আউটসোর্সিং: কী, কোথায় ও কীভাবে করবেন?

আউটসোর্সিং বর্তমান সময়ের একটি সেরা পেশা। খুব কম সময়ে বেশি ইনকাম করা আউটসোর্সিংয়ের মূল সুবিধা। তবেএকজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে হলে আপনার দক্ষতার পাশাপাশি যোগ্যতাও প্রমাণ করতে হবে। আপনার আরও কয়েকটি গুণ থাকতে হবে যেমন, পরিশ্রম করার মন মানুষিকতা, আত্মবিশ্বাস, ধৈর্যশীলতা এবং সততা। তাহলেই ভালো করা সম্ভব।

আউটসোর্সিং কী?

আউটসোর্সিং তথা ফ্রিল্যান্সিং শব্দের মূল অর্থ হল মুক্ত পেশা। অর্থাৎ মুক্তভাবে কাজ করে ইনকাম করার পেশা। আর একটু সহজ ভাবে বললে, ইন্টারনেট ব্যাবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের কাজ করিয়ে নেয়। নিজের প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য কাউকে দিয়ে কাজ করে নিয়াকে আউটসোর্সিং(Outsourcing) বলে। যারা আউটসোর্সিং এর কাজ করে তাদের বলা হয় ফ্রিল্যান্সার।
আউটসোর্সিং সাইট বা অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজগুলো বিভিন্ন ভাবে ভাগ করা থাকে। যেমন: ওয়েব ডেভেলপমেন্ট(Web development), সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট(Software development), নেটওয়ার্কিং ও তথ্যব্যবস্থা (Information Systems), লেখা ও অনুবাদ, প্রশাসনিক সহায়তা, ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়া, গ্রাহকসেবা, বিক্রয় ও বিপণন ইত্যাদি।

আউটসোর্সিং করতে যা যা প্রয়োজন:
  • কম্পিউটার / ল্যাপটপ,
  • ইন্টারনেট কানেকশন
  • কিছু কাজের দক্ষতা,
  • যথেষ্ট সময়।
ভেবে দেখুন আপনার কী কী আছে।  কম্পিউটার / ল্যাপটপ,, ইন্টারনেট কানেকশন ও যথেষ্ট সময় সবার থাকে কিন্তু কাজের দক্ষতা সবার না ও থাকতে পারে। সেজন্যই দরকার নিজেকে দক্ষ করে তোলা। যদি উপরের জিনিসগুলো আপনার থাকে তাহলে চলুন সামনে দিকে এগিয়ে যায়...

এখন যেকোনো মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট খুলুন। একাউন্ট খোলার সময় আপনার ব্যক্তিগত ঠিকানা, ইমেইল, ফোন নম্বর ইত্যাদি সঠিকভাবে পূরণ করবেন। একাউন্ট খোলার পর আপনার প্রোফাইলে গিয়ে একটি সিভি তৈরী করতে হবে। সিভিতে উল্লেখ করতে হবে আপনার কোন কোন কাজে দক্ষতা রয়েছে এবং আপনার চাহিদা কেমন। সেখানে আপনার ওয়েবসাইটের লিংকও দিতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনার প্রোফাইল যত সুন্দর ও আকর্ষণীয় হবে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি থাকবে। তাই যতটা সম্ভব আপনার প্রোফাইলকে আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করবেন। প্রোফাইল এমন ভাবে তৈরী করবেন যেন ক্লায়েন্ট আপনার প্রোফাইল দেখেই আপনার উপর ভরসা করতে পারে।
প্রোফাইল তৈরী করা শেষ হয় গেলে এবার সাইট গুলোতে একটু ঘুরে ঘুরে দেখেন। একাউন্ট খোলার প্রথম কয়েকদিন কাজের জন্য প্রস্তাব করবেন না। বিশেষ করে ১ম ৪-৫ দিন সাইটের বিভিন্ন ফিচারগুলো দেখে নিতে পারেন।  সাইটের নিয়ম-কানুন, সুযোগ-সুবিধা সহ বিভিন্ন বিষয় ভালো করে দেখে নিন। পরে কাজ করতে সুবিধা হবে।

তারপর আস্তে আস্তে  প্রস্তাব করা শুরু করুন। প্রথম অবস্থায় কাজ পেতে একটু দেরি হয়। মোটামুটি ১৫-২০ দিন সময় লাগতে পারে। তাই ধৈর্য সহকারে প্রস্তাব করে যেতে হবে। ধৈর্য হারানো যাবে না। যখন প্রথম ২ থেকে ৩টি  কাজ ভালো ভাবে শেষ করতে পারবেন, তখন আপনাকে আর পেছন  ফিরে তাকাতে হবে না আসা করি। তখন ক্লায়েন্ট আপনাকে কাজের জন্য খুজবে।

