ব্লগ তৈরি করে ইনকাম-ব্লগ থেকে কিভাবে আয় করা যায়?
ব্লগিং করে অথবা ব্লগে আর্টিকেল শেয়ার করে অনলাইন থেকে আয় করার চিন্তা করে থাকেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। অনেক ব্লগার আছেন যারা ব্লগিং করে বা আর্টিকেল শেয়ার করে অনলাইল থেকে অনেক টাকা আয় করছেন। আপনার যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে সামান্য সময় ব্যয় করে খুব বেশি না হলেও মাসে অল্প কিছু টাকা আয় করতে পারবেন।
তবে আপনি যদি বেশি পরিমানে টাকা আয় করতে চান, সে ক্ষেত্রে ব্লগিংকে প্রফেশন হিসেবে না নিলেও পার্ট টাইমের ফাঁকে ব্লগিং এর পেছনে অনেক সময় ব্যয় করতে হবে। কারণ ব্লগিং এর পিছনে সময় এবং শ্রম না দিলে ভালোমানের ইনকাম করতে পারবেন না। কেউ যদি আপনাকে অনলাইন হতে সহজে টাকা আয়ের লোভনীয় কোন কৌশল দেখায় তাহলে সেটা হবে অনর্থক।
আরো পড়ুন:হোস্টিং কি? হোস্টিং কত প্রকার ও কি কি?
যত ধরনের ব্লগার আছে তারা সবাই ব্লগ হতে কিছু টাকা আয় করতে চায়। আমি চাই ব্লগিং করে আয় করতে। কারণ একটি ব্লগ যখন ভাল প্লটফর্মে চলে আসে, তখন কিভাবে ব্লগ থেকে কিছু টাকা ইনকাম করা যায় সেই বিষয়টি একজন ব্লগ এ্যাডমিন এর মাথায় অটোমেটিক্যালি চলে আসে। কিন্তু তখনই আমাদের মাথায় কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে।
- সত্যিই কি ব্লগিং করে টাকা ইনকাম করা সম্ভব?
- ব্লগিং করে অনলাইন হতে আয় করা কি সবার পক্ষে সম্ভব, না কি অল্প কিছু লোক করতে পারে?
- শুধু মাত্র ব্লগে আর্টিকেল লিখে কি অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করা সম্ভব?
- ব্লগিং করে আমি মাসে কত টাকা ইনকাম করতে পারব?
- ব্লগিং করে প্রতিমাসে করতে পারব কি না? নাকি দু-এক মাস পরে বন্ধ হয়ে যাবে?
উপরের প্রশ্নগুলো প্রায় সব নতুন ব্লগারদের মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। যার ফলে এই সহজ প্রশ্নগুলোর কোন উত্তর না পেয়ে অনেকে ব্লগিং ছেড়ে দেন। আর অধিকাংশ লোক ভাবেন যে, ব্লগিং করে টাকা আয় করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়, এটি অল্প কিছু সংখ্যক লোক করতে পারে। কিন্তু আমি বলছি এটা সবার পক্ষে সম্ভব। যদি আপনি এর পেছনে লেগে থাকেন। তার জন্য প্রয়োজন শুধু আপনার মেধা, সময় এবং শ্রম। এই তিনটি জিনিস ব্যবহার করে আপনি শুধুমাত্র ব্লগে আর্টিকেল শেয়ার বা লেখালেখি করে সহজে অনলাইন হতে ভালোমানের (Smart Amount) টাকা আয় করতে পারবেন।
ব্লগ কি?
