ফাইভার নাকি আপওয়ার্ক? কোনটি বেশি সুবিধাজনক?

ফাইভার এবং আপওয়ার্ক – উভয় সাইটেই রেটিং সিস্টেম রয়েছে, যাতে একজন গ্রাহক খুব সহজেই তার প্রয়োজন অনুযায়ী যোগ্য ফ্রিল্যান্সার খুঁজে নিতে পারে। তাই আপনি যদি একজন গ্রাহক হয়ে থাকেন, তবে কোনো ফ্রিল্যান্সারকে কাজে নিয়োগের আগে রেটিংস দেখে তার পূর্ববর্তী কাজসমূহ সম্পর্কে একটি সার্বিক ধারণা পেয়ে যাবেন। আর আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হন তাহলে আপনার কাজ হবে মার্কেটপ্লেসে নিজের রেটিং ভালো রাখা।

ফাইভারে স্কিল টেস্ট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আপনি যদি তাদের এই অফিসিয়াল পরীক্ষাগুলি দেন তবে ক্রেতারা আপনার দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা পাবেন। আপওয়ার্কে আগে স্কিল টেস্টের সুবিধা থাকলেও এখন সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

ফাইভারের পেইড মেম্বারশিপ নেই। সকলেই তাদের একাউন্ট কোনো মাসিক ফি ছাড়াই বিনামূল্যে চালাতে পারেন এবং ফাইভারের সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে পারেন। তবে আপনি যদি দক্ষ হন, তাহলে ফাইভার প্রো মেম্বার হতে পারেন। সেক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাবেন। তবে fiverr pro গ্রাহকদের কোনো মাসিক ফি দিতে হয়না।

আপওয়ার্কে বেশ কিছু পেইড মেম্বারশিপ প্ল্যান আছে। এগুলোর আলাদা সুবিধাও রয়েছে। যেমন- আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্সার প্লাস মেম্বার হন তাহলে আপনি জবে এপ্লাই করার জন্য ফ্রি কানেক্টস পাবেন, বিড রেঞ্জ দেখতে পাবেন, ইত্যাদি বাড়তি সুবিধা পাবেন। অপর দিকে বায়ারদের জন্যও রয়েছে বেশ কিছু পেইড প্ল্যান।

আপওয়ার্কের মোবাইল অ্যাপস এবং কম্পিউটার ট্র্যাকিং সফটওয়্যার রয়েছে। ঘন্টা ভিত্তিক জবের জন্য কম্পিউটারে আপওয়ার্ক ট্র্যাকিং সফটওয়্যার ইনস্টল করার দরকার হয়। একবার সক্রিয় হয়ে গেলে, ফ্রিল্যান্সারের কাজের স্ক্রিনশটগুলি পর্যায়ক্রমে ক্রেতার কাছে পাঠানো হয়, যা সময়ের ট্র্যাক রাখে এবং সেই অনুযায়ী ক্রেতাকে বিল দেওয়া হয়।

ফাইভারের কোনো ট্র্যাকিং অ্যাপ নেই। কিন্তু একটি মোবাইল অ্যাপ আছে। এই মোবাইল অ্যাপ দিয়ে বিভিন্ন চাকরি সংক্রান্ত কাজ এবং মেসেজ করা যাবে।

ফাইভার এবং আপওয়ার্ক থেকে পেওনিয়ার(Payoneer) কার্ড দেওয়া হয়। এই কার্ড দিয়ে আপনি টাকা তুলতে পারবেন এবং অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারবেন। আপনি সরাসরি ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারও করতে পারেন।

আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার বা ক্রেতা হোন না কেন, একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেসে সমস্যার সম্মুখীন হওয়া স্বাভাবিক। তাই, একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস তাদের প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে কিনা এবং সমস্যা সমাধানে তারা কী ভূমিকা পালন করে তা দেখা গুরুত্বপূর্ণ।

যদি একজন ফ্রিল্যান্সার এবং একজন ক্লায়েন্টের মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দেয়, ফাইভারকে প্রথমে ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্টের মধ্যে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। যদি এটি কাজ না করে, ফাইভারের প্রতিনিধি এটিতে কাজ করে। এছাড়া বিক্রেতা চাইলে চুক্তি বাতিল করতে পারেন।

আপওয়ার্কের কিছু চমৎকার বিরোধ নিষ্পত্তি এবং পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া রয়েছে। আপওয়ার্ক চুক্তি আটকে রাখতে পারে। প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করে, যদি ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্টের মধ্যে কোনো অসন্তোষ থাকে, Upwork একজন মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করে যে সমস্যাটি সমাধানের জন্য কাজ করে।

