কৃত্রিম উপগ্রহ কাকে বলে? কৃত্রিম উপগ্রহের ব্যবহার কি কি?

কৃত্রিম উপগ্রহ হলো একটি মানব নির্মিত বস্তু যা পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে। এগুলো সাধারণত যোগাযোগ, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, দূরবর্তী সেন্সিং, গবেষণা, সামরিক বা বৈশ্বিক অবস্থানের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। তাহলে দেখায় যাচ্ছে কৃত্রিম উপগ্রহ গুরুত্ব কতটুকু। চলুন তাহলে কৃত্রিম উপগ্রহ কাকে বলে? কৃত্রিম উপগ্রহের ব্যবহার কি কি? কৃত্রিম উপগ্রহ কীভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়? কৃত্রিম উপগ্রহ কীভাবে কক্ষপথে চলে? ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

পোস্ট সূচিপত্র:

কৃত্রিম উপগ্রহ / স্যাটেলাইট কি বা কাকে বলে?

উপগ্রহের সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। মহাবিশ্বে এমন কতগুলো বস্তু রয়েছে, যেগুলো সূর্য বা বিভিন্ন নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরে বেড়ায়, তাদেরকে গ্রহ বলা হয়। তাদের নিজস্ব কোন আলো থাকে না। এরা অন্যের আলোয় আলোকিত হয়। যেমন – পৃথিবী, মঙ্গল, শুক্র, বুধ ইত্যাদি গ্রহ।

আর যেসকল গ্রহ কোন গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘুরে বেড়ায়, তাদেরকে উপগ্রহ বলা হয়। উদাহরণস্বরুপ চাঁদের কথা বলা যায়। কারণ চাঁদ পৃথিবী নামক গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরে বেড়ায়। তাই চাঁদ একটি উপগ্রহ।

তবে এমন অনেক গ্রহ রয়েছে যা মানুষ তৈরি করে মহাকাশে পাঠিয়েছে এবং যারা নির্দিষ্ট কক্ষপথে চাঁদের মতো পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এবং পৃথিবীতে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায্য করছে, এদেরকে কৃত্রিম উপগ্রহ বলা হয়। এরা মানুষের তৈরি বলে এদেরকে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট বলা হয়।

আবার সহজভাবে বলতে গেলে, মানুষের পাঠানো যেসব মহাকাশ যান পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে তাদের কৃত্রিম উপগ্রহ বলে।

কৃত্রিম উপগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ বা ব্যবহার

  • কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা যায়।
  • যোগাযোগ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • GPS এ এগুলো ব্যবহৃত হয়। GPS রিসিভার থাকলে সঠিক অবস্থান নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
  • কৃত্রিম উপগ্রহ সাধারণত যোগাযোগ, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, দূরবর্তী সেন্সিং, গবেষণা, সামরিক বা বৈশ্বিক অবস্থানের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
  • পৃথিবীর আকার সম্পর্কিত ভূ-জরিপ কাজে ব্যবহৃত হয়।
  • সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হয়।
  • টেলিফোন ও ইন্টারনেটের সাহায্যে আন্তঃমহাদেশীয় যোগাযোগ স্থাপন করতে ব্যবহার করা হয়।
  • ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন অঞ্চল বেতার ও টেলিভিশনের রিলে স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
  • প্রতিরক্ষামূলক বিভিন্ন সামরিক কাজে ব্যবহৃত হয়।
  • গ্রহ নক্ষত্রের গঠন সম্পর্কে গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হয়।
  • মহাজাগতিক রশ্মিসহ বিভিন্ন রশ্মির উৎস সহ বিভিন্ন গবেষণা করতে ব্যবহার করা হয়।
  • উর্ধ্বাকাশের বিভিন্ন বিকিরণ ও তার প্রভাব সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধানে ব্যবহার করা হয়।
এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন কাজে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট ব্যবহৃত হয়।

কৃত্রিম উপগ্রহ কীভাবে কক্ষপথে চলে?

পৃথিবীর চারদিকে ঘুরার জন্য কৃত্রিম উপগ্রহের কেন্দ্রমুখী বল বা আকর্ষণের প্রয়োজন হয়। কৃত্রিম উপগ্রহ উপর পৃথিবীর আকর্ষণ বল বা অভিকর্ষ বল এই কেন্দ্রমুখী বলের জোগান দেয়। হিসেব করলে দেখা যায় বায়ুমণ্ডলের বাইরে স্যাটেলাইটকে যদি পৃথিবীর প্রায় ২৫০ কিলোমিটার উপরে তুলে, পৃথিবী পৃষ্ঠের সমান্তরালভাবে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৮ কিলােমিটার বেগ দেওয়া যায় তাহলে কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর চারদিকে প্রতিনিয়ত ঘুরতে থাকে।

তাই তিনটি রকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম উপগ্রহকে নির্দিষ্ট উচ্চতায় তুলে তারপর ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বেগ দেওয়া হয়। আর তখন স্যাটেলাইটটি পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে থাকে। আবার কৃত্রিম উপগ্রহটি যদি ১ দিনে বা 24 ঘণ্টায় ১ বার পৃথিবীর চারদিকে প্রদক্ষিণ করতে পারে তাহলে স্যাটেলাইটটি নির্দিষ্ট স্থানেই স্থির আছে বলে ধারণা করা হয়।

কৃত্রিম উপগ্রহ কীভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়?

কৃত্রিম উপগ্রহগুলো পৃথিবীর উত্তর থেকে দক্ষিণে কিংবা দক্ষিণ থেকে উত্তরে পাক খায় এবং দিনে ২ বার যেকোনো স্থানের উপর দিয়ে যায়। ইনফ্রায়েড সেন্সরের মাধ্যমে দিনে এবং রাতে মেঘের আবরণের ফটো নিতে পারে। স্বয়ংক্রিয় ছবি প্রেরণ ইউনিটের মাধ্যমে ছবি প্রেরণ করে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে স্থাপিত শত শত গ্রাউন্ড স্টেশন স্যাটেলাইট দ্বারা ঐ ছবি বা সংবাদ গ্রহণ করা হয়।

কোথাও নিম্নচাপ হলে, বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে,ঝড়, টর্নেডো বা সাইক্লোন সৃষ্টি হলে কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ধরা পড়ে। এসব ঝড়, টর্নেডো, সাইক্লোন কোন দিকে অগ্রসর হচ্ছে, কোথায় আঘাত হানতে পারে তা উপগ্রহের পাঠানো ছবি থেকে বুঝা যায়। ফলে আবহাওয়ার অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। এভাবেই কৃত্রিম উপগ্রহ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, কৃত্রিম উপগ্রহ কাকে বলে? কৃত্রিম উপগ্রহের ব্যবহার কি কি? কৃত্রিম উপগ্রহ কীভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়? কৃত্রিম উপগ্রহ কীভাবে কক্ষপথে চলে? ইত্যাদি সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা দিতে পেরেছি। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
2 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Ridoy
    Ridoy November 2, 2022 at 11:15 AM

    So beautiful

    • jorip
      jorip November 4, 2022 at 5:30 AM

      ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url