নতুন ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বাড়ানোর উপায়
মনে করুন, আপনি একটি ওয়েবসাইট অথবা ব্লগ তৈরি করেছেন। কিন্তু আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর নেই। এটি নিঃসন্দেহে আপনার জন্য হতাশাজনক। যে কেউ চাইবে তার তৈরি করা ওয়েবসাইটে ভিজিটর আসুক।
ভিজিটর তো অনেকভাবেই আনা যায়। এর মধ্যে অরগানিক ভিজিটরকেই বেশি মূল্যবান বলে মনে করা হয়। এই ভিজিটরদের তাহলে সাইটে কীভাবে আনা যায়? সেই বিষয়টি নিয়েই আজকে আলোচনা করব।
ওয়েবসাইট বা ব্লগে ভিজিটর বাড়ানোর উপায়
ওয়েবসাইট বা ব্লগ থেকে টাকা উপার্জনের প্রধান শর্ত হলো ভিজিটর। আপনি যদি ওয়েবসাইট বা ব্লগ থেকে আয়ের চিন্তা করেন। তাহলে আপনার ওয়েবসাইটে বা ব্লগে প্রচুর পরিমাণে অরগানিক ট্রাফিক থাকতে হবে।
যেকোনো ওয়েবসাইটে বা ব্লগে ভিজিটর বা ট্রাফিক থাকা ভীষণ জরুরি। ভিজিটরকে একটি ওয়েবসাইটের প্রাণ বললেও অত্যুক্তি হবে না। তাই ওয়েবসাইট বা ব্লগ চালানোর ক্ষেত্রে প্রথম কাজ হচ্ছে ওয়েবসাইটে ভিজিটর আনা।
আরো পড়ুন:গুগল ট্রাফিক যেভাবে কাজ করে বিস্তারিত জানুন
একটা ওয়েবসাইট বা ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি করে বা অন্য কোনো কনটেন্ট আপ করে, তা থেকে টাকা উপার্জনের জন্য আপনাকে অবশ্যই সাইটে ভিজিটর আনতে হবে। এ জন্য কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, কোনো সাইটে বা ব্লগে ভিজিটর আনা সহজ না।
আপনার সাইটে ভিজিটর আসতে শুরু করলে ওয়েবসাইটে থাকা পোস্টগুলো এমনিতেই গুগলের প্রথম পাতায় আসতে শুরু করবে। গুগলের প্রথম পাতায় ওয়েবসাইটের কোনো কনটেন্ট চলে এলে অরগানিক ভিজিটর পাওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়। আর কোনো কনটেন্টে ভিজিটর সংখ্যা বাড়লে তা ওয়েবসাইটের ভিজিটর সংখ্যাও বাড়াবে। এ সংখ্যা যত বাড়বে, ততই আপনার ওয়েবসাইট এগিয়ে যাবে। এ জন্য কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে সবার আগে আপনাক জানতে হবে ওয়েবসাইট বা ব্লগ ভিজিটর কী?
ওয়েবসাইট বা ব্লগ ভিজিটর কী?
ওয়েবসাইটে কীভাবে ট্রাফিক বা ভিজিটর আসবে? সে বিষয়ে জানার আসুন আগে জেনে নিই ভিজিটর বলতে আসলে কী বোঝায়? মূলত ওয়েবসাইটে ভিজিটর বলতে বোঝায় সে সাইটের ব্যবহারকারীদের। কোনো নিউজ পোর্টাল বা ফিচার ব্লগের ক্ষেত্রে এই ব্যবহারকারীরা হলো পাঠক। আবার কোনো গেমিং সাইটের জন্য এই ব্যবহারকারীর পরিচয় হলো গেমার।
প্রতিদিন আপনার ওয়েবসাইটে যত পাঠক বা ব্যবহারকারী আসে, তারাই হচ্ছে আপনার সাইটের ভিজিটর। আর এই ভিজিটররা আসে Google Search, social media বা অন্য কোনো প্ল্যাটফর্ম থেকে।
আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে অরগানিক ভিজিটর। অরগানিক ভিজিটর বলতে বোঝায় Search Engine (Google, Bing, Yahoo, Yandex ইত্যাদি)-এর মাধ্যমে যে ভিজিটর বা পাঠকেরা আপনার সাইটে ভিজিট করে তারা। ভিজিটর বা অরগানিক ট্রাফিক থাকলে আপনি অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে টাকা উপার্জনের করে পারবেন। তাই এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অরগানিক ট্রাফিক বাড়ানোর কিছু কার্যকর পদ্ধতি
ওয়েবসাইটে আশানুরূপ ফল পেতে ব্লগ বা ওয়েবসাইটে ভিজিটরের কোনো বিকল্প নেই। আসুন জেনে নিই কিছু সেরা পথ কার্যকরী মাধ্যম, যার মাধ্যমে আপনি চাইলে আপনার সাইটের ভিজিটর খুব সহজেই বাড়াতে পারবেন।
১. এসইও (SEO) করা
