গ্যাসের ব্যথা কোথায় হয় এবং দ্রুত গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমানোর উপায়।
গ্যাস্ট্রিক বর্তমান সময়ে একটি অতি পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। যেকোনো বয়সের পুরুষ ও মহিলারা এমনকি শিশুরা পর্যন্ত গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় ভুগে থাকে। গ্যাস্ট্রিকের ব্যথাকে ডাক্তারি ভাষায় গ্যাসট্রাইটিস বলা হয়। গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার একটি উপসর্গ হলো পেটের উপরিভাগে ব্যথা। গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কি শুধু পেটের উপরিভাগে হয় নাকি অন্য কোথাও হতে পারে বিষয়টি জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা আসলে কোন রোগ নয়, গ্যাস্ট্রিক হলো অন্য রোগের উপসর্গ। সাধারণত পেপটিক আলসার হলে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা সহ আরো কিছু লক্ষণ ও উপসর্গ প্রকাশ পায়। হাইপার এসিডিটির কারণেও বুকের জ্বালাপোড়া ও ব্যথা হতে পারে।
সাধারণত গ্যাস্ট্রিক বলতে পেটে গ্যাস জমা হওয়া, পেট ফাঁপা, বমি ভাব, পেটের উপরিভাগে বা বুকে ব্যথাকে বুঝে থাকি।
পোস্ট সূচিপত্র:
গ্যাস্ট্রিক হয় কেন?
চিকিৎসকরা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথাকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। একটি হলো দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা যাকে ক্রনিক গ্যাসট্রাইটিস বলা হয়। অপরটি তীব্র গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা যাকে অ্যাকিউট গ্যাসট্রাইটিস বলা হয় এবং অ্যাকিউট গ্যাসট্রাইটিস হঠাৎ করে শুরু হয়।
গ্যাস্ট্রিক কেন হয়? গ্যাস্ট্রিকের মূল কারণ হলো হাইপার অ্যাসিডিটি অর্থাৎ পেটে অ্যাসিডের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া।
হাইপার অ্যাসিডিটি হয় কেন?
অনিদ্রা, মানসিক চাপ, তেল চর্বি ও ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া ইত্যাদি কারণে হাইপার অ্যাসিডিটি হতে পারে। তাছাড়া ব্যথানাশক ওষুধ বেশি সেবনের ফলে হাইপার অ্যাসিডিটি এমনকি পেপটিক আলসার(Peptic ulcer) পর্যন্ত হতে পারে।
পেপটিক আলসারের কারণ কি?
হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার কারণে পেপটিক আলসার হয়। এই ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলীর মিউকোসাল প্রাচীরকে নষ্ট করে দেয়। ফলে পাকস্থলীতে ক্ষত বা আলসারের তৈরি হয়। এছাড়া হাইড্রোক্লোরিক এসিড ও পেপসিন নামক এনজাইমের কার্যকারিতার জন্ওয মিউকোসাল প্রাচী ক্ষতিগ্রস্ত হয় অর্থাৎ পেপটিক আলসার হয়।
মিউকোসাল প্রাচীর পেটের অতিরিক্ত অ্যাসিড হতে পাকস্থলীকে রক্ষা করে। মিউকোসাল প্রাচীর নষ্ট হওয়ার ফলে অ্যাসিড সরাসরি পাকস্থলীর উপর পড়ে ফলে পাকস্থলীতে ইনফ্লামেশন বা ব্যথা হয়।
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় হয়?
