ক্যান্সারের লক্ষণ, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি প্রাথমিক স্টেজে মরণব্যাধি ক্যান্সারের লক্ষণ শনাক্ত করা যায়। তাহলে এর চিকিৎসা করা যেমন সহজ হয়, সেই সাথে রোগীর বাঁচার সম্ভাবনাও বহুগুনে বৃদ্ধি পায়।
মানুষকে যেসব রোগ সবচেয়ে বেশি ভোগায় তার মধ্যে ক্যন্সার হল অন্যতম। পৃথিবীতে যত মরণব্যাধি রোগ রয়েছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রথমের দিকে যার নাম আসে তার নামও ক্যান্সার। ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে আনা কোন লড়াইয়ের থেকে কম কিছু না।
মরণব্যাধি ক্যান্সারের লক্ষণ বুঝতে না পারলে মানুষের শরীরে বাসা বেঁধে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে এবং সময়ের সাথে সাথে তা একদম নষ্ট করে দেয়। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যন্সারের লক্ষণ শনাক্ত করতে না পারলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফলাফল হয় মৃত্যু!
প্রতিবছর ৪ ফেব্রুয়ারী সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারা পৃথিবীতে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালন করা হয়। তবে ক্যান্সার মানেই এখন আর মৃত্যু নয়। শুরুতেই বুঝতে পারলে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। তাই ক্যান্সারের হাত থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আপনাকে ক্যান্সারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। আজকের আর্টিকেল উল্লেখ করা cancer এর লক্ষণ গুলো দিয়ে শনাক্ত করতে পারবেন মরণব্যাধি ক্যান্সার।
পোস্ট সূচিপত্র:
ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়
দূর্ভাগ্যবশত ক্যান্সারে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে। ভাবতে পারেন ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পুরো পৃথিবীতে মোট ৯৬ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেছেন। আর ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা এক কোটি ত্রিশ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তবে ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলে, ক্যান্সার এর লক্ষণ গুলো শনাক্ত করতেই হবে। আর সে অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
আজকে ক্যান্সারের ১০ টি লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করব। যেন যেকেউ এই আর্টিকেলটি পড়ে প্রাথমিক স্টেজে ক্যন্সারের লক্ষণ শনাক্ত করতে পারেন। সেইসাথে আর্টিকেলটির শেষে ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় এবং চিকিৎসা নিয়েও জানতে পারবেন।
ক্যান্সার কি?
কর্কটক্রান্তি বা ক্যান্সার হল অন্যতম মারাত্মক একটি রোগ। যা এক নামে সবাই চেনে। কারণ এই মরণব্যাধি বর্তমানে ভয়াবহ রুপ নিয়েছে।
এই রোগটি মূলত অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের ফলে ঘটে। কোনো কারণবশত মানবদেহে কোন কোষ অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বিভাজিত হলে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন মূলত চামড়ার নিচে মাংসের দলা বা চাকা তৈরী করে। একে টিউমার বলে।
টিউমার আবার দুই প্রকার।
- বিনাইন
- ম্যালিগ্যান্ট
ম্যালিগ্যান্ট টিউমারকেই বলা হয় ক্যান্সার।
বিস্তারিত বলতে গেলে, ক্যান্সার শুধু একটি একক রোগ নয়। ক্যান্সার অনেক গুলো জটিল রোগ বালাই এর সমষ্টি। মানুষের দেহ অনেক গুলো ক্ষুদ্র কোষের সমষ্টি। এই কোষগুলো নিয়মিত ও নিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয়। ফলে দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয় পূরন হয়।
কিন্তু কোনো কারণে এই নিয়মিত বিভাজনে ব্যাঘাত ঘটলেই, ক্যান্সারের আক্রমণ শুরু হয়। আর তখন আক্রান্ত স্থানে বিরামহীনভাবে কোষ বিভাজিত হয় এবং অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ড বা টিউমার তৈরী হয়। এই টিউমারের ধরণ অনুযায়ী ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়। মূলত ম্যালিগ্যান্ট টিউমার-ই হল ক্যান্সার।
ক্যান্সারের কারণ
মানবদেহে অনেক ধরনের ক্যান্সার লক্ষ্য করা যায়। হাড়, রক্ত, মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্র, স্তন, ত্বক, জরায়ুর মত অঙ্গে ক্যান্সার দেখা যায়। প্রত্যেকটি ক্যান্সারের কারণ ও লক্ষণ আলাদা থাকে। কিন্তু কিছু সাধারণ ও কমন কারণ রয়েছে যার কারণে মরণব্যাধি ক্যান্সার হতে পারে। সেগুলো হল:
খাবার
অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার, তেল চর্বি জাতীয় খাবার, ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদি ক্যান্সারের কারন। তাছাড়া খাদ্য তালিকায় সুষম খাবারের অভাব থাকলে। ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি শাকসবজি, আশঁ জাতীয় খাবার না থাকলে ক্যান্সার সহজেই আক্রমণ করতে পারে।
জীবনযাপনের ধরন
আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকি আছে কিনা, তা নির্ভর করে আপনার জীবন-যাপনের ধরনের ওপর। আপনি কি খুব বেশি অলস জীবন যাপন করেন? কায়িক পরিশ্রম করেন না বললেই চলে?