ব্লগ শব্দটি ইংরেজি Blog এর বাংলা প্রতিশব্দ, যা এক ধরণের অনলাইন ব্যক্তিগত দিনলিপি বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক পত্রিকা। ইংরেজি Blog শব্দটি Weblog এর সংক্ষিপ্ত রূপ। যিনি ব্লগে পোস্ট করেন বা লেখালেখি করেন তাকে ব্লগার বলা হয়। একজন ব্লগার নিয়মিত তার ব্লগে কনটেন্ট শেয়ার করেন এবং ব্যবহারকারীরা (ভিজিটর) সেখানে তাদের মন্তব্য ও মতামত প্রদান করতে পারেন। সহজ ভাষায় ব্লগ তৈরি করে ব্লগে লেখালেখি করাকে ব্লগিং বলে এবং যারা সেই ব্লগে লেখেন তাদেরকে ব্লগার বলা হয়। (সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)
একটি ব্লগে যখন প্রচুর পরিমানে পোস্ট বা লেখা থাকে এবং সেই ব্লগ যখন ভিজিটররা পড়তে শুরু করে তখন ব্লগের মালিক ব্লগ থেকে বিভিন্ন উপায়ে টাকা আয় করতে পারেন। কাজেই আপনি বুঝতে পারছেন যে, ব্লগিং করে অনলাইন থেকে আয় করার জন্য প্রথমত আপনার একটি ব্লগ থাকতে হবে। তারপর সেই ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি করার অভ্যাস করতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে যখন ব্লগ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে তখন আপনি ব্লগ থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
কিভাবে ফ্রি ব্লগ তৈরি করবেন?
আপনি চাইলে একদম ফ্রিতে একটি ব্লগ তৈরি করে নিতে পারবেন। আপনি চাইলে গুগল ব্লগার দিয়ে খুব সহজে নিজের নামে একটি ব্লগ সম্পূর্ণ ফ্রিতে তৈরি করে নিতে পারবেন এবং সেই ব্লগে লেখালেখি করে
অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
তবে আপনি যদি চান, আপনি ফ্রিতে ব্লগ তৈরি না করে টাকা দিয়ে তৈরি করবেন, সে ক্ষেত্রে আপনি Wordpress দিয়ে ব্লগ তৈরি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ডোমেন ও হোস্টিং কেনার জন্য ৪-৫ হাজার টাকা খরছ করতে হবে এবং ব্লগ চালু রাখার জন্য প্রতি বছর ৫-৬ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। তবে আপনি গুগল ব্লগার দিয়ে সম্পূর্ণ ফ্রিতে ব্লগিং করবেন নাকি ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ব্লগিং করবেন, সেটি আপনার একান্ত নিজের ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে।
ব্লগ তৈরি করে আয়
মনে করুন আপনি এলরেডি একটি ব্লগ তৈরি করে নিয়েছেন। এখন ব্লগ তৈরি করে নিলেই সেই ব্লগ থেকে টাকা আয় করা শুরু করতে পারবেন না। কারণ আপনাকে এমন কিছু করতে হবে, যাতে লোকজন আপনার ব্লগ পড়তে আসে বা ব্লগ পড়তে পছন্দ করে। আপনার ব্লগের আয় তখন শুরু হবে যখন আপনার ব্লগের প্রচুর পরিমানে ভিজিটর থাকবে। ভিজিটর পাওয়ার পর ব্লগ থেকে কিভাবে আয় করা যায়, সেটি নিয়ে আমরা পোস্টের নিচের অংশে আলোচনা করব।
ব্লগ তৈরি করার পর ব্লগ থেকে কিভাবে আয় করবেন সেটি নিয়ে চিন্তা না করে আপনার ব্লগে ভিজিটর কিভাবে বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। কারণ ব্লগে ভিজিটর বৃদ্ধি পাওয়ার পর আপনি ব্লগ থেকে বিভিন্ন উপায়ে ইনকাম করতে পারবেন। কাজেই ব্লগ তৈরি করার পর ব্লগে ভিজিটর বৃদ্ধি করার বিভিন্ন টেকনিক বের করা হবে আপনার প্রধান কাজ।
যেহেতু ব্লগে মূলত লেখালেখি করে ব্লগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে হয় সেহেতু আপনাকে প্রথমে ঠিক করে নিতে হবে আপনি ব্লগে কোন বিষয়ে ভালোকরে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখতে পারবেন। আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপ না থাকলেও লেখালিখির কাজটি মোবাইল দিয়ে করতে পারবেন। আপনি মানুষ হিসেবে অবশ্যই কোন না কোন বিষয়ে অভীজ্ঞতা সম্পন্ন হবেন। কাজেই আপনি যে বিষয়ে ভালো জানেন সেই বিষয় নিয়ে ব্লগে লেখা পাবলিশ করতে পারেন।
আপনার আর্টিকেল যখন ইউনিক হবে তখন আপনার সাইটের ভিজিটর নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। সেই সাথে ভিজিটর বৃদ্ধি করার জন্য আপনি আরো কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। আপনি অবশই আপনার টপিক রিলেটেড কিছু সাইট ইন্টারনেটে পাবেন, আপনি তাদের কার্যক্রম ফলো করতে পারেন। অর্থাৎ তারা কি করে, কি ধরনের পোষ্ট করে এবং কিভাবে ব্লগিং করছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই বলে তাদের সাইট থেকে কোন কনটেন্ট কপি করে নিতে পারবেন না। সবসময় আপনি প্লান-পরিকল্পনা মাফিক নিয়মিতভাবে ব্লগিং চালিয়ে যাবেন। তাহলে সফলতা পেতে আপনাকে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।
ব্লগ থেকে ইনকাম করার জন্য কী কী বিষয়ে ব্লগে লিখবেন?