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা সচরাচর পেটের উপরিভাগে হয়। বুকের মাঝখানে, ডানপাশে এমনকি বামপাশে পর্যন্ত হতে পারে। ব্যথার অনুভূতি সবার ক্ষেত্রে এক হয় না। গ্যাস্ট্রিকের ব্যথাকে অনেকে হার্টের ব্যথা মনে করে ভুল করে। গ্যাস্ট্রিক আলসারের ক্ষেত্রে কোন কিছু খেলে ব্যথা বেড়ে যায়। কিন্তু ডিওডেনাল আলসারের ক্ষেত্রে খালি পেটে ব্যথা বাড়ে। যাইহোক, গ্যাস্ট্রিকের তীব্র ব্যথা হলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমানোর উপায়
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমরা সাধারণত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন করে থাকি। দেখা গেছে অনেকে গ্যাস্টিকের ওষুধ নিয়মিত খাচ্ছেন কিন্তু গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি পাচ্ছেন না। এর কারণ হলো তার লাইফ স্টাইল। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের পাশাপাশি লাইফস্টাইলে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে।
যে বিষয়গুলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য দায়ী সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। যেমনঃ মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করতে হবে, সময় মত খাবার খেতে হবে, শাকসবজি বেশি খেতে হবে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে, ভাজা-পোড়া, তেল-চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও সহজে হজম হয় এমন ধরনের খাবার খেতে হবে, সময় মত ঘুমাতে হবে, এইচ পাইলোরি ইনফেকশন থাকলে এর চিকিৎসা নিতে হবে ইত্যাদি।
গ্যাস্ট্রিকের samiব্যথা কমাতে সহায়ক খাবার
দই, মৌরি, লবঙ্গ বা সবজির শরবত গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। সাধারণত অতিরিক্ত অ্যাসিড থেকে পেটে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা হয়। সঙ্গে থাকে পেট ফোলাভাব বা ফাঁপা ও হজম জনিত সমস্যা। এই সমস্যা দূর করতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা জরুরি।
পুষ্টি-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে এমন কয়েকটি খাবারের নাম সম্পর্কে জানানো হল।
দই: দই উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার ভালো উৎস এবং এটা হজমে সহায়তা করে। পানির সঙ্গে দই মিশিয়ে পানীয় তৈরি করতে পারেন। এতে ভাজা জিরা ও বিট লবণ মিশিয়ে স্বাদ বাড়াতে পারেন। চাইলে এত আপেলও যোগ করে নিতে পারেন।
ভেষজ চা: ভেষজ চা নানান ঔষধি গুণ সম্পন্ন গাছ পাতা দিয়ে তৈরি। এগুলো শক্তিশালো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী উপাদান সমৃদ্ধ। ভেষজ চা হজমে সাহায্য করে ও গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমায়। ভেষজ উপাদানের মধ্য আদা, পুদিনা, ক্যামোমাইল ও লেবু উল্লেখ্যযোগ্য।
মৌরি বীজ: গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমাতে উপকারী। ভারতে সাধারণত খাবারের পরে হজমক্রিয়া বাড়াতে মৌরি খাওয়া হয়। এতে আছে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ যৌগ যা গ্যাস্ট্রিকের রস নিঃসরণে সহায়তা করে, খাবার হজমে সহায়তা করে, বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ দূর করতে সাহায্য করে।
অ্যাপল সাইডার ভিনিগার: অন্ত্রে অ্যাসিডিক মাইক্রোন পরিবেশ তৈরি করে এবং হজমে সহায়ক এনজাইমকেও সক্রিয় করে। এটা এইভাবে হজমে সহায়তা করে, ব্যথা কমায়, গ্যাস্ট্রিকের নানান সমস্যা যেমন- পেট ব্যথা ও পেট ফোলাভাব কমায়।
এক গ্লাস পানিতে দুই চা-চামচ ভিনিগার মিশিয়ে পান করুন এবং গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমাতে এটা নিয়মিত গ্রহণ করা যেতে পারে।
লবঙ্গ: পেট ফোলাভাব, গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদির জন্য লবঙ্গ ব্যবহার করা হয় প্রাচীনকাল থেকেই। লবঙ্গ চিবিয়ে খাওয়া বা খাবারের পরে এলাচের সঙ্গে লবঙ্গের গুঁড়া মিশিয়ে এক কাপ চা পান অ্যাসিডিটি কমায় ও অতিরিক্ত গ্যাস দূর করতে সহায়তা করে।
উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ খাবার: উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ খাবার যেমন- বাদাম, বীজ, সবজি, বেরি ও সবুজ শাক সবজি হজম ক্রিয়া উন্নত করে ও গ্যাসট্রিকের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। গ্যাস্ট্রিকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ব্রকলি বেশ ভালো। এটা আঁশ সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি সালফোরাফেন যৌগের উৎস যা, পেটের সমস্যা সৃষ্টিকারী ‘হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাক্টেরিয়া’ ধ্বংস করে।
সবজির পানীয়: উচ্চ শর্করা ও অ্যাসিড সমৃদ্ধ এবং আঁশ না থাকায় গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমাতে ফলের রস খাওয়া নিষেধ করা হলেও সবজির রস এক্ষেত্রে খুব উপকারী। যেমন- আলুর রস, আন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় তা পেটের ব্যথা কমায়। কুমড়ার রস গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডিটি কমায়, পেটের সমস্যা দ্রুত সমাধান করে।
excellent post
কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ
Nice post
ধন্যবাদ
Beautiful
ধন্যবাদ