রোযা অবস্থায় স্বামী স্ত্রীর দৈহিক মিলন জায়েজ আছে কী?
অনেকেই হয়তো পোস্টের টপিক দেখেই বুঝে ফেলেছেন যে আজ আমি কোন বিষয় নিয়ে লিখতে যাচ্ছি । আজ আমি আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি স্ত্রী সহবাসে রোযা ভাঙে কি না । আশা করি সকলের কাছে পোস্টটি ভাল লাগবে এবং ভালো লাগলে কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন ।
রোজা ভঙ্গ ও মাকরুহ হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে । রোজা ভঙ্গের কয়েকটি কারণের মধ্যে একটি হলো স্ত্রীর সাথে সহবাস করা । ছোটখাটো অনেক বইতে এটি লেখা থাকে । এর যথেষ্ঠ ব্যাখ্যা দেওয়া থাকে না । আমাদের এ সংক্রান্ত সকল ব্যাখ্যা আমাদের জানা উচিত ।
হাদিসের কয়েকটি ঘটনা থেকে এ ধরনের সমস্যা সমাধান করা যায় । আমরা হয়তো অনেকেই বলি যে রোযা থাকা অবস্থায় অন্যকে চুম্বন বা চুমু দেওয়া যাবে না । এটাও একটি ভূল ধারণা । চলুন তাহলে একটি ঘটনা থেকে এ ধরনের ধারণা থেকে মুক্ত হই ।
আরো পড়ুন: সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত
রমজান মাসে স্ত্রী সহবাস নিয়ে ইসলামী বিধান। রোজায় যে জিনিসগুলো থেকে বিরত থাকতে হয় তার মধ্যে একটি হচ্ছে যৌন সম্পর্ক বা সহবাস। কেউ যদি এই কাজটি রোজার দিন করে বসে তবে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তার প্রমাণ হচ্ছে সূরা বাকারাতে আল্লাহ্র বক্তব্যঃ “রোযার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে”। [আল-বাকারাঃ ১৮৭] এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে রোজার দিনে সহবাস হালাল করা হয়নি। কোনো স্বামী যদি জোর করে স্ত্রীর সাথে যৌনসম্পর্ক করেন সেক্ষেত্রে স্বামীর রোজা ভেঙ্গে গেলেও স্ত্রীর রোজা ভাঙবে না। এর কারণ আমরা আগে উল্লেখ করেছি। আল্লাহর রাসূল (সা.) ইবন ‘আব্বাস বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করেছেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আমার উম্মতের ওপর থেকে ত্রুটিবিচ্যুতি, ভুলে যাওয়া ও জোর করিয়ে করানো কাজকে মার্জনা করেছেন”। [প্রসঙ্গত আজকাল যেহেতু খবর পাওয়া যাচ্ছে নারীরা জোর করে পুরুষদের বিয়ে করছেন, ভবিষ্যতে পুরুষদের জন্য অনুরূপ ফিকহি আলোচনা করতে হতে পারে।] যৌন সম্পর্ক বলতে শরিআর ভাষায় বোঝানো হচ্ছে পুরুষাঙ্গের সাথে স্ত্রী-অঙ্গের মিলন। এক্ষেত্রে বীর্যপাত শর্ত নয়। অর্থাৎ এই দুই অঙ্গ সংস্পর্শে আসলেই রোজা ভেঙ্গে যাবে, বীর্যপাতের ঘটনা না ঘটলেও। শায়খ সালেহ ইবন আল-‘উসায়মীন এই মতটিই ব্যক্ত করেছেন। যৌন মিলনের দ্বারা কেউ রোজা ভাঙলে সেই রোজা পরবর্তীতে কাযা করতে হবে এবং “ভারী কাফ্ফারা” দিতে হবে। সেই প্রসঙ্গ পরে আসছে। শারীরিক স্পর্শ বা চুম্বন স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কামনাবসত শারীরিক স্পর্শ যেমন fondling বা foreplay অথবা স্রেফ চুমুর কারণে রোজা ভাঙবে না। তবে এর ফলে যদি বীর্যপাত ঘটে সেক্ষেত্রে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তাই রোজার সময় এগুলো পরিহার করাই উত্তম। চুম্বন যদি কামনাবশত না হয় সেক্ষেত্রে ক্ষতি নেই। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বীর্যপাত ঘটানো যদি কেউ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজের বীর্যপাত ঘটান সেক্ষেত্রে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে। যেমন নিজে হস্তমৈথুনের মাধ্যমে অথবা স্ত্রী কর্তৃক হস্তমৈথুনের মাধ্যমে যদি বীর্যপাত ঘটে তাহলে রোজা ভাঙবে। কোনো ব্যক্তি যদি যৌনউত্তেজক কোনো কিছু দেখে, শোনে বা পড়ে – এক্ষেত্রে বীর্যপাত ঘটলে তার রোজা ভাঙবে। এক্ষেত্রে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে করা কোনো কাজের ফলে বীর্যপাত ঘটলে রোজা ভাঙবে। এভাবে রোজা ভেঙ্গে গেলে কাযা করাই যথেষ্ট।
একটি ঘটনা : একদিন মহানবি (স) মসজিদে বসেছিলেন । হযরত উমর ফারুক (রা) হঠাৎ তাঁর কাছে গিয়ে হাজির হন এবং বলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি বড় একটি ভুল করে ফেলেছি । রাসুল (স) বললেন কী ভুল করেছো ? তিনি বলেন আমি রোযা থাকা অবস্থায় স্ত্রীকে চুমু দিয়েছি । মহানবি (স) বললেন, তুমি কী জান যে ওযু করার সময় খুবই সামান্যতম পানি তুমি পান কর? তিনি বললেন হ্যাঁ । তারপর মহানবি (স) বললেন তবুও তুমি রোযা অবস্থায় ওযু করো কেন? তিনি বললেন ওযু ছাড়া তো নামায হয় না । এজন্য ওযু করি । তারপর মহানবি (স) বললেন, যদি নামায আদায়ের জন্য ওযু করতেই হয় তবে স্ত্রীকে খুশি করার জন্য চুমু দিলে অপরাধ কোথায় ?
এই ঘটনাটি থেকে বোঝা যায় যে স্ত্রীকে খুশি করার উদ্দেশ্যে চুমু দেওয়া শরিয়তে জায়েজ আছে ।
এবার আসি স্বামী ও স্ত্রীর একসাথে থাকার কথায় । হ্যাঁ একসাথে থাকা যাবে তবে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে ।যৌন চিন্তার কারণে যদি বীর্য পাত (বীর্য হলো একধরনের আঠা জাতীয় তরল পদার্থ যা লজ্জাস্থান থেকে বের হয়) হয় তবে পুরুষের রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে । তাই রোযা অবস্থায় স্বামী ও স্ত্রী একসাথে দীর্ঘক্ষণ একাকী থাকা উচিত নয় । স্বামী ও স্ত্রীরির মধ্যে যদি একজন রোজা থাকে তবুও এই নিয়ম অনুসরণ করা উচিত ।
রোযা ভঙ্গের কারণে আমরা অনেকেই অনেক কথা জানি । আসলে সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত ।
আরও একটি উদাহরণ দিলাম ভুল ধারণা নিয়ে । আমরা অনেকেই বলি অনেক্ষণ ধরে গোসল করলে দেহে পানি প্রবেশ করে । ফলে রোযা ভেঙ্গে যায় । পুকুরে গোসল করলে এটি ঘটে । এগুলো সব ভূল ধারণা । পরীক্ষা করেও দেখা যায় গোসল করলে পানি পশমের ভিতরে আটকে থাকে । দেহকে শীতল করে । আর দেহ মোচার সময় সে পানি বাহিরে চলে আসে । ফলে রোযা ভঙ্গের কোন প্রশ্নই আসে না । তাছাড়া দেহের প্রশান্তির জন্য যা কিছু করা যেতেই পারে । এতে আল্লাহ বাঁধা দেননি । তবুও আমরা ভুল ধারণাকে অনেক যুক্তির কারণে সঠিক বলে মনে করি ।
যাইহোক আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন । আমিন।
জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url