আপনাদের আগেই বলেছি ব্লগ থেকে ইনকাম করার জন্য প্রথম অবস্থায় ব্লগকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য ব্লগে এমন বিষয় নিয়ে লিখতে হবে, যে বিষয়ে আপনি পরিপূর্ণ অভীজ্ঞা রাখেন। কারণ কোন বিষয়ে ভালোভাবে না জেনে লিখলে সেই লেখা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে না। আপনি যদি ইন্টারনেট বিশ্বের বিভিন্ন টেকনোলজি নিয়ে লিখতে পারেন, তাহলে আপনার ব্লগ অল্পদিনে সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠবে। তাছাড়া আপনি যদি এই সব বিষয় নাও জেনে থাকেন কিংবা আপনি সাহিত্যমনা হয়ে থাকেন, তাহলে নিচের টপিকগুলো নিয়ে লিখতে পারেন।
➽যেকোন ধরনের আর্টিকেল।
➽ছোট গল্প, প্রবন্ধ ও ছড়া ইত্যাদি।
➽কবিতা।
➽সমসাময়িক যেকোন বিষয়।
➽নিউজ ইত্যাদি।
কোন বিষয়ে ব্লগিং করলে বেশি আয় করা যায়?
➽টেকনোলজি (টেক)।
➽প্রোডাক্ট রিভিউ।
➽ফ্যাশন এন্ড বিউটি।
➽লাইফস্টাইল।
➽অনলাইন আর্নিং।
ব্লগ থেকে আয় করার জন্য ভিজিটর বৃদ্ধির উপায়
নতুন অবস্থায় আপনার ব্লগটি কেউ চিনবে না ও জানবে না। নতুন ব্লগের ক্ষেত্রে ব্লগ না চেনাটা স্বাভাবিক। প্রথম অবস্থায় গুগল থেকে কেউ আপনার ব্লগে আসবে না। কারণ নতুন ব্লগ সম্পর্কে গুগল কোন তথ্য জানে না। সে জন্য আপনার ব্লগের প্রচারনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনার ব্লগের প্রচারের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আপনার ব্লগের প্রত্যেকটা নতুন পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক ও টুইটারে শেয়ার করবেন। তাহলে ফেসবুক থেকে আস্তে আস্তে ভিজিটর আপনার ব্লগটি পড়তে শুরু করবে। যখন আপনার ব্লগে ভালোকিছু থাকবে, তখন লোকজন আপনার ব্লগ পছন্দ করার কারনে বার বার ভিজিট করবে।
এছাড়াও সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর মাধ্যমে ব্লগের প্রচারণা বৃদ্ধি করতে পারেন। বিভিন্ন ফোরাম এবং ওয়েবসাইটে আপনার ব্লগ এবং ব্লগের আর্টিকেল এর পোস্ট শেয়ার করে প্রচারণা করতে পারেন। তবে নতুন অবস্থায় এ সব না করে শুধুমাত্র ফেসবুকে শেয়ার করার মাধ্যমে প্রচারনা করলে হবে।
লেখালেখি করে আয়
আপনারা অধিকাংশ লোক লেখালেখি করে অনলাইন থেকে ইনকামের উপায় খুজে থাকেন। মূলত লেখালেখি করে অনলাইন থেকে ইনকামের প্রধান উপায় হচ্ছে ব্লগিং। বিশ্বের যত সফল ব্লগার আছে, তারা সবাই ব্লগে লেখালেখি করে অনলাইন থেকে টাকা আয় করছে। কাজেই আপনি একটি ব্লগ তৈরি করে যে বিষয়ে ভালো জানেন সেই বিষয়ে লেখালেখি করে ব্লগিং এর মাধ্যমে অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করে নিতে পারেন।
ব্লগিং করে কত টাকা আয় করা যায়?