তাহলে আপনি এখনই নিজের জীবনধারণ পদ্ধতি পরিবর্তন করে ফেলুন। কারণ অলস জীবন যাপন করা, শরীরকে সক্রিয় না রাখা কিন্তু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
জিনগত ত্রুটি
জিনগত ত্রুটির কারণে ক্যান্সার হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। পরিবারের কেউ যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। অর্থাৎ, রক্তের সম্পর্কের কারো ক্যান্সার থাকলেও ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।
বয়স
যেহেতু বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই এসময়ে শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরী হয়৷ আর ক্যান্সারও তেমনই একটি রোগ। একটি জরিপে দেখা গেছে, ৭০% ক্যান্সার রোগীই ষাটোর্ধ। তবে এখন অল্প বয়সী লোকেদের মধ্যেও ক্যান্সার বাড়ছে।
পরিবেশ ও পেশাগত জীবনের প্রভাব
আপনি কোন পরিবেশে কাজ করছেন? তার উপরেও নির্ভর করে আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকি আছে কিনা। উদাহরণস্বরূপ: আপনি যদি বেশিক্ষণ রোদে কাজ করেন তাহলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ে।
তাছাড়া অনেকে কারখানা কিংবা এমন কোনো স্থানে কাজ করেন। যে উপাদানগুলো শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
মরণব্যাধি ক্যান্সারের ১০টি লক্ষণ
বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ভিন্ন ভিন্ন কারণ থাকে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ থেকে প্রাথমিকভাবে সব ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়। তাই আমরা কিছু ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
১. ওজন হ্রাস
ওজন কমানোর উপায় হয়তো অনেকেই খুঁজেন। কিন্তু কোনো কারন ছাড়া ওজন কমে যাওয়া খুবই খারাপ লক্ষণ। মানবদের অনেক ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে বেশিরভাগ ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ ছিল ওজন হ্রাস।
আরো পড়ুন: আদার উপকারিতা ও অপকারিতা-আদার ঔষধি গুণাবলী
ক্যান্সার খুব সহজেই রোগীকে দুর্বল করে দেয়। ফলে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আর বিভিন্ন জটিলতা দেখা যায়। তার মধ্যে একটি হল অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস।
তাই কোন কারন ছাড়া হুট করে ওজন কমে যেতে শুরু করলে সেটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। এজন্য সবসময়ে নিজের ওজন এর হ্রাস-বৃদ্ধির দিকে বিশেষ নজর রাখবেন।
২. ক্লান্তি ভাব
অনেক রোগের কারনেই ক্লান্তি ভাব আসতে পারে। একে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ হিসেবেই ধরা হয়। তাহলে কিভাবে বুঝবেন এটা ক্যান্সারের লক্ষণ কিনা?