যা জানা জরুরি:

কাজ করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই মনে  রাখবেন। আপনাদের সুবিধার্থে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিচে আলোচনা করা হলো।

রেটিং/ফিডব্যাকঃ

কোনো কাজ শেষ করার পর ক্লায়েন্ট কাজ রিভিউ করার পর কাজের দক্ষতা ও অন্যান্য দিক বিবেচনা করে আপনাকে একটি রেটিং দিবে।  এই রেটিং আপনার প্রোফাইল জব হিস্ট্রিতে সবাই দেখতে পারবে। আপনার রেটিং দেখেই অন্য ক্লায়েন্ট বুঝতে পারবে ওই কাজের উপর আপনার দক্ষতা কতটুকু। তাই যতটা সম্ভব ভালো কাজ করার মানুষিকতা থাকতে হবে। রেটিং ৪.৫-৫ রাখার চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই পরবর্তিতে কাজের জন্য চিন্তা করতে হবে না।

র‌্যাংকিংঃ

মার্কেটপ্লেসগুলোতে ফ্রীলান্সারদের একটি র‌্যাংকিং থাকে। যখন কোনো ক্লায়েন্ট তার কাজের জন্য ওই সাইটের ফ্রীলান্সার খুঁজে তখন এই র‌্যাংকিং হিসেবেই ফ্রীলান্সারদের লিস্ট শো করে।  আপনার র‌্যাংকিং যদি খারাপ হয় থাকে তাহলে আপনাকে সার্চে সবার শেষে দেখাবে। রেন্ট-এ-কোডার এর আপনার গড় রেটিং, সর্বমোট কত টাকার কাজ সম্পন্ন করেছেন এবং কত ঘন্টা কাজ করেছেন তা দিয়ে আপনার অবস্থান নির্ধারিত হয়। র‌্যাংকিং এবং রেটিং মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।

কাজের সময়সীমাঃ

কাজ শেষে করার জন্য ক্লায়েন্ট একটি নির্দিষ্ট সময় দিয়ে দেয়। একেই বলে ডেডলাইন বা কাজের সময়সীমা। কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করবেন। কখনো যদি মনে হয় কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারবেন না, তখন কাজ শুরু করার আগেই ক্লায়েন্টকে জানাবেন। যদি সময় মত কাজ জমা দিতে না পারেন তাহলে হয়ত আপনি কোনো পেমেন্টই পাবেন না এবং ক্লায়েন্ট আপনাকে একটি খারাপ রেটিং দিতে পারে। তাই কাজের সময়সীমা ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।

আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থানঃ

আউটসোর্সিং ইনকামে বাংলাদেশ ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে। কম খরচ ও ঝুঁকি বিবেচনায় ইউরোপ-আমেরিকা তথা উন্নত বিশ্বের অনেক বড় কোম্পানি এখন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে আউটসোর্সিং করছে। এতে বাংলাদেশ হয়ে উঠছে ফ্রিল্যান্সিং কর্মসংস্থানের বড় উৎস। ফ্রিল্যান্সিং কাজের মধ্যে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে ওয়েব ডিজাইন, কর প্রতিবেদন প্রস্তুতকরণ ও সার্চ ইঞ্জিন ওপটিমাইজেশনসহ অনেক কাজই রয়েছে। বৈশ্বিক বাজারে ফ্রিল্যান্সিং হয়ে উঠেছে অনেক বাংলাদেশির পছন্দের ক্যারিয়ার। এদেশের তরুণ-তরুণীদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং অনেক সহজ হয়ে গেছে।
অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট- ওআইআই’র তথ্যমতে, অনলাইন শ্রমিক সরবরাহে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। বর্তমানে এ দেশের নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সার রয়েছে ছয় লাখ ৫০ হাজার। এদের মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ নিয়মিত কাজ করছে।

বাংলাদেশের আইসিটি ডিভিশনের তথ্য অনুযায়ী, তারা বার্ষিক ১০ কোটি ডলার ইনকাম করছে। অনলাইন শ্রমিক সরবরাহে বিশ্বের শীর্ষ দেশ ভারত। বিশ্বের ফ্রিল্যান্সার শ্রমিকের ২৪ শতাংশই ভারতের, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সার বিশ্বের ১৬ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিল্যান্সার ১২ শতাংশ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url