ব্লগিং করে মাসে কত টাকা আয় করতে পারবেন, সেটা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে না। কারণ আপনার ব্লগ থেকে কি পরিমানে আয় হবে সেটা পুরোপুরি আপনার কাজের ধরনের উপর নির্ভর করবে। কাজের ধরণ ছাড়াও আপনি ব্লগে কতটুকো সময় দিচ্ছেন, কিভাবে পোস্ট লিখছেন, কি কি বিষয়ে নিয়ে ব্লগিং করছেন, আপনার ব্লগের কাজের ডিমান্ড অনলাইনে কি পরিমানে রয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ে উপর একজন ব্লগারের ইনকামের পরিমান নির্ভর করে। নিচের বিষয়গুলোর উপর আপনার ব্লগের আয়ের পরিমান নির্ভর করবে।
- কোন ধরনের নিশ নিয়ে কাজ করছেন?
- ব্লগ লিখতে এবং ব্লগিং শিখতে কতটুকো শ্রম ও সময় দিচ্ছেন?
- ব্লগে কি পরিমান ভিজিটর গ্রো করছেন?
- কোন ধরনের ডিজিটাল মার্কেটিং টেকনিক ব্লগে এপ্লাই করছেন?
- আপনি ব্লগ লিখতে কতটুকো মেধাবি?
এ বিষয়টি আমি সংক্ষেপে আপনাকে বুঝাতে পারব না। সে জন্য কয়েকটি জনপ্রিয় ইংরেজি ও বাংলা ব্লগের মাসিক আয়ের পরিমান আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। সেই ব্লগের আয়ের পরিমান থেকে ব্লগের আয়ের বিষয়টি সম্পর্কে আপনি মোটামুটি ক্লিয়ার হয়ে যাবেন।
ভারতের কয়েকটি ব্লগের আয়ের পরিমানঃ
- অমিত আগারওয়াল - labnol.org - $60,000
- হর্ষ আগারওয়াল - shoutmeloud.com - $52,434
- ফয়সাল ফারুকী - mouthshut.com - $50,000
- শ্রদ্ধা শর্মা - yourstory.com - $30,000
- বরুণ কৃষ্ণন - FoneArena.com - $22,000
- শ্রীনিবাস তমদা - 9lessons.info - $20,000
- আশীষ সিনহা - nextbigwhat.com - $18,000
- অরুণ প্রভুদসাই - trak.in - $15,000
- জাসপাল সিং - savedelete.com - $8,000
- অমিত ভাওয়ানি - amitbhawani.com - $14,115
বাংলাদেশি কয়েকটি ব্লগের আয়ের পরিমানঃ
- টেকটিউনস - www.techtunes.com.bd
- সামহওয়ারইন ব্লগ - www.somewhereinblog.net
- টিউনার পেজ - www.tunerpage.com
- আমার ব্লগ - www.amarblog.com
- প্রথম আলো ব্লগ - www.prothom-aloblog.com
- বাংলাদেশি ব্লগগুলোর আয়ের পরিমান আমি সঠিকভাবে বলতে পারব না। তবে আমার মনে হয় প্রত্যেকটি ব্লগ মিনিমাম ৫,০০০ ডলারের বেশি ইনকাম করে।
ব্লগ থেকে কিভাবে আয় করা যায়?