আপনার যদি দীর্ঘ সময় ধরে ক্লান্তি ভব হয় তাহলে সেটা চিন্তার বিষয়। আর এই ক্লান্তিভাব যদি কিছুদিন পর পর দেখা দিতেই থাকে তাহলে, দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
৩. দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা
কোনো কারণ ছাড়াই ব্যথা অনুভব করা কিন্তু আশংকাজনক। এই ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হওয়াও ভাল লক্ষণ নয়। আপনাকে আগেই বলেছি ক্যান্সার রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় বা নষ্ট করে দেয়।
আরো পড়ুন: টমেটোর উপকারিতা ও অপকারিতা
আপনি যদি আপনার মধ্যে এমন কোনো লক্ষণ দেখেন যে, কোনো ক্ষত শুকাতে কিংবা ব্যথা নিরাময় হতে অনেক সময় লাগছে, তাহলে এখনই সতর্ক হয়ে যান। কারণ এগুলো একদম প্রাথমিক লক্ষণ, সময় থাকতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৪. ঘন ঘন জ্বর
অনেক রোগের উপসর্গ হল ঘন ঘন জ্বর হওয়া, তার মধ্যে ক্যান্সারও আছে। ক্যান্সার শরীরকে দুর্বল করে দেয়। শরীরের কোষগুলো কর্মক্ষমতা হারায়। ফলে শরীর বার বার নানা রকমের রোগে আক্রান্ত হয়। আর শরীর যখন এসব রোগের সাথে লড়াই করে তখন বার বার জ্বর হয়। তাই অকারণে বার বার জ্বর হওয়াকে ক্যান্সারের লক্ষণ হিসবে ধরা হয়।
৫. শরীরে কোন অংশে অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ড
শরীরের কোন অংশে অস্বাভাবিক মাংসের উপস্থিতি লক্ষ্য করেছেন? অথবা মাংস জমাট বেঁধে থাকতে দেখেছেন? ক্যান্সারের একটি প্রধান উপসর্গ বা লক্ষণ হল এই অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ড। আমরা জানি, ক্যান্সার হয় মূলত অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের ফলে। আর এই অনিয়মিত কোষগুলোই বড় মাংসের দলা বা পিন্ডের আকার নেয়।
এজন্য আপনার শরীরে কোন অপ্রয়োজনীয় মাংসপিণ্ডের উপস্থিতি টের পেলে এখনই সতর্ক হয়ে যান। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৬. চামড়ায় যেকোনো দাগ বা পরিবর্তন
আপনি কি জানেন? ত্বকের ক্যান্সার বর্তমানে খুবই দ্রুত হারে বাড়ছে। এর প্রধান কারণ মানুষের অসচেতনতা। আজকাল মানুষ কোনো রকম বিচার বিবেচনা না করেই বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করেন। যেগুলো স্কিন ক্যান্সারের অন্যতম কারণ।
আপনি যদি কখনো আপনার ত্বকে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করেন তাহলে অবশ্যই সেটা খতিয়ে দেখুন। ত্বকে থাকা কোনো তিল বা আঁচিলের দিকে নজর রাখুন। এগুলো দ্রুত কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা।
এসব যদি হঠাৎ করে বড় হয়ে যায় বা রং বদলায় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। আর ত্বকে কোনো দাগ ফুসকুড়ি দেখতে পেলও সতর্ক থাকুন।
৭. দীর্ঘস্থায়ী কাশি
হঠাৎ করে কাশি শুরু হওয়া একটি খারাপ লক্ষণ। আর সেটা যদি হয় কোন কারণ ছাড়াই, তাহলে তো আরো বিপদ। মোট কথা, কারণ ছাড়া কাশি আর দীর্ঘস্থায়ী কাশি দুটোই ভয়ের কারণ।
প্রথমেই ডাক্তারের কাছে না গিয়ে আপনি যদি নানা রকম কাশির ওষুধ খেয়ে দেখতে পারেন। বেশ কিছুদিন খাওয়ার পরও যদি আপনার কাশি না কমে তাহলে সেটাকে অবহেলা করবেন না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিন।
৮. রেচন ক্রিয়ায় পরিবর্তন
ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে রেচন ক্রিয়ার অভ্যাসে অনেক পরিবর্তন আসে। তাছাড়া অন্য যেকোন কারনেই আপনার রেচন ক্রিয়ার পরিবর্তন আসুক না কেন, সেটা জটিল রোগের লক্ষণ হতে পারে।
অনেক সময়ে রোগীর ঘন ঘন মূত্র ত্যাগের বেগ আসে। আবার চাপ অনুভব হলেও সমস্যা তৈরী হয়, মুত্রথলিতে জ্বালাপোড়া অনুভব হয়। এসব কিন্তু ক্যান্সার বা কিডনি সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
তবে কিভাবে নিশ্চিত হবেন এটি ক্যান্সারের লক্ষণ কিনা? মূত্রনালীতে জ্বালাপোড়া পাশাপাশি যদি ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায় তাহলে এটা ক্যান্সারের লক্ষণ হিসবে ধরা হয়।