আপনি যদি আপনার সাইটের ভিজিটর বাড়াতে চান। তাহলে প্রথম একটি বিষয় হচ্ছে এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন)। সাধারণত আমরা কোনো বিষয় বা তথ্য জানার জন্য একটি নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড লিখে সার্চ করি। তখন আমরা একটি রেজাল্ট পাই, যা গুগল আমাদের সামনে তুলে ধরে। গুগল সার্চে কিন্তু অনেকগুলো ফলাফল আসে। অনেকগুলো পাতায় এই ফলগুলো সাজানো থাকতে পারে।
কিন্তু সাধারণত আমরা প্রথম দিকের সাজেশনগুলোই ফলো করি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গুগল সার্চের প্রথম পাতায় আসা রেজাল্টগুলো থেকেই আমরা আমাদের পছন্দের সাইটকে খুঁজে নিই। প্রথম পাতায় কোন ওয়েবসাইটের কনটেন্ট দেখাবে, আর কোনটি দেখাবে না, তা নির্ভর করে এসইওর ওপর। যে ওয়েবসাইটের SEO যত ভালো, সে ওয়েবসাইট গুগল সার্চে তত এগিয়ে থাকবে।
গুগল সার্চের পদ্ধতির কথা মাথায় রেখে কনটেন্ট তৈরি, সেখানে প্রয়োজনীয় কি-ওয়ার্ড দেওয়া এবং এমন নানা কাজের মাধ্যমে এসইও করা হয়। প্রথম পাতায় কোনো একটি ওয়েবসাইটের কনটেন্ট দেখানোর কারণ হচ্ছে, প্রথমে দেখানো ওয়েবসাইটগুলোকে সঠিকভাবে এসইও করা হয়েছে। এসইও ঠিকমতো করা হলে সেই সাইট র্যাঙ্কিং পেয়ে প্রথম দিকে থাকবে।
সঠিকভাবে এসইও করা হলে কেউ কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে গুগলে সার্চ করলে, সে বিষয়ের ওপর তৈরি ওয়েবসাইট কনটেন্ট বা সাইটটিকে গুগল সামনের দিকে দেখাবে। আর এর মাধ্যমেই ওই সাইটে প্রতিদিন অনেক অরগানিক ভিজিটর আসা শুরু করবে। তাই ভিজিটর বাড়াতে SEO একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
২. সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ার
বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া হচ্ছে খুবই জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম। আপনি চাইলে আপনার ব্লক বা ওয়েবসাইটকে সঠিকভাবে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া যেমন:ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, পিন্টারেস্ট ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে মার্কেটিং করে প্রচুর ভিজিটর পেতে পারেন।
আবার আপনি চাইলে আপনার সাইটের নাম দিয়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট বা পেজ তৈরি করে সেখানে প্রতিদিন কনটেন্ট শেয়ার করতে পারেন। সেই পেজকে যত সামনে এগিয়ে নেওয়া যাবে, অর্থাৎ এর সঙ্গে যত সোশ্যাল মিডিয়া আইডিকে যুক্ত করা যাবে, ততই প্রতিটি কনটেন্টে ভিজিটর বাড়তে থাকবে।
৩. গেস্ট পোস্টিং করা
কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে আপনাকে কনটেন্ট শেয়ার করতে, পোস্ট করতে, কনটেন্ট থেকে লিংক নিতে দেবে। সেই সাইটগুলো খুঁজে নিয়ে আপনি চাইলে আপনার সাইটের জন্য গেস্ট পোস্টিং করে প্রচুর অরগানিক ট্রাফিক বা ভিজিটর পেতে পারেন।
এই সব সাইটগুলোতে আপনি খুব সহজেই কয়েকটি কনটেন্ট পাবলিশ করতে পারবেন। সেখানে দেওয়া কনটেন্টগুলোতে কিছু সেরা কিওয়ার্ড যুক্ত করুন। ওই কিওয়ার্ডগুলোর সঙ্গে আপনার সাইটের কিছু কনটেন্টকে যুক্ত করুন। সেগুলোকে ইন্টারনাল লিংক করুন। এই প্রতিটি পদক্ষেপ আপনাকে অরগানিক ভিজিটর বা ট্রাফিক পেতে সহায়তা করবে।
ইন্টারনাল লিংক করার ফলে পাঠকেরা আপনার পোস্টটি পড়ার সময় আপনার অ্যাঙ্কর টেক্সটে ক্লিক করে আপনার সাইটে চলে আসবে অন্য আর্টিকেল দেখার আগ্রহ থেকে। এভাবে আপনি গেস্ট পোস্টিং করে নিজের সাইটে প্রচুর ট্রাফিক আনতে পারবেন।
