মেয়েদের ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট-মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
খুব সহজে দ্রুত ওজন কমানোর উপায় ও মেয়েদের ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট। আপনি কি অতিরিক্ত মোটা বা অতিরিক্ত ওজন জনিত সমস্যায় পড়েছেন। আপনি যদি একজন মেয়ে হোন এবং আপনি আপনার অতিরি শারীরিক ওজন নিয়ে সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে জানতে সাহায্য করবে কিভাবে শরীরের ওজন কমিয়ে সবসময় ফিট থাকতে পারবেন।
মোটা স্বাস্থ্যের মেয়েরা নানারকম সমস্যায় ভুগে থাকে। মোটা হওয়ার কারণে অনেক মেয়েদের নিজের প্রতি আত্ববিশ্বাস কমে যায়। একটা মেয়ে কখনোই চাইবে না তার স্বাস্থ্য মোটা থাক। সে চাইবে তার ওজন তার বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী সঠিক থাকুক অর্থাৎ স্বাস্থ্য এমন পর্যায়ে থাকুক যেন তাকে দেখতে ফিট মনে হয়।
মোটা স্বাস্থ্যের মেয়েরা ওজন কমাতে ডায়েট ও ব্যায়াম এই দুটি বিষয়ের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। কিন্তু ডায়েট ও ব্যায়াম ছাড়াও আরও কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। এক গবেষনায় দেখা গেছে যে ঘুমের মান,শারীরিক ও মানসিক চাপ, ক্ষুধার পরিমান এবং বিপাক এই বিষয়গুলো শারীরিক ওজন ও পেটের চর্বিরতে অনেকটা প্রভাব ফেলে। ওজন কমাতে খাদ্য এবং ব্যায়ামের পাশাপাশি এই বিষয়গুলোর উপরও গুরুত্ব দিতে হবে।
এক কথায় বলতে গেলে মেয়েদের শরীর ফিট রাখতে হলে তাদের দৈনন্দিন রুটিনে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেই মেয়েদের ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট ও অন্যান্য টিপসগুলো।
প্রক্রিয়াজাত হাই কার্বস ফুড কম খাওয়া
প্রক্রিয়াজাত উচ্চমাত্রায় কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারগুলো খেলে শরীরের ওজন বেড়ে যায় অর্থাৎ শরীর মোটা হয়ে যায়। অন্যদিকে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীর ফিট থাকে। সাদা চালের ভাত,সাদা আটা দিয়ে তৈরি রুটি বা অন্যান্য খাবার,পাস্তা এবং প্রি-প্যাকেজ খাবারে ফাইবার ও অন্যান্য মাইক্রোনিউট্রিয়ান্ট খুব সামান্য পরিমাণে থাকে। কিন্তু শরীরের ওজন কমাতে ও সুস্থ থাকতে এগুলোর প্রয়োজন। অপরদিকে এই খাবারগুলোতে অতি মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। তাই যে সব মেয়েরা ওজন কমাতে সাদা আটার রুটি খাচ্ছেন তাদের উচিত সাদা আটার রুটি দৈনিক খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া।
সাদা আটা,সাদা চালের ভাত,পাস্তা ও প্রি-প্যাকেজ খাবারগুলো দৈনিক খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। লাল গম,বাদামী চাল,ওটস এবং সকল ধরনের হাই ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে দৈনিক খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
ওজন কমাতে বেশি বেশি পানি পান
ওজন কমতে হলে ক্যালরি বার্ন করতে হবে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে খাবার খাওয়া শুরু করার আগে যদি পানি পান করা হয় তাহলে মোট ক্যালরির ১৩% বার্ন হয়। ক্যালরি বার্ন অর্থাৎ মোটা স্বাস্থ্য কমানোর জন্য খাবার খাওয়ার পূবে পানি পান করা সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী উপায়।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি খেতে হবে
ওজন কমাতে হলে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাংস, হাঁস -মুরগির মাংস, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, দুগ্ধ ইত্যাদি খাবারগুলো দৈনিক খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। এই খাবারগুলো প্রোটিনের পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। একটি গবেষণায় জানা গেছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ফলে ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা দূর হয় অর্থাৎ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পেট ভরা থাকে,খুব বেশি ক্ষুধা লাগে না এবং বিপাক বৃদ্ধি পায়। ক্ষুধা কম লাগলে খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমে যাবে যা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
চিনি দিয়ে তৈরি খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে
আপনি যদি ওজন কমাতে চান তাহলে চিনি দিয়ে বানানো সব ধরনের খাবারগুলোকে দৈনিক খাদ্য তালিকা হতে বাদ দিতে হবে। চিনিযুক্ত খাবারগুলো ক্যালরিতে ভরপুর। চিনিযুক্ত খাবার খেলে ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। অতিরিক্ত চিনি দিয়ে তৈরি খাবারগুলোতে ক্যালরি উচ্চমাত্রায় থাকে কিন্তু ওজন কমানোর জন্য ফাইবার ও সুস্থ থাকতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল ও প্রোটিন নেই বললেই চলে।
এক কথায় বলতে গেলে চিনি দিয়ে তৈরি খাবারগুলো আমাদের শরীরের কোন উপকারে আসে না বরং ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই ওজন কমাতে হলে চিনিযুক্ত খাবারগুলো একবারে খাওয়া যাবে না। ঘরে চিনি দিয়ে তৈরি খাবারগুলো ছাড়াও দোকানে পাওয়া যায় এমন চিনিযুক্ত খাবার যেমন: ক্যান্ডি, কৃত্রিম জুস,মিষ্টি ইত্যাদি খাবারগুলো খাওয়া যাবে না।
প্রোবায়োটিক খাবার ও সাপ্লিমেন্ট
প্রোবায়োটিক হলো এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো আমাদের অন্ত্রে বসবাস করে। শারীরিক ওজন কমাতে এই ব্যাকটেরিয়াগুলি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। প্রোবায়োটিকগুলো ক্ষুধা কমিয়ে বারবার খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখে। একটি গবেষণায় জানা গেছে, প্রোবায়োটিক পেটের চর্বি বা মেদ ভুঁড়ি ও শরীরের ওজন কমায়। কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো প্রোবায়োটিকগুলোর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বাটার মিল্ক,টক দই,কিসমিস ইত্যাদি হলো প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার। তাই মেয়েদের ওজন কমাতে প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবারগুলো প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
মানসিক চাপ
মানসিক চাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে ওজন বাড়তে থাকে। খুব বেশি মানসিক চাপে থাকলে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায় ফলে বারবার খেতে মন চাইবে। আর বারবার খাবার খেলে ওজন বেড়ে যাবে। তাই আমাদের বিশেষ করে মেয়েদের মানসিক চাপ যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে।ব্যায়াম, যোগব্যায়াম অনুশীলন, বই পড়া,বেড়াতে যাওয়া এবং বন্ধুদের বা পরিবারের সাথে গল্প বা কথাবার্তা বলা স্ট্রেস লেভেল কমানোর কয়েকটি সহজ এবং কার্যকর উপায়।
লো-ক্যালরি এবং হাই ফাইবার ও প্রোটিন স্ন্যাকস
ওজন কমাতে হলে অবশ্যই কম ক্যালরি এবং উচ্চ ফাইবার ও প্রোটিনযুক্ত স্ন্যাকস খেতে হবে। বাদাম মাখন,শাকসবজি,বাদাম,গ্রিক দই দিয়ে তৈরি সকল খাবার পুষ্টিকর স্ন্যাকসের একটি উদাহরণ। এই ধরনের স্ন্যাকস দীর্ঘস্থায়ী ওজন কমাতে সহায়তা করতে পারে।
উচ্চ আঁশ বা হাই ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার
মেয়েদের ওজন কমানোর ডায়ে চার্ট এমন ভাবে বানাতে হবে যেন লো-ক্যালরি, হাই ফাইবার ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলো থাকে। ফাইবার হলো এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট যা হজম হয় না। ওজন কমাতে বেশি বেশি খেতে হবে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। ফ্রেশ শাকসবজি, ফলমূল ও দানাদার খাবারে অর্থাৎ উদ্ভিদ বীজে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।
না খেয়ে থাকবেন না
অনেকেই মনে করেন ডায়েট মানেই না খেলেই বোধহয় ওজন কমে যাবে। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। না খেয়ে থাকলে ওজন কমবে না। তাই দিনে ৩-৪ বার খেতে হবে। তবে পেটা ভরে খাওয়া যাবে না।
দৈনিক পর্যাপ্ত ঘুম
ডায়েট কন্ট্রোল ও ব্যায়ামের মতোই ঘুম মেয়েদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। ঘুম কম হলে ওজন বেড়ে যায়। আমাদের রাতে কমপক্ষে সাতঘন্টা ঘুমাতে হবে। ঘুম কম হলে ওজন ও ক্ষুধা দুটোই বেড়ে যাবে।
ব্যায়াম করা
ব্যায়ামের মাধ্যমে মেয়েদের ওজন অনেকটা কমানো যায়। শরীরে ক্যালরি বেড়ে গেলে ওজন বেড়ে যায়। ব্যায়াম করলে ক্যালরি বার্ন হয়। আর ক্যালরি বার্ন হলে ওজন কমে। তাই ওজন কমাতে হলে ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়ামের মধ্যে রয়েছে সাইক্লিং, সাতার কাঁটা, দৌড়ানো, ভার উত্তোলন,যোগব্যায়াম ইত্যাদি।
জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url