৯. খাদ্য গ্রহণে অনীহা বা বদহজম
খাবার গ্রহণে কোন রকম সমস্যা হলে সেটাকে অবহেলা করবেন না। খাবার খাওয়ার সময় যদি গলায়, কন্ঠনালী, শ্বাসনালীতে কোনো রকম অস্বাভাবিক ব্যথা লক্ষ করেন তাহলে, তা চিকিৎসক কে জানান।
তাছাড়া খাবার গ্রহনে অনীহা হওয়া, বদহজম হওয়া এগুলোও ক্যান্সারের লক্ষণ। মূলত পাকস্থলী, যকৃত, কন্ঠ নালী, শ্বাসনালীর ক্যান্সার হলে এসব উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়।
১০. শরীরের কোন অংশে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ
অকারণে কাশি ও কাশির সাথে রক্ত পড়া খুবই আশংকাজনক। শুকনো কাশির সাথে অনেকের ই রক্তক্ষরণ হতে পারে। কিন্তু সেই কাশি যদি দীর্ঘ সময় স্থায়ী থাকে কিংবা ঘন ঘন রক্ত পড়ে তাহলে সেটা ক্যান্সারের লক্ষণ। তাছাড়া শরীরের অন্য কোন অংশ যেমন নাক, মলশয় থেকে রক্তক্ষরণ হলেও সেটি মারাত্মক জটিলতার ইঙ্গিত।
উপরের আলোচনায় উল্লেখ করা ১০ টি ক্যান্সারের লক্ষণ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে রাখুন, নিজের ও অন্যজনের শরীরে মরণব্যধি বাসা বাঁধার আগেই প্রতিকার করার চেষ্টা করুন।
ক্যান্সারের ব্যতিক্রমী লক্ষণ
এতক্ষণ যতগুলো লক্ষণের কথা বললাম, সেগুলো হল প্রাথমিক লক্ষণ। অর্থাৎ এই সাধারণ লক্ষণগুলো বেশিরভাগ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরে মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। ক্যান্সারের এসব লক্ষণ থেকে আপনি প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারবেন। তাই এগুলো কে বলা হয় মেজর লক্ষণ। তবে এগুলো ছাড়াও আরো কিছু মাইনর লক্ষণ থাকে যা অনেকেই জানে না।
ক্যান্সারের মাইনর লক্ষণ গুলো হলো:
- পা ফুলে যাওয়া
- শরীরের কোন অঙ্গ হঠাৎ করে পরিবর্তন হওয়া
- বর্ণ পরিবর্তন হওয়া
- শারীরিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হওয়া ইত্যাদি।
ক্যান্সার থেকে নিজেকে কিভাবে রক্ষা করবেন?
ক্যান্সের থেকে নিজেকে রক্ষা করার কিছু নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো:
নিয়মিত ক্যানসার স্ক্রিনিং
নিয়মিত ক্যান্সার স্কিনিং করে বহু জীবন রক্ষা করা সম্ভব। আপনি যদি নিয়মিত ক্যান্সার স্ক্রিনিং করান তাহলে শরীরের যে কোন অস্বাভাবিক পরিবর্তন নোট করতে পারবেন। ফলে ক্যান্সার প্রাথমিক স্টেজে নির্ণয় করা যাবে। আর চিকিৎসা করাও সহজ ও ফলপ্রসূ হবে।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
নিয়মিত সুষম ও পরিমিত পরিমাণ খাবার গ্রহণ করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এজন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রচুর আশঁ জাতীয় খাবার, ফলমূল, সবজি রাখতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত খাদ্য পরিহার করতে হবে।
ব্যায়াম
শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করার কোনো বিকল্প নেই। শুধু ক্যান্সার কেন? যেকোনো রোগকে মোকাবিলা করতে হলে শারীরিক সক্ষমতা অর্জন করা জরুরী।
আর ব্যায়াম শরীরকে সেই সক্ষমতা প্রদানে সাহায্য করে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভারী কিংবা হালকা ব্যয়াম করবেন। আর একবার ব্যয়াম এর অভ্যাস করে নিতে পারলে তাতে আর অনিয়ম করবেন না।
ধূমপান পরিহার
ক্যান্সারের একটি বড় কারন হচ্ছে ধুমপান। সারা বিশ্বে অনেক মানুষ ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন ধুমপানের কারনে। ধূমপান করলে মুখ, গলা, কন্ঠনালি, মূত্রথলি ও অন্ত্রের ক্যান্সার হতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব ধূমপান ত্যাগ করুন। নিজেকে ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করুন।
মদ্যপান ত্যাগ করা
অতিরিক্ত মদ্যপান ক্যান্সারের ঝুঁকিকে কয়েক গুনে বাড়িয়ে দেয়। মদ্যপান করলে যকৃত, খাদ্যনালী, গলনালীর ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মদ্যপান ত্যাগ করুন।
সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে দূরে থাকা
