মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিরাপদ থাকার উপায়
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যাপক হারে প্রসার লাভ করছে। সহজ ও দ্রুততম সময়ে অর্থ স্থানান্তর এবং কেনাকাটার সুবিধা থাকায় মানুষ নিজের মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলছেন।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা, যেমন ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ, ডাচ বাংলা ব্যাংকের রকেট, ডাক বিভাগের নগদ প্রভৃতি সেবায় প্রতিদিন রেজিস্ট্রেশন করছেন নতুন নতুন গ্রাহক। শুধুমাত্র মোবাইলের সাহায্যে শর্টকোড ডায়াল করে পিন নম্বর দিয়েই টাকা স্থানান্তর করা যায় বলে মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ে ঝুঁকিও থাকে অনেক। এছাড়া মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেও লেনদেন করা সম্ভব। মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় নিরাপদ থাকার জন্য যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সে ব্যাপারে কিছু পরামর্শ দেয়া হলো।
পোস্ট সূচিপত্র:
- পিন নম্বর গোপন রাখুন
- ভুয়া “কাস্টমার কেয়ার” থেকে সাবধান
- সঠিক নিবন্ধিত নম্বরে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলুন
- লটারি, পুরষ্কার, জ্বীনের বাদশা থেকে সাবধান!
- নকল মেসেজ ও ভুয়া কলের ব্যাপারে সাবধান!
- যে কোনো নম্বরে টাকা পাঠানোর আগে ফোন করে জেনে নিন
- নিজ নিজ একাউন্টে লেনদেন করুন
- মেসেজের জন্য জায়গা রাখুন
- ব্যাল্যান্সের হিসেব রাখুন
- ফোন হারিয়ে গেলে
পিন নম্বর গোপন রাখুন
আপনার যদি একাধিক মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট থাকে (যেমন বিকাশ, নগদ, রকেট) তাহলে প্রত্যেকটি মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টের জন্য আলাদা আলাদা পিন নম্বর সেট করুন এবং এই পিন নম্বর কাউকে বলা থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন, কেউ যদি আপনার মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টের Pin নম্বর জেনে গেলে সে আপনার মোবাইল থেকে টাকা তুলে নিতে পারবে।
ভুয়া “কাস্টমার কেয়ার” থেকে সাবধান
আপনার মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টের পিন নম্বর শুধু আপনারই জানা উচিত- আর কারো না। ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ার থেকে কখনোই আপনার পিন নম্বর জানতে চাইবে না। যদি কেউ কাস্টমার কেয়ারের ভুয়া পরিচয় দিয়ে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট (যেমন- বিকাশ, নগদ, রকেট) পিন নম্বর কিংবা ভেরিফিকেশন কোড জানতে চায়, তাহলে পিন নম্বর না দিয়ে বরং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকিং সেবার হেল্পলাইনে ফোন দিয়ে অভিযোগ করুন।
সঠিক নিবন্ধিত নম্বরে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলুন
আপনার সিমের নিবন্ধন যদি সঠিক না হয় তাহলে সেটি যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে অথবা অন্য কেউ তুলেও নিয়ে যেতে পারে। এছাড়া সিম হারিয়েও যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে আপনার কাছে সিমের বৈধ কাগজপত্র থাকলে সহজেই সিম তুলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু কাগজপত্র না থাকলে সিম তুলতে পারবেন না- সেক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে থাকা টাকা আর ফেরত না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
লটারি, পুরষ্কার, জ্বীনের বাদশা থেকে সাবধান!
অনেকেই শুনে থাকবেন, অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে হঠাত বলা হয় “আপনি ৫ লাখ টাকার লটারি জিতেছেন, অমুক নম্বরে টাকা বিকাশ করলেই টাকা পাবেন”, অথবা “জ্বীনের বাদশা” সেজে অনেকে ফোন করে বিকাশ করতে বলে। তখন অনেকেই লোভে পড়ে মোবাইলে টাকা পাঠিয়ে দেয়। সুতরাং এসব ফাঁদ থেকে সাবধান হোন। প্রতারকের ফোন নম্বরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পুরো ব্যাপারটি জানান। মোবাইল ব্যাংকিং সেবার হেল্পলাইনে অভিযোগ করুন।
নকল মেসেজ ও ভুয়া কলের ব্যাপারে সাবধান!
