পেঁয়াজের খোসার উপকারিতা
রান্নাঘরের একটি প্রধান উপাদান পেঁয়াজ। এটি ছাড়া রান্না শেষ করাই কঠিন। পেঁয়াজের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে সবারই কম-বেশি জানা। তবে এর খোসার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানেন কি? শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে পেঁয়াজের খোসায় থাকা পুষ্টি উপাদানসমূহ।
এতে আছে ভিটামিন এ, সি, ই, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এ ছাড়া আছে ফাইবারসহ প্রদাহবিরোধী উপাদানসমূহ। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, পেঁয়াজের খোসা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখে ও হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
আরো পড়ুন: টমেটোর উপকারিতা ও অপকারিতা
ভারতীয় পুষ্টিবিদ শিল্পা অরোরার মতে, পেঁয়াজে যেমন স্বাস্থ্যকর উপাদান রয়েছে; ঠিক এর খোসাও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। চাইলেই আপনার ডায়েটে পেঁয়াজের খোসার চা রাখতে পারেন। এটি ডিটক্স পানীয় হিসেবে কাজ করে। তবে খেয়াল রাখবেন, ব্যবহৃত পেঁয়াজগুলো যেন রাসায়নিকমুক্ত হয়।
পোস্ট সূচিপত্র:
পেঁয়াজের খোসার উপকারিতা-
➦ কিছু পেঁয়াজের খোসা পানিতে মিশিয়ে ১০-২০ মিনিট সেদ্ধ করুন। এরপর পানি ছেঁকে সামান্য গরম অবস্থায় পান করুন। এতে থাকা প্রদাহবিরোধী উপাদানসমূহ মুহূর্তেই আপনাকে পেশীর ব্যথা থেকে মুক্তি দেবে।
➦ অনিদ্রার সমস্যায় নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খেয়ে থাকেন অনেকেই। যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এক্ষেত্রেও কার্যকরী পেঁয়াজের খোসা। কিছু পেঁয়াজের খোসা নিয়ে সেদ্ধ করুন ১৫ মিনিট। তারপর ছেঁকে পান করুন। রাতে ঘুমানোর আগে এর চা নিয়মিত পান করলে অনিদ্রা দূর হবে।
➦ চুল প্রাকৃতিকভাবে রং করে পেঁয়াজের খোসা। এজন্য ১ ঘণ্টা খোসা পানিতে ফুটিয়ে নিন। সারারাত ওই পানি রেখে দিন। পরদিন চুলে ব্যবহার করে আধা ঘণ্টা রেখে দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আরো পড়ুন: ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা
➦ পেঁয়াজের খোসায় রয়েছে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যসমূহ। যা ত্বকের চুলকানি ও র্যাশ দূর করে। এজন্য পেঁয়াজের খোসা সেদ্ধ পানি ঠান্ডা করে ত্বকে ব্যবহার করুন।
➦ স্যুপ, স্টক এবং গ্রেভি করার সময় পেঁয়াজের খোসা যুক্ত করুন। এটি গ্রেভিকে ঘন করবে। কিছুক্ষণ ফোটানোর পর খোসা তুলে নিতে ভুলবেন না।
➦ আপনি চাইলে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন পেঁয়াজের খোসার সেদ্ধ পানি।
চুল পাকা রোধে-
পেঁয়াজের খোসা চুল পাকা রোধে খুবই কার্যকর, শুনতে অদ্ভুত লাগছে তাই না? কিন্তু ব্যাপারটা অনেকটাই সত্যি। আপনার পাকা চুল ঢাকতে ঘরোয়া কৌশল অবলম্বন করুন। এক্ষেত্রে ২/৩ টি মাঝারি আকারের পেঁয়াজ নিন। সেগুলোর খোসা ছাড়িয়ে একটি প্লেটে রাখুন। একটি আয়রন প্যানে খোসাগুলো নিয়ে হালকা আঁচে সেগুলো গরম করুন। খোসাগুলো কালো হয়ে গেলে সেগুলো নামিয়ে পাউডারের মতো গুঁড়ো করে ফেলুন। পরে অ্যালোভেরা জেল বা চুলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করতে পারেন। ঘরে তৈরি এই হেয়ার ডাই আপনার সাদা চুল কালো করে দেবে। পরে অবশ্য একাধিকবার ধুয়ে ফেললে তা দূর হয়ে যাবে।