সূর্যের রশ্মি কিন্তু মানুষের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। বেশিক্ষণ সূর্যের রশ্মির প্রভাবে থাকলে মেলানোমা ও স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। এজন্য গ্রীষ্মকালে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।
সক্রিয় থাকা
আপনার জীবন যাপনের ধরন পরিবর্তন করুন। খুব বেশি অলস জীবন যাপন করবেন না। কায়িক পরিশ্রম করার চেষ্টা করুন। নিজের ছোট ছোট কাজ গুলো নিজেই করা চেষ্টা করুন। এতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকা সম্ভব।
এছাড়াও প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। নিয়মিত হাটাহাটি করা আপনার শারীরিক অবস্থার কতটা পরিবর্তন আনবে তা আপনি ভাবতেও পারবেন না। সময় সুযোগ পেলই সাইক্লিং, জগিং, খেলাধুলা ইত্যাদির সাথে যুক্ত থাকুন। এতে মন ও শরীর উভয় সুস্থ রাখতে পারবেন।
ক্যান্সারের চিকিৎসা
নিচে ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
১. সার্জারি
প্রাথমিক অবস্থায় সার্জারি করানো হয়। অর্থাৎ ক্যান্সার আক্রান্ত স্থানকে অপারেশন এর মাধ্যমে কেটে বাদ দিয়ে দেয়া হয়। এভাবে শরীরকে ক্যান্সার মুক্ত করা যায়। যেসব ক্যান্সার প্রাথমিক স্টেজে শনাক্ত করা যায় সেগুলো সার্জারি করে নিরাময় করা যায়।
২. রেডিওথেরাপি
তবে শরীরের ভেতরেই ক্যান্সারের জীবানুকে ধ্বংস করতে চাইলে, রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। এক্ষেত্রে শরীরের কোন অংশ কেটে বা বাদ দিয়ে চিকিৎসা করতে হয় না।
৩. কেমোথেরাপি
রেডিওথেরাপি আর সার্জারি ছাড়াও কেমোথেরাপি দিয়ে ক্যান্সার নিরাময় করা হয়। এক্ষেত্রে ক্যান্সার নিরাময়ের নির্দিষ্ট ঔষধ প্রয়োগ করে চিকিৎসা করা যায়। বেশিরভাগ ক্যান্সারই নিরাময় করা যায় যদি সেটা প্রাথমিক স্টেজে চিকিৎসা করানো হয়।
৪. হরমোন ও টার্গেটেড থেরাপি
উপরে দেয়া চিকিৎসা পদ্ধতি গুলো ছাড়াও হরমোন ও টার্গেটেড থেরাপি দিয়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা করানো হয়। বিশেষ কিংবা সংবেদনশীল ক্যান্সার এভাবে নিরাময় করা যায়।
বাংলাদেশে ক্যান্সারের ভয়াবহতা
প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং আনুমানিক এক লাখ পঞ্চাশ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করেন। বুঝতেই পারছেন ক্যান্সারের প্রকোপ থেকে রক্ষা পায়নি বাংলাদেশও, এদেশেও ভয়াবহ রুপ ধারন করেছে এই মরণব্যাধি।
তাই যত দ্রুত সম্ভব জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। অন্যথায় ক্যান্সার আরো মারাত্মক হয়ে দাঁড়াবে। আর ক্যান্সার রোগের লক্ষণ সনাক্ত করা না গেলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়াও সম্ভব নয়।
আপনার শরীরের কোন অসুস্থতাই অবহেলা করার মত নয়। প্রতিটি ছোট ছোট শারীরিক সমস্যা ও অসুস্থতা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
আজকে হয়ত ছোট কোন অসুস্থতাকে আপনি অবহেলা করলেন কিন্তু হতে পারে এই ছোট অসুস্থতাই ছিল মরণব্যাধি ক্যান্সারের লক্ষণ। তাই প্রাথমিক স্টেজে ক্যান্সার এর লক্ষণ সনাক্ত করার কোন বিকল্প নেই।
বেঁচে থাকতে হলে প্রতিটি মুহূর্তে সচেতন থাকতে হবে। আর শুধু নিজের নয়। প্রিয়মানুষ গুলোকেও এই ব্যাপারে সর্তক করতে হবে। সৌভাগ্যক্রমে, যেসব ক্যান্সার দ্রুত শনাক্ত করা যায় তার অধিকাংশই নিরাময় করা সম্ভব। তাই ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো জানুন।
শেষ কথা
এই আর্টিকেলটিতে ক্যান্সার কি, কারণ, ক্যান্সারের লক্ষণ ও এর চিকিৎসা সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই লেখাটি আপনাকে ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানতে এবং সতর্ক হতে সাহায্য করবে। এই ১০ টি লক্ষণ দিয়েই শনাক্ত করতে পারবেন মরণব্যাধি ক্যান্সার।
সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন, নিজের প্রিয়জনের সুস্থতা নিশ্চিত করুন। আপনার সামান্য সতর্কতা বাঁচাতে পারে আপনার নিজের কিংবা প্রিয়জনের জীবন।
Beautiful
Nice