এসেছে। আপনি তাদের ওয়েবসাইটে একটি একাউন্ট করে তাদের সাইটেই প্রোডাক্ট সেল করবেন। যা সেল হবে তার থেকে একটি % কেটে বাকীটা আপনার ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে দিবে। আপনি চাইলে এ ব্যাপারে আরো রিসার্চ করে বিস্তারিত জানতে পারেন।
আরেকটি সমস্যায় আপনি পড়বেন তা হলো যখন আপনি মার্কেটিং করতে যাবেন তখন আপনার ডুয়েল কারেন্সি সাপোর্ট কার্ড লাগবে। যেটি পাওয়া কিছুটা কষ্টকর। সব বাঁধার শেষে যদি আপনি ড্রপশিপিং শুরু করুন। তাহলেও আপনাকে প্রচুর হতাশ হতে হবে। যদি আপনি প্রোপার মার্কেটিং না জানেন। এই ড্রপশিপিং করে আপনি কোটি টাকা আয় করতে পারবেন এটি অনেক বড় ইন্ডাস্ট্রি। এখানে টিকে থাকতে হলে আপনাকে প্রচুর স্কিল হতে হবে।
আমার ব্যাক্তিগত উপদেশ থাকবে আপনাদের প্রতি বিগিনাররা এটি না করাই ভালো। প্রথমে মার্কেটিং শিখুন তারপরে ক্লায়েন্টের কাজ করুন এক্সপেরিয়েন্স গেদার করুন তারপরেই এই ড্রপশিপিংয়ে আসুন। তা না হলে এখানে বিশাল অংকের ইনভেস্টমেন্ট হারানোর ভয় থাকে।
শেষ কথা:-
এই পুরো পোস্টে আপনাদের ড্রপশিপিং বিজনেস নিয়ে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।আশাকরি আপনারা বুঝাতে পেরেছেন। ভালো থাকবেন আমাদের সাথেই থাকবেন।ধন্যবাদ।
জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url