আজকাল বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক সেবা ব্যবহার করে ইচ্ছেমত ফোন নম্বর বানিয়ে সেগুলো থেকে মেসেজ পাঠানো যায়, এমনকি কলও করা যায়। এগুলো খুবই বিপজ্জনক। নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, উদাহরণস্বরূপ, বিকাশ থেকে যে মেসেজগুলো আসে সেগুলোর মেসেজ প্রেরকের নামের স্থলে “bKash” লেখা থাকে- অর্থাৎ মেসেজটি bKash (বিকাশ) থেকে এসেছে। এখন কেউ যদি অনলাইনের মেসেজিং সেবার মাধ্যমে আপনাকে বিকাশ সেজে SMS দেয় এবং মেসেজে যদি লেখা থাকে, আপনার মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর ১০ হাজার টাকা এসেছে তাহলে নিশ্চয়ই অবাক হবেন।
আরো পড়ুন: রকেট একাউন্ট দেখার নিয়ম
অনেকেই আপনাকে এরকম প্রতারণামূলক মেসেজ পাঠিয়ে আপনার মোবাইলে কল করে বলবে যে “ভাই ভুলে আপনার বিকাশে ১০ হাজার টাকা চলে গেছে একটু তাড়াতাড়ি আমাকে ফেরত দেন।” তখন আপনি হয়ত সরল মনে মেসেজ দেখেই সাথে সাথে বিকাশে ডায়াল করে টাকা দিতে যাবেন। থামুন! এরকম মারাত্নক ভুল কখনও করবেন না যেন! প্রত্যেকবার মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে টাকার মেসেজ এলে নিজে মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে ডায়াল করে অথবা অ্যাপে লগইন করে ব্যাল্যান্স চেক করবেন। কল বা মেসেজের উপর মোটেই বিশ্বাস করবেন না।
উদাহরণস্বরূপ, বিকাশ থেকে মেসেজ আসলে মেসেজ পড়ে নিজে অবশ্যই *247# ডায়াল করে বা অ্যাপ থেকে নিজের ব্যাল্যান্স চেক করবেন যে একাউন্টে টাকা যোগ হল কিনা। অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট সেবার একাউন্ট নাম্বারে ডায়াল করে বা অ্যাপে ব্যাল্যান্স জেনে নিবেন। আবারও বলছি, কল বা মেসেজের উপর মোটেই ভরসা করে থাকবেন না। তাহলেই বিপদ হতে পারে।
যে কোনো নম্বরে টাকা পাঠানোর আগে ফোন করে জেনে নিন
যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে টাকা পাঠানোর আগে নিজ হাতে ফোনে সেই নম্বর তুলে কল করে নিশ্চিত হোন যে আপনি টাকা পাঠালে তা সঠিক ব্যক্তির কাছে যাবে কিনা। নম্বর ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে ফোন নম্বর হুবহু নকল করে প্রতারকেরা ফোন করে টাকা চাওয়ার ঘটনা ঘটছে। সুতরাং কোনো পরিচিতজনের নম্বর থেকে ফোন এলে আপনি টাকা দেয়ার আগে অবশ্যই আপনার মোবাইল থেকে সেই ব্যক্তির নম্বর ডায়াল করে জেনে নেবেন তিনি আসলেই টাকা চাচ্ছেন কিনা। গলার স্বর, প্রয়োজন প্রভৃতিও খেয়াল করে শুনবেন।
নিজ নিজ একাউন্টে লেনদেন করুন
ক্যাশ আউট ছাড়া নিজেদের মধ্যে টাকা লেনদেনের জন্য ব্যক্তিগত ফোন নম্বরে খোলা মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট ব্যবহার করুন। এতে হিসেব রাখা সহজ হয় ও নিরাপত্তাও বাড়ে।
মেসেজের জন্য জায়গা রাখুন
মোবাইলে নতুন মেসেজ আসার জন্য মেসেজ ইনবক্সে পর্যাপ্ত খালি জায়গা রাখুন। অনেক সময় ফিচার ফোনের মেসেজবক্স ভরে যায়, ফলে নতুন মেসেজ আসার জন্য স্পেস থাকেনা। এরকম হলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনের মেসেজ আসবে না। সুতরাং নতুন মেসেজের জন্য ইনবক্সে জায়গা রাখুন। মোবাইল কোম্পানির বিভিন্ন অফার ও অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় মেসেজ মুছে ফেলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মেসেজগুলো সংরক্ষণ করতে পারেন, যা ভবিষ্যতে কাজে লেগে যেতে পারে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এসব মেসেজ অন্য কেউ যাতে না দেখতে পারে। কেননা লেনদেনের বিবরণ দেখে ফেললেও অনেকে বিভিন্ন উপায়ে প্রতারণা করতে পারে।
ব্যাল্যান্সের হিসেব রাখুন
আপনার মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে কত টাকা জমা আছে সবসময় সেই হিসেবটা মনে রাখুন। জরুরী প্রয়োজনে কাজে লাগতে পারে। যেমন কাস্টমার কেয়ারে কোনো সমস্যায় পড়ে ফোন দিলে তারা ব্যাল্যান্স ও সর্বশেষ কয়েকটি লেনদেন সম্পর্কে জানতে চাইতে পারে (আপনি আসল গ্রাহক কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য)। তবে কাস্টমার কেয়ারে কখনোই আপনার পিন নম্বর জিজ্ঞেস করবেনা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মেসেজগুলোর তথ্যও বেশ স্পর্শকাতর। তাই মেসেজ লক করে রাখুন অথবা ফোন থেকে মুছে ফেলুন।
ফোন হারিয়ে গেলে
মোবাইল ফোন হারিয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব মোবাইল ব্যাংকিং হেল্পলাইনে কল করে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন। বাড়তি নিরাপত্তার জন্য সম্ভব হলে সিম কার্ডের পিন কোড সিক্যুরিটি অন করুন যাতে ফোন চালু করলে সিমের পিন দরকার হয়।
আরো পড়ুন: বিকাশ পিন লক হলে করণীয়
মনে রাখবেন, সিম কার্ডের পিন চালু করাটা একটু বিপজ্জনক, কেননা সিমের পিন নম্বর ভুলে গেলে (পাক কোড না থাকলে) আপনি আর আপনার সিম কার্ডটি ব্যবহার করতে পারবেন না- একই মোবাইল নম্বরের জন্য নতুন একটি সিম তুলতে হবে। এতে করে মোবাইল নম্বর ঠিকই ফিরে পাবেন, তবে একটু ঝামেলা হবে আরকি। সুতরাং সিমের পিন কোড অ্যাক্টিভ করার আগে দুবার ভাবুন।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শেষ কথা বলে কিছু নেই। তাই এই পয়েন্টগুলোর বাইরেও অনেক পয়েন্ট আছে যা হয়ত অন্য একদিন লেখা হবে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিরপত্তা নিয়ে আপনার যদি কোন কিছু জানার থাকে কমেন্টে শেয়ার করুন।
জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url