চুল পড়া রোধে-
আমাদের অনেকেরই প্রচুর চুল ঝরে পড়ে। এক্ষেত্রে একটি পাত্রে পানি নিয়ে তাতে কয়েকটি পেঁয়াজের খোসা দিয়ে গরম করুন। পানির রঙ বাদামি হয়ে গেলে চুলা নিভিয়ে দিন। এরপর সেই পানি একটি বোতলে রাখুন। এই মিশ্রণ মাথায় ব্যবহার করলে চুল পড়া কমবে ও নতুন চুল জন্মাবে।
খাবারের ফ্লেভারে-
পেঁয়াজের খোসা শুকিয়ে পেঁয়াজের গুঁড়ো স্যুপ, স্টিউ ও ঘরে বানানো পাউরুটিতে ব্যবহার করলে ভালো ফ্লেভার পাবেন।
ব্যথা দূর করতে-
আপনার যদি মাংসপেশি বা শরীর ব্যথা হয়ে থাকে, তাহলে পেঁয়াজের খোসাযুক্ত পানি গরম করে পান করলে উপকার পাবেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি পাত্রে পানি নিয়ে কয়েকটি পেঁয়াজের খোসা যুক্ত করে গরম করুন। এরপর সেই পানি পান করলে শরীরের ব্যথা কমবে।
সুনিদ্রায় পেঁয়াজের খোসা-
অদ্ভুত শোনালেও পেঁয়াজের খোসা সুনিদ্রা নিয়ে আসে বলে জানা গেছে। ঘুমের আগে পেঁয়াজের খোসাযুক্ত চা পান করলে উপকার পাবেন। কারণ পেঁয়াজের খোসায় থাকা এল- ট্রিপটোফ্যান নামের অ্যামাইনো এসিড মস্তিষ্ক ঠান্ডা করে ও ঘুম নিয়ে আসে।
পেঁয়াজের খোসার সার-
রান্নার কাজ শেষে পেঁয়াজের সব খোসা প্রতিদিন একটি বড় পাত্রে রাখুন। ধীরে ধীরে তা প্রাকৃতিক সারে পরিণত হবে। এই সার আপনার বাগানের গাছে ব্যবহার করুন, দেখবেন দ্রুত বেড়ে উঠছে গাছ।
ত্বকের যত্নে-
পেঁয়াজের খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ যা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। পেঁয়াজের খোসা ত্বকের নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে। নিয়মিত পেঁয়াজের খোসা মেশানো চা খেলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়।
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে-
পেঁয়াজের খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। তাই এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও ভাইরাসজনিত সমস্যা এড়াতেও পেঁয়াজের খোসা খুবই দরকারি। পেঁয়াজের খোসা মেশানো চা পানে গলা ব্যথার সমস্যাও দূর হয়।
চুলের যত্নে-
চুলের যত্নে শুধু পেঁয়াজ নয় পেঁয়াজের খোসাও ভীষণ উপকারি। পেঁয়াজ এবং খোসা দুটিতেই প্রচুর সালফার রয়েছে। পেঁয়াজের খোসা সেদ্ধ পানি চুলের যত্নে ব্যবহার করলে খুশকির সমস্যা কমে যায়। চুলের বৃদ্ধিতেও পেঁয়াজের খোসা কার্যকর। সপ্তাহে তিন-চার দিন এই পেঁয়াজের খোসা সেদ্ধ পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিলে চুল ঘন, কালো ও ঝলমলে হয়।
পেশীর সমস্যা দূর করতে-
পায়ে ব্যথার সমস্যা বা পায়ের পেশীতে টান লাগার সমস্যায়ও উপকার পাবেন পেঁয়াজের খোসায়। পেঁয়াজের খোসা সেদ্ধ পানি পানে আরাম পাবেন, সাথে মিশিয়ে নিতে পারেন মধু।
সত্যি দারুন
Nice post
ধন্যবাদ