ডেবিট কার্ড কি ও কিভাবে কাজ করে? ডেবিট কার্ডের সুবিধা-অসুবিধা

ব্যাংকিং জগতে বিপুলভাবে পরিচিত একটি নাম ডেবিট কার্ড। বর্তমানে ব্যাংকিং জগতেই প্রতিটি ব্যাংকের ডেবিট কার্ড রয়েছে। প্রায় প্রতিটি ব্যাংক হোল্ডার ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে থাকে। কারণ ডেবিট কার্ডের কার্যকারী অনেকগুলো ব্যবহার রয়েছে এবং বহুমুখী সুবিধাও রয়েছে।
ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে চেক প্রদান করা বা অন্যান্য কাগজপত্রের ঝামেলায় না গিয়ে ক্রেডিট কার্ডের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ব্যাংক একাউন্ট থেকে সরাসরি যেকোনো ধরনের পেমেন্ট দেওয়া যায়।

তবে বাংলাদেশে অনলাইন পেমেন্ট এর ক্ষেত্রে এখনো ডেবিট কার্ডের সব সুবিধা চালু হয়নি। অনলাইনে কিছু কিনতে গেলে বিশেষ করে EMI এর মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করতে হলে ক্রেডিট কার্ডের প্রয়োজন হয়। ব্যাংক ডেবিট কার্ড কিংবা ক্রেডিট কার্ড উভয়ই প্রদান করতে পারে।
 
ডেবিট কার্ড কি ও ডেবিট কার্ড কিভাবে কাজ করে, ডেবিট কার্ডের ধরন, ডেবিট কার্ড সুবিধা-অসুবিধা, ইত্যাদি সম্পর্কে  আটিকেলটি পড়লে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ডেবিট কার্ড কি?

ডেবিট কার্ড হলো একটি পেমেন্ট কার্ড, যা ব্যবহারে সরাসরি ব্যবহারকারীর কারেন্ট একাউন্ট বা চেকিং একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ক্রয়ের পাশাপাশি এটিএম মেশিন থেকে টাকা উত্তোলন ও অথোরাইজড মার্চেন্টের কাছে পেমেন্ট করা যাবে। সহজ ভাষায় ডেবিট কার্ড থেকে কেনা সেবা বা পণ্যের টাকা সরাসরি ব্যাংক একাউন্ট থেকে কেটে নিবে।

ডেবিট কার্ড কিভাবে কাজ করে?

ক্রেডিট কার্ড সাধারণত চার কোণার প্লাস্টিকের কার্ড যা চার্জ কার্ড নামেও পরিচিত। ব্যাংক বা ক্রেডিট ইউনিয়নে থাকা চেকিং একাউন্টের সাথে সংযুক্ত থাকে Debit card. একাউন্টের ফান্ডে জমা থাকা টাকা খরচ করার মাধ্যম হলো ডেবিট কার্ড।
ডেবিট কার্ড মূলত এটিএম কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড এর সংমিশ্রণ হিসেবে কাজ করে থাকে। কেনাকাটার পাশাপাশি ব্যাংকের এটিএম মেশিনে ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলা যাবে। আবার অনেক ব্যাংক তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্কের ডেবিট কার্ড বাদ দিয়ে ভিসা ও মাস্টারকার্ড এর মত বড় কার্ড-পেমেন্ট প্রসেসর এর ডেবিট কার্ড ইস্যু করছে। এই কার্ডগুলো সাধারণত চেকিং একাউন্টের সাথেই প্রদান করা হয়।

ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে খরচ করা টাকা একাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হয়। কিছু কিছু ডেবিট কার্ডে আবার স্পেন্ডিং লিমিট থাকে, যার মানে হলো প্রতি ২৪ ঘন্টায় নির্দিষ্ট এমাউন্টের বেশি খরচ করা যায়না।

ডেবিট কার্ডের ধরন

ডেবিট কার্ড সাধারণত ৪ ধরনের দেখা যায়। কার্ড কোন প্রতিষ্ঠান ইস্যু করছে মূলত তাই হলো এই কার্ডগুলোর প্রধান পার্থক্য।
  • সাধারণ ডেবিট কার্ডঃ ব্যাংক বা ক্রেডিট ইউনিয়ন দ্বারা ইস্যু করা এই ধরনের কার্ডে ভিসা, মাস্টারকার্ড ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের লোগো থাকে। এই কার্ড ব্যবহার করে এটিএমে গিয়ে ডিপোসিট করা যায় ও ক্যাশ উত্তোলন করা যায়।
  • এটিএম কার্ডঃ এটিএম কার্ড সাধারণ ডেবিট কার্ডের মত কাজ করে যা ব্যাংক প্রদান করে ও ব্যাংক একাউন্টের সাথে যুক্ত থাকে। এই ধরনের কার্ড শুধুমাত্র এটিএম থেকে ক্যাশ তোলা বা ডিপোজিট এর কাজে ব্যবহার করা হয়। অনলাইন বা অফলাইনে কেনাকাটার কাজে এই কার্ড ব্যবহার যায়না।
  • প্রিপেইড ডেবিট কার্ডঃ প্রিপেইড ডেবিট কার্ড ব্যবহারের আগে ফান্ড দ্বারা এই কার্ড লোড করতে হয়। এই ধরনের কার্ড সাধারণ ডেবিট কার্ড এর মত ব্যবহার করা গেলেও বিভিন্ন সেবার জন্য আলাদা ফি রয়েছে। যেমন ইবিএল অ্যাকুয়া প্রিপেইড কার্ড।
  • ইবিটি কার্ডঃ ইলেক্ট্রনিক বেনিফিটস ট্রান্সফার বা ইবিটি কার্ড সাধারণত সরকারী এজেন্সি দ্বারা কার্ডহোল্ডারের সোশ্যাল বেনেফিটস এর লক্ষ্যে প্রদান করা হয়। এই ধরনের কার্ডের প্রচলন আমাদের দেশে তেমন নেই বললেই চলে।

