জিম করার নিয়ম ও উপকারিতা
জিম করার নিয়ম ও উপকারিতা-শরীর ও মনকে ভালো রাখতে নিয়মিত জিম বা শারীরিক চর্চা দরকার। জিম করার জন্য জিম সেন্টারে যেতে হবে এ কথাটা ঠিক না। অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নানা সমস্যার কারণে জিম সেন্টারে যেতে পারে না। কোন সমস্যা নাই, আপনি বাড়িতেই শুরু করতে পারেন জিম। শুধু জানা দরকার জিম করার নিয়ম।
কিভাবে আপনি বাড়িতে জিম করবেন সেটি যদি না জেনে থাকেন তাহলে আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলটি আপনাকে জানাতে সাহায্য করবে কিভাবে বাসায় জিম করা যায়। তাই মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
আরো পড়ুন: ঘুম-পানি খাওয়ার সময় জানাবে স্মার্টওয়াচ
জিম করার পূর্বে আমাদের দেহ ও মনকে সার্বিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। ওয়ার্ম আপ দেহ ও মনকে জিমের জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে। ওয়ার্ম আপ করলে দেহের পেশীগুলো তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ পেশীগুলো একটু উষ্ণ হয়। উষ্ণ পেশী শক্তি উৎপাদনের গতি বাড়ায়। অর্থাৎ জিম করার আগে ওয়ার্ম আপ করে নিলে জিম করার জন্য এক্সট্রা শক্তি পাওয়া যায়। ওয়ার্ম আপ করার ফলে মন অনেকটা চাঙ্গা হয়। তাই আমাদের জানতে হবে ওয়ার্ম আপ কি এবং কিভাবে করতে হয়।
পোস্ট সূচিপত্র:
ওয়ার্ম আপ করার উপকারিতা
যেকোনো ধরনের শরীর চর্চা শুরু করার আগে ওয়ার্ম আপ করা প্রয়োজন। অনেকে আছে ওয়ার্ম আপ করার বিষয়টি এড়িয়ে যায়।ওয়ার্ম আপ হলো মূলত শরীরের উষ্ণতা বৃদ্ধি করার একটা পদ্ধতি। চলুন জেনে নেয়া যাক জিম করার পূর্বে ওয়ার্ম আপ করলে কি কি সুবিধা পাওয়া যায়।
➨ ওয়ার্ম আপ করার ফলে শরীরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় ফলে এক ধরনের এনজাইম অ্যাক্টিভ হয়। এই এনজাইম শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও জিম বা যেকোনো ধরনের শরীরচর্চা করার সময় পেশি ইঞ্জুরি হওয়ার ঝুঁকি অধিকাংশে কমিয়ে দেয় এবং স্নায়ুতন্ত্রকে আরো সচল করে দেয়।
➨ ওয়ার্ম আপ(warm up) করার ফলে রক্তে ও ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পায়।
➨ ওয়ার্ম আপ করার ফলে হার্টবিট ঠিক থাকে।
➨ ওয়ার্ম আপ জিম বা শরীরচর্চা করার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করে।
➨ ওয়ার্ম আপ করলে ইনসুলিন(Insulin), টেস্টোস্টেরন হরমোন ও দেহের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
সাধারণত জিম বলতে আমার অনেকেই বুঝে থাকি ভার উত্তোলন। জিম করার প্রথমে অর্থাৎ প্রাথমিক পর্যায়ে ভার উত্তোলন উচিত নয়। আপনার যদি জিম সেন্টারে যেতে অসুবিধা হয় তাহলে বাড়িতেই জিম করা শুরু করতে পারেন। বাড়িতে জিম করার জন্য কোন ইকুইপমেন্টের প্রয়োজন নেই।
বাড়িতে জিম করার নিয়ম
আপনি জানেন কি? বাসায় জিম করে বডি বানানো সম্ভব। তবে বাড়িতে করে সফলতার জন্য ধৈর্য ও পরিশ্রম দুটোই লাগবে। আপনি যদি কঠোর পরিশ্রম করতে পারেন তাহলে বাড়িতেই জিম করে ভালো বডি বানাতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নিই বাড়িতে জিম করার পদ্ধতি গুলো।
স্ট্রেসিং এবং ওয়ার্ম আপ
জিম বা ব্যায়াম শুরু করার পূর্বে স্ট্রেসিং এবং ওয়ার্ম আপ করে নিতে হবে। জিম করার আগে ওয়ার্ম আপ করার সুবিধা এবং উপকারিতা সম্পর্কে ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি। আমাদের মধ্যে অনেকেই যে ভুলটি করে থাকে তা হল ওয়ার্ম আপ না করেই জিম করা শুরু করে দেয়। এটি করা যাবে না, ওয়ার্ম আপ না করে জিম করলে ভালোভাবে বডি বিল্ড হবে না। তাই আগে স্ট্রেসিং ও ওয়ার্ম আপ তারপর জিম।
স্কিপিং বা দড়ি লাফ
আমাদের দেশে স্কিপিং বা দড়ি লাফ একটি সুপরিচিত খেলার নাম। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মেয়েরা এই খেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে। খেলায় অংশগ্রহণ কারীদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশি সময় টিকে থাকতে পারবে তাকে প্রথম স্থান অধিকারী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