একটি ভালোমানের ব্লগ থেকে বিভিন্ন উপায়ে ইনকাম করা যায়। আপনার ব্লগ দিয়ে কোন কোন উৎস থেকে টাকা আয় করতে পারবেন, সেটা আপনার ব্লগিং এর ধরনের উপর নির্ভর করে। সাধারণত টেক বিষয়ের ব্লগ হতে আয়ের সোর্স বেশি হয়ে থাকে। আপনার একটি মোটামোটি মানসম্পন্ন ব্লগ থাকলে নিচের উৎস গুলো থেকে ব্লগিং এর মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারবেন।
- এ্যাড নেটওয়ার্ক (AdSense and Media.net)।
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
- বিজ্ঞাপন স্পেস বিক্রয় করে।
- স্পনসরড পোস্ট।
- পেইড রিভিউ।
- ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রয়।
- সার্ভিস বিক্রয়।
- পেইড মেম্বারশীপ।
একজন ব্লগার উপরের সোর্সগুলো থেকে ব্লগিং করে অনলাইন হতে টাকা আয় করতে পারে। ব্লগিং শুরুর দিকে সবগুলো উপায়ে আয় করা না গেলেও ব্লগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে উপরের সকল সোর্স হতে একজন ব্লগার প্রতি মাসে টাকা আয় করতে পারেন।
১. গুগল এডসেন্স থেকে ইনকাম (বিজ্ঞাপন)
গুগল এডসেন্স হচ্ছে ইন্টারনেট ভিত্তিক একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা যেটি গুগল নিজে পরিচালনা করছে। গুগল বিভিন্ন বিজ্ঞাপনি কোম্পানির কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে বিজ্ঞাপন নিয়ে তাদের নেটওয়ার্কের আওতাধীন যত ওয়েবসাইট আছে সেগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে আয় করে। Google AdSense বিজ্ঞাপন থেকে যত টাকা আয় করে তার ৬৮ ভাগ টাকা পাবলিশারদের দিয়ে থাকে এবং বাকী ৩২ ভাগ টাকা নিজেরা ভোগ করে।
গুগল এডসেন্সের বিজ্ঞাপন ব্লগে ব্যবহার করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি এডসেন্স একাউন্ট খুলতে হবে। এডসেন্স একাউন্ট খোলার মাধ্যমে আপনার ব্লগে এডসেন্স বিজ্ঞাপন ব্যবহার করার জন্য আবেদন করতে হবে। গুগল এডসেন্সের জন্য আবেদন করার পর গুগল আপনার ব্লগটি ৫/৭ দিনের মধ্যে রিভিউ করবে। রিভিউ করে আপনার ব্লগকে উপযুক্ত মনে করলে এডসেন্স আপনার ব্লগকে অনুমোদন দেবে। এডসেন্স অনুমোদন হলে আপনার ব্লগে এডসেন্সের বিজ্ঞাপন শো করে ব্লগ থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
গুগল এডসেন্স ছাড়াও বিশ্বে আরো অনেক এডভার্টাইজ কোম্পানি আছে। আপনি তাদের এড আপনার ব্লগে দেখিয়ে ব্লগ থেকে টাকা আয় করতে পারবেন। এরকম কিছু সাইটের লিস্ট নিচে দেওয়া হলো।
- মিডিয়া নেট
- গ্রীণ রেড
- ক্লিকসোর
- এডব্রাইট
- বিডভার্টাইজার
- ইনফোলিংকস
২. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক পন্য ক্রয় ও বিক্রয়। অনলাইনে পন্য ক্রয় ও বিক্রয় সংক্রান্ত কোম্পানি বা প্রতিষ্টানের বিভিন্ন প্রোডাক্ট অনলাইনের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌছে দিয়ে কিংবা বিক্রয় করে বিক্রয়কৃত প্রোডাক্ট হতে শতকরা হারে কমিশন লাভ করাই হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। অর্থাৎ কোম্পানি আপনাকে বিভিন্ন প্রোডাক্ট দেবে এবং আপনি সেই প্রোডাক্টগুলোর লিংক শেয়ারের মাধ্যমে কাস্টমারদের কাছে বিক্রয় করবেন। সবশেষে কোম্পানি আপনার বিক্রয়কৃত প্রোডাক্ট হতে মোট দামের উপর ১০% - ১৫% কমিশন আপনাকে দেবে।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, আমি কিভাবে বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাক্ট হাতে পাব? এখানে আপনাকে কোন প্রোডাক্ট হাতে দেওয়া হবে না। আপনি কোন একটি কোম্পানির ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করবেন। রেজিস্ট্রেশন করার পর আপনার জন্য সম্পূর্ণ ইউনিক একটি Url দেওয়া হবে।
