লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত- লো প্রেসারের লক্ষণ।
রক্তচাপের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে তাকে আমরা নিম্ন রক্তচাপ বা লো ব্লাড প্রেসার বলি। ডাক্তারি ভাষায় লো ব্লাড প্রেসারকে বলা হয় হাইপোটেনশন। লো ব্লাড প্রেসার বা হাইপোটেনশনকে ভালোভাবে জানতে হলে প্রথমে আমাদের জানতে হবে ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ কি। ধমনীর মধ্যে দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সময় ধমনীর প্রাচীরে রক্ত যে চাপ প্রয়োগ করে তাকে রক্তচাপ বলা হয়।
হৃদপিন্ডের ধমনীর গাত্রে রক্তের সর্বোচ্চ চাপকে বলা হয় সিস্টোলিক প্রেসার এবং সর্বনিম্ন চাপকে বলা হয় ডায়াস্টোলিক প্রেসার। একজন সুস্থ স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার পারদ চাপ। যেখানে ১২০ হলো সর্বোচ্চ চাপ এবং ৮০ হলো সর্বনিম্ন চাপ। ধমনীর গাত্রে রক্তের ১২০/৮০ মিলিমিটার পারদ চাপকে বলা হয় আদর্শ রক্তচাপ।
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের রক্তচাপ ১৪০/৯০ মিলিমিটার পারদ চাপ বা তার বেশি হলে তাকে হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চরক্তচাপ ধরা হয়। আর যদি রক্তচাপ ৯০/৬০ মিলিমিটার পারদ চাপ বা তার কম হয় তাহলে তাকে লো ব্লাড প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ ধরা হয়। লো প্রেসার কেন হয়? লো ব্লাড প্রেসার প্রতিরোধ করতে হলে অর্থাৎ লো ব্লাড প্রসার থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের জানতে হবে লো ব্লাড প্রেসার কেন হয়।
লো প্রেসার কেন হয়?
আসলে লো ব্লাড প্রেসার কোন রোগ নয়। লো ব্লাড প্রেসার অন্য কোনো রোগের উপসর্গ বা স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে প্রকাশ পায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে লো ব্লাড প্রেসার হতে পারে।
- হরমোনের সমস্যা জনিত রোগ। যেমনঃ হাইপোথাইরয়েডিজম, ডায়াবেটিস, হাইপোগ্লাইসেমিয়া ইত্যাদি।
- হজমে সমস্যা থাকলে অর্থাৎ বদহজমের কারণে ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে।
- হার্ট ফেইলিওর ও হার্ট অ্যারিথমিয়াম এই দুটি কারণে হার্টের রোগে ব্লাড প্রেসার কমে যায়।
- ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় কারণে ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে।
- কোন রোগে দীর্ঘমেয়াদি আক্রান্ত থাকার ফলেও ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে।
- গর্ভবতী নারীদের হরমোনের কারণে প্রথম ৬ মাস ব্লাড প্রেসার কমে যায়।
- লো ব্লাড প্রেসার হওয়ার আরো একটি কারণ হলো অপুষ্টি।
- হিট স্ট্রোক ও লিভারের সমস্যায় রক্তচাপ কমে যায়।
হঠাৎ ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়ার কারণ
কিছু কারণ হঠাৎ করে ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে। আমরা এখন জানবো হঠাৎ করে ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়ার কারণগুলো।
- শরীরের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে হঠাৎ করে ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে।
- শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া।
- হার্ট ফেইলিউর হলে
- নার্ভের সমস্যা জনিত কিছু রোগে
- ডায়রিয়া, জ্বর, অতিরিক্ত ঘামা ইত্যাদি কারণে ডিহাইড্রেশন ও শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি হলে ব্লাড প্রেসার কমে যায়।
- অ্যানাফিল্যাকটিক শক নামক গুরুতর অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার কারণে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হয়। যার কারণে ব্লাড প্রেসার কমে যায়।
এগুলো ছাড়াও ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়ার আরো কারণ থাকতে পারে। তাছাড়া ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়ার অনেক গুলো কারণ এখন পর্যন্ত অস্পষ্ট।
লো প্রেসার এর লক্ষণ
হাইপোটেনশন বা ব্লাড প্রেসার কমে গেলে সবার ক্ষেত্রে একই ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পাবে বিষয়টা এরকম নয়। হাইপারটেনশনের কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলোতে রক্ত প্রবাহ কমে যায় ফলে মাথা ঘুরানো, মাথা ঝিমঝিম করা, হালকা মাথা ব্যাথা সহ আরো কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। হাইপোটেনশন বা লো ব্লাড প্রেসারের উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে-
- ক্লান্ত ও দুর্বল লাগা।
- হালকা মাথা ব্যথা করা ও অচেতন হয়ে যাওয়ার অনুভূতি।
- ব্লাড প্রেসার কমে গেলে মাথা ঘোরাতে পারে।
- বমি বমি ভাব ও বমি হতে পারে।
- চোখে ঝাপসা দেখা।
- লো ব্লাড প্রেসারের কারণে অচেতন হয়ে যেতে পারে।
- হার্টবিট বেড়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিক দ্রুত হৃৎস্পন্দন।
- হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে।
- শোয়া-বসা থেকে দাঁড়ালে মাথা ঘুরতে পারে।
- অতিরিক্ত পানির তৃষ্ণা লাগা ও প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া লো ব্লাড প্রেসার এর একটি লক্ষণ।