ফাইভারে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা নতুনদের জন্য অপেক্ষাকৃত সহজ। সম্প্রদায়টি জানায় যে বর্তমানে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা এবং আপওয়ার্কে অনুমোদন পাওয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু আপনি যদি এটি করতে জানেন তবে আপনি আপওয়ার্কে একটি খুব উচ্চ বেতনের এবং দীর্ঘমেয়াদী চাকরি পেতে পারেন। আমার মতে দুটি মার্কেটপ্লেসেই একাউন্ট রাখা যেতে পারে।

একেকটি ক্ষেত্রে এই দুটি প্লাটফর্মকে আলাদা ভাবে সেরা বলা যেতে পারে। দুটি প্লাটফর্মেই ফিচার এবং সুযোগ-সুবিধাগুলো আলাদা হবার কারণে তাদের নিজস্ব সমস্যাও রয়েছে। এই বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে আপনার দক্ষতা অনুযায়ী কোন প্লাটফর্ম কাজ করা উচিত।

আপওয়ার্ক ফ্রিল্যান্সিং-এ নতুনদের কাছে কঠিন মনে হতে পারে। কারণ আপওয়ার্কের অনেক বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা রয়েছে যে এটি মাঝে মাঝে কঠিন বলে মনে হতে পারে। একজন নতুন ফ্রিল্যান্সারের জন্য সব সুবিধা ব্যবহার করা সম্ভব না। তাই নতুন ফ্রিল্যান্সাররা আপওয়ার্ককে জটিল ভাবতে পারেন। কিন্তু ফাইভার অনেকটাই ইউজার ফ্রেন্ডলি। সহজেই ফাইভারের ফিচারগুলো বুঝা যায় এবং ফাইভারে কাজ পাওয়ার পদ্ধতিও অনেকটাই সহজ। সুতরাং আপনি যদি খুব অভিজ্ঞ প্রযুক্তি ব্যবহারকারী না হন তবে আপনার ফাইভার দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা উচিত।

অপরদিকে ফাইভারে লম্বা সময়ের প্রোজেক্ট তেমন একটা পাওয়া যায় না। কাজেই লম্বা সময় ধরে একটি কাজে যারা ইনকাম করতে চান তাদের জন্য ফাইভার ঠিক জায়গা নাও হতে পারে। ফাইভারের বেশিরভাগ কাজ অল্প সময়ের কাজ। ফাইভার সবচেয়ে ভালো হয় যখন আপনি সময় কম থাকেন এবং কিছু কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে চান। কিন্তু আপনি যদি কোনো কাজের পেছনে সময় দিতে চান তাহলে আপওয়ার্কই সেরা। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে দুটি প্লাটফর্মেই অ্যাকাউন্ট রাখা। তারপর নিজের সময় ও চাহিদা অনুযায়ী কাজ করা।

সব মিলিয়ে আপওয়ার্কে আয় করা সহজ। তবে সব ক্ষেত্রে নয়। আপনি যদি এমন কিছু করতে পারেন যা ফাইভারে বেশি বিক্রি বা অর্ডার পায় তাহলে ফাইভার সেই কাজের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু বেশিরভাগ চাকরিতে Upwork দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প এবং উচ্চ আয়ের প্রস্তাব দেয়।

অর্থাৎ আপনার কাজের ধরণ অনুযায়ী আপনার জন্য কোন প্লাটফর্ম সেরা সেটি নির্ধারণ করতে হবে। যেখানে আপনি বেশি আয় পাবেন সেখানে আপনার বেশি সময় ব্যয় করা উচিত। সর্বদা আপনার দক্ষতা উন্নত করার চেষ্টা করুন। ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে যেকোনো প্ল্যাটফর্মে সফলতা পাওয়া সহজ।

ফাইভার(Fiverr) এবং আপওয়ার্ক(Upwork) হল শীর্ষ অনলাইন মার্কেটপ্লেস। এই মার্কেটপ্লেসগুলি ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্ট উভয়ের জন্যই অফুরন্ত সম্ভাবনা রাখে। এই দুটি সাইট সম্পর্কে আপনার ব্যক্তিগত মতামত কি? ফাইভার এবং আপওয়ার্ক এর মধ্যে সেরা কোনটি? কমেন্ট করে আপনার মতামত জানিয়ে দিন।