৪. ব্লগ কমেন্টিং
কিছু কিছু সাইট রয়েছে, যেখানে আপনি চাইলে কমেন্ট সেকশনে গিয়ে নিজের ওয়েবসাইট শেয়ার করতে পারবেন। এটাকে ব্লগ কমেন্টিং বলা হয়। আপনি চাইলে সুন্দর করে কমেন্ট করে আপনার সাইটের লিংক দিয়ে নিজের ওয়েবসাইটে ট্রাফিক আনতে পারবেন খুব সহজেই।
৫. ফোরাম পোস্টিং/প্রশ্ন-উত্তর সাইট
কিছু সাইট রয়েছে যেখানে ফোরামের সুবিধা রয়েছে। এসব সাইডে অনেক ভিজিটর রয়েছে। যারা তাদের অজানা বিষয়ে প্রশ্ন করে এসব সাইটে গিয়ে। ফোরাম ধাঁচের হওয়ায় এসব প্রশ্নের উত্তর অন্য ব্যবহারকারীদের কেউ না কেউ দেয়।
এ ক্ষেত্রে আপনি যেটি করতে পারেন, সেটা হচ্ছে—আপনার কনটেন্ট রিলেটেড প্রশ্নগুলো খুঁজে বের করুন। সে ধরনের প্রশ্নের উত্তরে ঘরে গিয়ে উত্তরে সঙ্গে সঙ্গে নিজের সাইটে প্রকাশিত কনটেন্টটির লিংক জুড়ে দিন। ওই সাইটের ব্যবহারকারী তখন সম্পূর্ণ উত্তরটি পেতে আপনার লিংকে প্রবেশ করবে এবং এর মাধ্যমে আপনার সাইটে ট্রাফিক বাড়বে।
৬. ভিডিও মার্কেটিং
ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইউটিউব, ভিমিও-এর মতো ভিডিও শেয়ারিং সাইটগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিডিও শেয়ার করে অরগানিক ট্রাফিক বা ভিজিটর পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই ভিডিও শেয়ার করে ডেসক্রিপশনে আপনার সাইটটির লিংক দিয়ে দিতে হবে। অনেকেই ডেসক্রিপশনে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে সাইট ভিজিট করে।
৭. ই-মেইল মার্কেটিং
বর্তমান সময়ে ই-মেইল মার্কেটিং আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। আপনার সাইটে ভিজিটর পাওয়ার ক্ষেত্রে ই-মেইল মার্কেটিং খুবই সহায়ক হতে পারে।
বর্তমানে অনেক মানুষ আছে, যারা বিভিন্ন তথ্য পেতে ই-মেইল চেক করে। এ ধরনের মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনি সম্ভাব্য ব্যবহারকারীদের নিজের সাইটে প্রকাশিত কনটেন্টের লিংকসহ ই-মেইল করতে পারেন। এ ধরনের সেবাদাতা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে দেশে ও বিদেশে। বৈশ্বিকভাবে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বেশ বিশ্বস্ততার সঙ্গে এ সেবা দিয়ে আসছে। একটু Google Search করলেই এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। ই-মেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমেও বেশ ভালো সংখ্যক অরগানিক ভিজিটর পেতে পারবেন।
পরিশেষে বলা যায় যে,উপরের উল্লিখিত সাতটি পদ্ধতি ব্যবহার করলে ওয়েবসাইটের ভিজিটর উল্লেখ যোগ্যভাবে বাড়বে আশা করা যায়। তবে প্রতিটি বিষয়ের ফল নির্ভর করে দক্ষতার ওপর। এই প্রতিটি ক্ষেত্রে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করলে ভিজিটর আসবে। দক্ষতা যত বাড়বে পদ্ধতিগুলোর কার্যকারিতা তত বাড়বে।
যেমন ই-মেইল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে কোন কনটেন্টের লিংক ই-মেইলে পাঠাবেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় কীভাবে, কত সময় পরপর কী কনটেন্ট শেয়ার করবেন বা এসইও করার সময় কোন কোন বিষয়ের দিকে নজর দেবেন, কি-ওয়ার্ড সিলেকশন কেমন হবে, ইত্যাদি বিষয়ের ওপর এই প্রতিটি পদ্ধতির কার্যকারিতা নির্ভর করে। কে না জানে, পদ্ধতিগুলো যত কার্যকর হবে তত ভিজিটর আসবে। আর ভিজিটর সংখ্যা বাড়লে ওয়েবসাইট থেকে আয়ের সম্ভাবনাও বাড়বে।
জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url