উপরের উপসর্গ গুলোর মাধ্যমে খুব সহজেই হাইপোটেনশন বা লো ব্লাড প্রেসার শনাক্ত করা যায়। কিন্তু এই উপসর্গগুলো অন্যান্য রোগের কারণেও হতে পারে। তাই এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে দ্রুত ব্লাড প্রেসার মাপা উচিত। হাইপোটেনশন বা লো ব্লাড প্রেসার কোনো রোগ নয় কিন্তু এটি অন্যান্য রোগের উপসর্গ হিসেবে প্রকাশ পায়। তাই সঠিকভাবে রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার জন্য অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
লো প্রেসারের ঘরোয়া প্রতিকার
প্রথমত হাইপোটেনশনের কারণ ভালোভাবে শনাক্ত করতে হবে। কারণ শনাক্ত করতে পারলে হাইপোটেনশন বা লো ব্লাড প্রেসারের চিকিৎসা সঠিকভাবে করা যাবে।
তাই ডাক্তারকে আপনার লাইফ স্টাইল এবং বর্তমানে শারীরিক ও মানসিক কি কি সমস্যায় ভুগছেন তা পরিষ্কারভাবে বলতে হবে। যাইহোক এখানে কতগুলো ঘরোয়া প্রতিকার জানানো হয়েছে যেগুলো দ্রুত লো ব্লাড প্রেসারের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করবে।
খাবার স্যালাইন ও পানি
ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতার কারণে লো ব্লাড প্রেসার হয়। এই ধরনের লো ব্লাড প্রেসার প্রতিরোধে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো কাজ করে খাবার স্যালাইন। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম ঝরার কারণে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের পরিমাণ কমে যায়। খাবার স্যালাইন ইলেক্ট্রোলাইটের ঘাটতি দ্রুত পূরণ করে।
গ্লুকোজ
গ্লুকোজ দ্রুত প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে। তাই গ্লুকোজ সমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমানে খেতে হবে। ওষুধের দোকানে গ্লুকোজ পাউডার পাওয়া যায় যা পরিমাণ মতো পানির সাথে মিশিয়ে খেলে ব্লাড প্রেসার বাড়ে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের গ্লুকোজ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার
শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার পর্যাপ্ত পরিমানে খেতে হবে। অপুষ্টিজনিত কারণে হাইপোটেনশন বা ব্লাড প্রেসার কমে যায়। তাই ব্লাড প্রেসার বাড়াতে আমাদের পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি খেতে হবে।
ভিটামিনযুক্ত খাবার
ব্লাড প্রেসার যাতে না কমে সে জন্য আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিনযুক্ত খাবার বিশেষ করে ভিটামিন বি টুয়েলভ ও ফোলেট যুক্ত খাবার খেতে হবে। কেননা এই দুইটি ভিটামিনের অভাবে শরীর ক্লান্ত লাগে ও ব্লাড প্রেসার কমে যায়। মাংস,মটরশুটি, মসুর ডাল, সাইট্রাস ফল, শাকসবজি, ডিম এবং লিভারে প্রচুর পরিমাণে এই দুই ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায়।
তাজা শাক-সবজি
শাক সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ লবণ। তাই তাজা শাকসবজি খেতে হবে ব্লাড প্রেসার ঠিকঠাক রাখতে হলে। তাছাড়া সবুজ শাক সবজিতে রয়েছে ভিটামিন সি ও আয়রন। অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে এই খাবারগুলো নিয়মিত খেতে হবে।
ক্যাফিনযুক্ত খাবার ও পানীয়
ক্যাফিন কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে এবং হার্টবিট বাড়িয়ে দিয়ে সাময়িকভাবে ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধি করে। তাই ব্লাড প্রেসার বাড়াতে ক্যাফিনযুক্ত খাবার খাওয়া যেতে পারে। কফি, ক্যাফিনযুক্ত চা, ক্যাফিনযুক্ত চকলেট ইত্যাদি।
রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ
রক্তশূন্যতা ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়ার একটি কারণ। তাই রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ফলিক এসিড যুক্ত খাবার খেতে হবে। রক্তশূন্যতা দূর করতে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। কারণ রক্তশূন্যতায় আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। যাইহোক, আয়রন যুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে- মুরগির মাংস, ডিমের কুসুম, মসুর ডাল, পালংশাক, কাজুবাদাম, শিমের বিচি ইত্যাদি।
গর্ভাবস্থায় লো ব্লাড প্রেসার
গর্ভাবস্থায় প্রথম ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ব্লাড প্রেসার কম থাকা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এই সময়টাতে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে রক্তনালী প্রসারিত হয়। তবে গর্ভাবস্থায় ডিহাইড্রেশন এবং রক্ত শূন্যতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা ডিহাইড্রেশন এবং রক্তশূন্যতা হলে ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।
হঠাৎ ব্লাড প্রেসার কমে গেলে করণীয়
শরীর খুব ক্লান্ত, মাথা ঝিমঝিম, মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব, শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ শকে যাওয়ার পূর্ব লক্ষণ। এক্ষেত্রে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে হবে অথবা একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
লো প্রেসারে কি হার্ট এটাক হয়?
নিম্ন রক্তচাপ বা low-pressure মূলত রোগের উপসর্গ। তাই ব্লাড প্রেসার কমে গেলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে হার্টের পেশীর সমস্যা জনিত রোগের কারণে ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে। তাছাড়া অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা অজ্ঞান হওয়ার পূর্বে ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে।
good information
thanka
Nice post
ধন্যবাদ