আপনি যদি বাড়িতে জিম করেন বা করতে চান তাহলে কমপক্ষে ১০/১২ মিনিট স্কিপিং বা দড়ি লাফ দিতে হবে। প্রথম দিকে দড়ি লাফ দিতে একটু সমস্যা হতে পারে তবে চেষ্টা করুন একসময় ভালোভাবে পারবেন। সপ্তাহে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ দিন এই ব্যায়ামটি করতে হবে।
জাম্পিং জ্যাক ব্যায়াম
শারীরিক ও মানসিক উন্নতির জন্য এই ব্যায়ামটি করা প্রয়োজন। হার্ট ভালো রাখার জন্য যে ব্যায়ামগুলো করা প্রয়োজন জাম্পিং জ্যাক সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ব্যায়াম। জাম্পিং জ্যাক হার্ট ভালো রাখার পাশাপাশি মেন্টাল স্ট্রেস(stress) দূর করে, হাড় মজবুত করে ও পেশী গঠনে সহযোগিতা করে।
জগিং ও স্ট্যান্ড জগিং
যদি জগিং করার মতো যথেষ্ট জায়গা থাকে তাহলে জগিং করতে পারেন। আর যদি জগিং করার মতো যথেষ্ট জায়গা না থাকলে স্ট্যান্ড জগিং করুন। স্ট্যান্ড জগিং হচ্ছে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে জগিং করা। জগিং বা স্ট্যান্ড জগিং করলে শরীরের বিশেষ করে পেটের মেদ খুব দ্রুত কমে। প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট এই ব্যায়ামটি করতে হবে।
পুশ-আপ বা বুক ডাউন
ব্যায়ামের তালিকায় পুশ-আপ কে অবশ্যই রাখতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৬ বার পুশ-আপ করার চেষ্টা করুন। ১২ বার পুশ-আপ করার পর ১ মিনিটের জন্য বিশ্রাম নিতে হবে। পুশ-আপ বডি স্ট্রাকচার গঠন করতে সাহায্য করে ও হাতের পেশী গুলোকে মজবুত করে।
রাশিয়ান টুইস্ট ব্যায়াম
পেটের মেদ কমানোর সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম হলো রাশিয়ান টুইস্ট। প্রতিদিন রাশিয়ান টুইস্ট ব্যায়ামটি করলে দ্রুত পেটে সিক্স প্যাক হবে। প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ মিনিট রাশিয়ান টুইস্ট ব্যায়াম করা প্রয়োজন। বাড়িতে জিম করলে রাশিয়ান টুইস্ট ব্যায়ামটি অবশ্যই আপনার ব্যায়ামের তালিকায় রাখতে হবে।
স্কোয়াট ব্যায়াম
পেটের মেদ কমানোর আরো একটি কার্যকরী ব্যায়াম হলো স্কোয়াট। প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫-২০ বার স্কোয়াট ব্যায়ামটি করতে হবে। স্কোয়াট ব্যায়ামটি একটু কঠিন হলেও খুব কার্যকর। তাই প্রতিদিনের ব্যায়াম এর তালিকায় স্কোয়াট ব্যায়ামটি রাখা দরকার।
প্লাংক ব্যায়াম
প্লাংক ব্যায়াম দ্রুত শরীরের স্ট্রাকচার গঠন করতে সাহায্য করে। যত সময় নিয়ে প্লাংক ব্যায়াম করবেন আপনার জন্য ততো ভালো হবে। প্রথমদিকে অর্থাৎ জিম শুরুর দিকে ৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে প্লাংক ব্যায়াম করুন। পরে আস্তে আস্তে সময় বাড়িয়ে নিতে হবে।
জিম করার পর খাদ্য
জিম বা ব্যায়াম করার পর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি নষ্ট হয়। তাই জিম করার পর হাই ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতে হবে। মনে রাখবেন জিম করার পর বেশি করে অর্থাৎ পেট ভরে খাওয়া ঠিক না। মিষ্টি পাকা ফলে গ্লুকোজ রয়েছে, গ্লুকোজ শরীরে দ্রুত শক্তি যোগায়। তাই জিম করার পর অল্প পরিমাণে মিষ্টি পাকা ফল খাওয়া প্রয়োজন।
প্রোটিন ভালোভাবে বডি বিল্ড করতে সাহায্য করে। পেশি ও হাড় মজবুত করতে দরকার ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন,ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য ভিটামিন। দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। কলাতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, ভিটামিন ও গ্লুকোজ। তাই জিম করার পর সামান্য বিশ্রাম নিয়ে দুটো কলা,দুটো ডিম ও এক গ্লাস দুধ খাওয়া প্রয়োজন। শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার রাখতে হবে।
শেষ কথা
অনেকে জিম শুরু করার পর পরই ওয়েইট লিফটিং বা ডাম্বেল ও অন্যান্য ভারী ইকুইপমেন্ট দিয়ে জিম করা শুরু করে দেয়। এতে শরীরের ক্ষতি হয়, আগে শরীরকে ওয়েইট লিফটিং এর জন্য প্রস্তত করতে হবে। আর এই জন্য একজন ট্রেইনারের সাথে যোগাযোগ করুন এবং তার নির্দেশ মোতাবেক ওয়েইট লিফটিং করুন।
জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url