ডেবিট কার্ড কিভাবে পাব? – যেভাবে পাবেন ডেবিট কার্ড

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চেকিং একাউন্ট খুললে ডেবিট কার্ড ইস্যু করে থাকে, তবে এই কার্ড এর জন্য আবেদন করতে হয়। কার্ড রিসিভ করার পর কার্ড এর সাথে প্রাপ্ত নির্দেশনা অনুসরণ করে কার্ড একটিভ করতে হয়।
কার্ড একটিভ করার প্রক্রিয়াতে কার্ড এর জন্য পিন সেট করতে হয়। আপনি এই পিন নাম্বার দিয়ে পরবর্তীতে টাকা তোলা বা পণ্য বা সেবা কেনাকাটার ক্ষেত্রে কাজে আসবে। আপনার যদি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে না চান, তাহলে অনলাইনে সার্ভিসের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড নিতে পারেন। তবে সেগুলো অনেক ব্যয়বহুল এবং এটি সাধারণত ডলার কারেন্সির হয়ে থাকে। তাই ব্যাংক একাউন্ট খোলাই উত্তম।

উল্লেখ্য যে প্রিপেইড ক্রেডিট কার্ড এর ফি রয়েছে যা নিয়মিত একাউন্টের ডিপোজিট থেকে কেটে নেওয়া হয়। প্রায় সকল ব্যাংক ডেবিট কার্ড প্রদান করে ও প্রতিটি ব্যাংক দ্বারা কার্ড ইস্যু করার প্রক্রিয়া প্রায় একই ধরনের হয়ে থাকে।

ডেবিট কার্ডের ফি

সাধারণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডেবিট কার্ডে তেমন কোনো চার্জ কাটে না। তবে কিছু ক্ষেত্রে ডেবিট কার্ড এর জন্য ফি প্রদান করতে হয়, যেমনঃ
  • ওভারড্রাফট ফিঃ কেনাকাটার ক্ষেত্রে একাউন্ট ওভারড্রাফট করে ফেললে সেক্ষেত্রে এই ফি প্রদান করতে হয়।
  • এটিএম ফিঃ অধিকাংশ ব্যাংক ইন-নেটওয়ার্ক এটিএম উইথড্রয়াল এর ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ফি চার্জ করে না, তবে ব্যাংকের বাইরের নেটওয়ার্ক এর এটিএম থেকে টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে ফি প্রদান করতে হয়।
  • কাউন্ট হোল্ডসঃ ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে হোটেল বা কার রেন্টে নিলে সেক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে বেশি অর্থ খরচ হতে পারে, যার ফলে এই ফি একাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হয়।

ডেবিট কার্ড এর সুবিধা-অসুবিধা

ডেবিট কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধা, উভয়ই রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ডেবিট কার্ড এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে।

সুবিধা

  • ক্রেডিট কার্ডের মত ডেবিট কার্ড ব্যবহারে বেশি বার্ষিক ফি প্রদান করতে হয় না।
  • অগণিত স্টোর, অনলাইন মার্চেন্ট ও এটিএমে ডেবিট কার্ড ব্যবহার করা যায়। তাছাড়াও ডিজিটাল ওয়ালেটেও ডেবিট কার্ড ব্যবহার করা যায়।
  • ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে ব্যাংকে জমা থাকা অর্থের বাইরে খরচ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, নিজের একাউন্টে জমা থাকা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যবহৃত হওয়ায় এই সমস্যা ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে নেই।

অসুবিধা

  • কিছু কিছু ডেবিট কার্ড ফ্রি হলেও প্রিপেইড ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে মেইনটেইনেন্স ফি প্রদান করতে হয়। আবার ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট কারণে ওভারড্রাফট ফি বা এটিএম ফি কেটে নেওয়া হয়। আবার বেশিরভাগ কার্ডের জন্যই বার্ষিক ফি থাকে।
  • ছোটখাটো কেনাকাটার ক্ষেত্রে ডেবিট কার্ড বেশ সুবিধার হলেও বড়সড় কেনাকাটার ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড অধিক সুবিধা প্রদান করে।
  • নিজের জমা করা টাকা নিশ্চিন্তে খরচ করার সুবিধা থাকায় অজান্তেই অধিক খরচ হয়ে যেতে পারে।

ডেবিট কার্ড vs ক্রেডিট কার্ড

ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের কিছু পার্থক্য ইতিমধ্যে জেনেছি। প্রথমত ডেবিট কার্ডের ফান্ড আসে নিজের একাউন্ট থেকে, অন্যদিকে ক্রেডিট কার্ড মূলত ফান্ডের বাইরে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যবহারের সুযোগ প্রদান করে থাকে। ডেবিট কার্ড ব্যাংকে থাকা ডিপোজিট ব্যবহার করে এবং ক্রেডিট কার্ড একটি ক্রেডিট বা লোন ভিত্তিক ব্যবস্থার উপর কাজ করে।

ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে চেক লেখা ছাড়াই পেমেন্ট বা টাকা তোলা সম্ভব হয়। তবে আপনার জমা থাকা অর্থের সাথে খরচের অভ্যাসের মিল রাখা খুবই জরুরি। সুতরাং, বুঝেশুনে খরচ করলে ক্রেডিট কার্ডের চেয়ে ডেবিট কার্ড ব্যবহার অধিক নিশ্চিন্তে রাখবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, এই আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার পর ডেবিট কার্ড কি ওদের কার্ড কিভাবে কাজ করে এবং ডেবিট কার্ডের সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং ডেবিট কার্ড সম্পর্কে কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url