তারপর আপনি যে সকল পন্য প্রমোট করতে চান সেই সকল পন্যের মধ্যে ক্লিক করে প্রত্যেকটি পন্যের আলাদা আলাদা Url নিতে পারবেন। তারপর আপনি সেই লিংকগুলো ক্রেতাদের কাছে পৌছাতে থাকবেন। কোন ক্রেতা যখন আপনার লিংকে ক্লিক করে কোন পন্য ক্রয় করবে তখন ঐ পন্যের মূল্য থেকে শতকরা হারে কমিশন দেবে। মূলত এই প্রক্রিয়াকেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে। বড় বড় ব্লগগুলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে সবচাইতে বেশি টাকা ইনকাম করে।
৩. বিজ্ঞাপন স্পেস বিক্রয়
আপনার ব্লগটি যখন অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠবে তখন আপনিও চাইলে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন নিয়ে সরাসরি আপনার ব্লগে পাবলিশ করতে পারবেন। একটি জনপ্রিয় ব্লগের বিজ্ঞাপন স্পেস এর অনেক দাম হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্য আপনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির সাথে যোগাযোগ থাকতে হবে। তবে আপনার ব্লগের ভিউ ও ট্রাফিক বেশি হলে বিভিন্ন কোম্পানি বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য আপনার সাথে যোগাযোগ করবে।
৪. স্পনসরড পোস্ট
একটি ব্লগ জনপ্রিয় হয়ে উঠার পর টাকার বিনিময় অন্য ব্লগের কোন প্রোডাক্ট বা ব্লগ সম্পর্কে লিখার জন্য অনেক অফার পাওয়া যায়। দেখা যায় অনেক সময় বিভিন্ন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান তাদের প্রোডাক্টের প্রচার এবং প্রসারের জন্য পেইড ব্লগ পোস্ট করে থাকে। আপনার ব্লগটি ভালোমানের হয়ে থাকলে এসব স্পনসরড পোস্ট আপনার আয়ের অন্যতম একটি উৎস হতে পারে।
৫. পেইড রিভিউ
যে কোন ডিজিটাল প্রোডাক্ট যেমন-স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা অন্যকোন ডিজিটাল প্রোডাক্ট লঞ্চ হওয়ার পর সেটির ভালো দিকগুলো মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কোম্পানি সেটি নিয়ে ব্লগে রিভিউ করার জন্য অফার করে। এ ধরনের একটি প্রোডাক্ট রিভিউ করে ভালোমানের টাকা ইনকাম করা যায়।
৬. ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রয়
কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ডিজিটাল প্রোডাক্ট এর কোন অভাব নেই। আপনি গ্রাফিক ডিজাইন, প্রোগ্রামিং বা ফটোগ্রাফির মতো কোনো বিষয়ের ওপর দক্ষতা থাকলে সেই প্রোডাক্ট বিক্রি করে টাকা আয় করতে পারেন। যেমন-
- গ্রাফিক ডিজাইন।
- ওয়েব ডিজাইন।
- ব্লগ থিম।
- ই-বুক।
- অনলাইন কোর্স।
- সফটওয়্যার ও গেমস ইত্যাদি।
সাধারণত এ ধরনের প্রোডাক্টগুলো অনলাইনে সহজে বিক্রয় করা যায়। আপনার নিজের তৈরি এ ধরনের কোন প্রোডাক্ট থাকলে সেটি আপনার ব্লগে শেয়ার করার মাধ্যমে বিক্রয় করে অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করতে পারেন।
৭. সার্ভিস বিক্রয়
আপনি যেকোন বিষয়ে অন্যকে বুঝানোর মত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হলে বা ভালো ওয়েব ডিজাইনার কিংবা গ্রাফিক্স ডিজাইনার হলে আপনি অনলাইনে ব্লগ লিখে আপনার প্রতিভা মানুষের মাঝে পাবলিসিটি করতে পারেন। এর ফলে ভবিষতে মানুষ তাদের প্রয়োজনে অবশ্যই আপনাকে কোন না কোন কাজের জন্য খুজবে। আপনি যে সার্ভিস বা সেবা প্রোভাইড করতে পারেন সে সার্ভিসটি নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে অফার করে আয় করে নিতে পারেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, এই পোস্টের সবগুলো বিষয় বুঝে নিজের ব্লগে এপ্লাই করলে অল্প দিনে ব্লগিং করে অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করতে পারেন। উপরের পদ্ধতিগুলো ছাড়াও আপনি অন্য কোন উপায়ে ব্লগিংয়ের মাধ্যমে আয় করে থাকলে পাঠকের সুবিধার্তে সেটিও কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভূলবেন না। ধন্যবাদ।
জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url