অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির উপায়-গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির উপায় জানতে পুরো পোস্ট পড়ুন। আমরা এখানে প্রাকৃতিক কিছু উপাদান সম্পর্কে আয়ূর্বেদ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আলোচনা করেছি।
গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির উপায় জানতে পুরো পোস্ট মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। আমরা প্রায়ই শুনে থাকি, ‘আমার পেটে ব্যথা। আমরা তখনই কোনো কিছু না ভেবে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা মনে করে ঔষধ খেয়ে থাকি। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে ঔষধ খেয়েও পেটে ব্যথাvকমছে না।
পেটে ব্যথা হলেই গ্যাস্ট্রিক সমস্যা তা কিন্তু না অনেকক্ষেত্রেই পেটে ব্যথার অনেক কারনেই হয়ে থাকে। তাই আমাদের গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ গুলা জানতে হবে, বুঝতে হবে তারপর চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ খেতে হবে।
হেলিকোব্যাকটর ফাইলোরি নামক এক ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবেই গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সূত্রপাত হয়। অনেক সময় অনিয়মিত ঘুম, খাওয়া-দাওয়ার কারণে গ্যাস্ট্রিক অতিরিক্ত বেড়ে যায়। আজকের আর্টিকেলে অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণ ও গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো–
পোস্ট সূচিপত্র:
অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণঃ-
বমি: বেশিক্ষণ পেট খালি থাকলেই যকৃৎ থেকে যে তরল নির্গত হয় তা গলব্লাডারে জমা হয়। জমা হওয়া তরল হজমে বাধা দেয়। ফলে বারবার বমি, পিত্তবমির মতো লক্ষণ দেখা যায়। এছাড়াও খাবারের সংক্রমণ থেকে অনেক সময় পেটে ইনফেকশনের মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়। অ্যাসিড বেশিমাত্রায় ক্ষরণ হয় বলে গলা জ্বালা, পেট ব্যথার মতো সমস্যা দেখা যায়।
ভিটামিন বি১২ এর অভাব: অনেক সময়ই আমরা ভিটামিন বি ১২ এর অভাব বুঝতে পারি না। এছাড়াও ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, ডিপ্রেশন, শ্বাসের সমস্যা দেখা যায়।
ডায়েরিয়া ও পেটে ব্যথা: অনেকের মাঝে মাঝে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। তখন আমরা ভেবে থাকি খাবার বা পানির সমস্যা কারণে হয়েছে। কিন্তু ঘনঘন যদি এই সমস্যা দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে। এই সঙ্গে হঠাৎ করে পেট ব্যথা, বমি, ফুড পয়োজন মানেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে।
পেটে প্রায়ই ব্যথা: প্রায়ই পেটে ব্যথা হলে আমাদের উচিৎ তা অবহেলা না করা। পেটে ব্যথা অনেক কিছুরই লক্ষণ হতে পারে। আর পেটে ব্যথা তো গ্যাস্ট্রিকের অন্যতম লক্ষণ।
খিদে পেলে খুব দ্রুত পেট ভরে যায়: দীর্ঘ সময় ধরে খিদে পেয়েছে বুঝতে পারছেন কিন্তু একটু খেলেই মনে হয় পেট ভরে গেছে আর খেতে পারছেন না। অনেকে বুঝতে না পারলেও এটি কিন্তু গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ।
ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া: বেশি ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া, বেশি পরিমাণ লবণ খাওয়া প্রভৃতি কারণে পেটে মেদ জমে থাকে। ফলে শুধুই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নয়, প্রায়ই গ্যাস ও মেয়েদের মাসিক সংক্রান্ত সমস্যা হয়ে থাকে। এছাড়াও পেটে অস্বস্তি অনুভব, বমি বমি ভাব, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পায়খানা নরম হওয়া এবং ক্ষুধা হ্রাস পাওয়াও গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ।
গ্যাস্ট্রিক থেকে শ্বাসকষ্ট
পেটে অত্যধিক বায়ু (গ্যাস) উৎপন্ন হলে, পেট ফেঁপে যায়, পেটে এক ধরনের প্রেসার বা চাপ অনুভূত হয়। যারা মোটা লোক স্বভাবতভাবেই তাদের পেটে মেদ জমে পেটের আকার বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক অবস্থায় তারা পেটে চাপ অনুভব করেন। এ অবস্থায় পেটে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস জমলে অস্বস্তিবোধ করেন এইজন্য কারও কারও শ্বাসকষ্ট হয়।
অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির উপায়
কিছু খাবার রয়েছে, যে খাবার গুলো গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে সহায়তা করে-
১. এক চা চামচ মধু উষ্ণপানিতে মিশিয়ে খেলে গ্যাস্ট্রিক কমে যাবে।
২. ধনেপাতা অ্যাসিডিটির সমস্যায় খুব ভালো কাজ করে। ধনেপাতার জুস খেতে পারেন। আবার তরকারি ধনেগুঁড়া দিয়েও রান্না করতে পারেন।
৩. জোয়ান হজম শক্তি বাড়ায় ও হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। গ্যাস অম্বলের সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়। এক চামচ জোয়ান এক চিমটি লবণের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
৪. মৌরি হজমে সহায়ক করে। সারা রাত ভিজিয়ে রাখা মৌরির পানি খাবার পর খেয়ে নিলে অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৫. দইয়ে ল্যাকটোব্যাকিলাস, অ্যাসিডোফিলাস ও বিফিডাসের মতো নানা উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। দই খেলে হজম ভালো হয় এবং গ্যাস্ট্রিক কমে। তাই গ্যাস্ট্রিক কমানোর জন্য খাবারের পর টকদই খেতে পারেন।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা প্রতিরোধের উপায়
এইচ পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ বন্ধ করা অসম্ভব। তবে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা এবং খাবার ও পানীয় গ্রহণে সাবধানতা অবলম্বন করলে অনেক সময় এর থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
গ্যাস্ট্রিক কমবেশি সবারই আছে। খাবার হজম না হওয়া, বদ হজম হওয়া গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ। বাসায় তৈরি করা খাবার না খেলে বাইরের সামান্য সিঙ্গারা-সামুচা খেলেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত হলে অ্যান্টাসিড খেয়ে এর থেকে পরিত্রাণ খুঁজি আমরা। কিন্তু আপনি কি জানেন, গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির জন্য চমৎকার সব ঘরোয়া বিকল্প আছে? যাতে নেই ওষুধের মতো কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এ রকম ৫টি ঘরোয়া উপায় তুলে ধরা হলো :
১. আধা ইঞ্চি পরিমাণ কাঁচা আদা নিন। তারপর অল্প একটু লবন মাখিয়ে খেয়ে ফেলুন। আদা খাওয়ার কিছুক্ষণ পর ১ কাপ কুসুম গরম পানি খান। গভীর রাতে আর গ্যস্ট্রিকের সমস্যা হবে না।
২. এক গ্লাস পানি একটি হাড়িতে নিয়ে চুলায় বসান। তার আগে এক ইঞ্চি পরিমাণ কাঁচা হলুদ পানিতে দিয়ে দিন। পানি অন্তত পাঁচ মিনিট ফুটিয়ে নিন। তারপর নামিয়ে নিন। পানি ঠান্ডা হলে হলুদসহ খেয়ে ফেলুন। গ্যাস্ট্রিক দৌঁড়ে পালাবে।
৩. দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা অ্যাসিডিটি থেকে আপনাকে রক্ষা করবে। ক্যালসিয়াম শরীরে অতিরিক্ত উৎপাদিত অ্যাসিড শুষে নেয়। কোন কারণে অ্যাসিডিটি সৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিকভাবে স্বস্তি দেবে আপনাকে। তবে তা পান করতে হবে চিনি ছাড়াই। অ্যাসিডিটি রোধে আরো বেশি কার্যকরী ফল পেতে এক গ্লাস দুধ এক চামচ ঘি-সহ পান করুন।
৪. জিরা মুখের লালা উৎপাদনে সাহায্য করে যা হজম প্রক্রিয়া ও বিপাক ক্রিয়ায় কাজে আসে। এছাড়া অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, পাকস্থলি কোন কারণে উদ্দিপ্ত হলে তা শীতল করতে সাহায্য করে এটি। এ ছাড়া পেটের আলসার দূর করতেও কাজ করে জিরা। আপনার পেটে যখনই বায়ুর উদ্রেক হবে তখনই কয়েকটি জিরা চিবিয়ে অথবা পানিতে সেদ্ধ করে পানিসহ খেয়ে ফেলুন- অ্যাসিডিটি থাকবে না।
৫. এলাচে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম। এটি খাবার হজমে সাহায্য করে। পাকস্থলিতে এক ধরনের পিচ্ছিল আবরণ তৈরি করে অ্যাসিডিটির প্রভাব থেকে রক্ষা করে। ছোট এলাচের দুইটি দানা গুঁড়ো করে পানিতে ফুটিয়ে ঠান্ডা হলে পান করুন। এতে অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি পাবেন।
Beautiful