আপওয়ার্ক একাউন্ট ব্যান হওয়া থেকে বাঁচার উপায়
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস হলো আপওয়ার্ক। নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ক্লায়েন্ট খোঁজা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। অনেক সময় নতুন ফ্রিল্যান্সাররা কাজ শেখার পরেও সঠিক ক্লায়েন্ট খুঁজে না পাওয়ার কারণে কাজ ছেড়ে দেয়। আপওয়ার্ক হল এমন একটি প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সার এবং একটি ক্লায়েন্ট বা বায়ারের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন সম্পন্ন হয়ে থাকে।
আপওয়ার্ক(Upwork) মূলত একটি অনলাইন কাজের ওয়েবসাইট। আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ক্লায়েন্ট খুঁজেন তাহলে সহজেই আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেস এর মাধ্যমে পেয়ে যাবেন। আবার যদি একজন ক্লায়েন্ট হিসেবে ফ্রিল্যান্সার খুঁজেন তাহলেও আপওয়ার্কে খুব সহজেই পেয়ে যাবেন।
প্রায়ই আপওয়ার্কের পক্ষ থেকে তাদের ফ্রিল্যান্সারদের একাউন্ট ব্যান কিংবা সাসপেন্ড অথবা হোল্ড করার খবর পাওয়া যায়। নিরাপত্তার কারণে আপওয়ার্ক তাদের ফ্রিল্যান্সারদের উপর আরোপ করা নীতির সাথে আগের চেয়ে কঠোর ভাবে পালন করছে।
পোস্ট সূচিপত্র:
আপওয়ার্কের একাউন্ট কেন সাসপেন্ড হয়?
আপওয়ার্ক কারণ ছাড়া কখনো কোন ফ্রিল্যান্সারের একাউন্ট সাসপেন্ড করে না। আপনি যদি আপওয়ার্ক এ ফ্রিল্যান্সিং করার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন তাহলে কিছু জিনিসের উপর খেয়াল রাখার মাধ্যমে একাউন্ট সাসপেন্ড হওয়া থেকে বাঁচাতে পারেন। আমাদের আজকের পোষ্টে আপওয়ার্কে একাউন্ট ব্যান হওয়ার কারন এবং একাউন্ট ব্যান হওয়া থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপওয়ার্ক এর একাউন্ট সাসপেনশনের পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। আপওয়ার্ক একাউন্ট হোল্ডারদের নিম্নোক্ত বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকলে অনাকাঙ্ক্ষিত একাউন্ট ব্যান, সাসপেনশন কিংবা হোল্ড থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
এক পিসি থেকে একাধিক একাউন্ট খোলা
একই পিসি বা আইপি থেকে একের অধিক আপওয়ার্ক একাউন্ট তৈরি করা আপওয়ার্ক একাউন্ট ব্যান বা সাসপেন্ড হবার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার কখনোই তার কাজ নিজের পিসি ছাড়া অন্য কারো পিসিতে করে না আবার তারা কখনো নিজের পিসিতে অন্য কোনো একাউন্টও লগ ইন করবে না। সাবধানতার জন্য নিজের আইপি থেকে অন্য আপওয়ার্ক একাউন্টেও লগ ইন করা যাবে না। বায়ার যদি তার একাউন্টে প্রবেশ করতে বলে তাও প্রবেশ করা যাবে না।
অন্যের প্রোফাইল নকল করা
আপওয়ার্ক একাউন্ট ব্যান বা সাসপেন্ড হওয়ার অন্যতম কারন হলো অন্যের প্রোফাইল নকল করা। একজন ফ্রিল্যান্সার চাইলে অন্য কাউকে ফলো করতে পারেন কিন্তু কখনোই তাকে অনুকরণ করতে পারেন না। তবে অনেক ফ্রিল্যান্সার বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের অনেক বড় বড় ফ্রিল্যান্সারদের প্রোফাইল পুরোপুরি নকল করে ফেলেন।
যদিও এটি অনেকের জন্য সময় বাঁচাতে পারে, তবে এটি ভবিষ্যতে মোটেই আশানুরূপ ফলাফল দিবে না। আপনি যখন কোন ফ্রিল্যান্সারের প্রোফাইলের কনটেন্ট গুলো নিজের প্রোফাইলে দিবেন সেগুলো কোনো না কোনো সময় কারো চোখে পড়বে। তাছাড়া আপওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে সমস্যাটি সনাক্ত করতে পারে। আপওয়ার্ক এ ধরনের কোনো বিষয় শনাক্ত করলে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
পোর্টফোলিও আইটেম চুরি
পোর্টফোলিও বলতে মূলত আগে করা কাজগুলোর আর্কাইভকে বোঝায়। যদি কোনো ফ্রিল্যান্সার অন্য কারো পোর্টফোলিও আইটেম নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেটি অবশ্যই অপরাধ। তাছাড়া কোনো ফ্রিল্যান্সার যদি দক্ষ হয়ে থাকে তাহলে তাকে কখনোই আরেক জনের কাজ চুরি করে দেখাতে হবে না। আপওয়ার্ক এসব ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
কভার লেটার স্প্যামিং
ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে ইংরেজিতে দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন ফ্রিল্যান্সারের অন্তত প্রজেক্টের চাহিদা বোঝা কিংবা সে অনুযায়ী ক্লায়েন্টের সাথে সাবলীলভাবে যোগাযোগ করার ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। আপওয়ার্ক একাউন্ট ব্যান বা সাসপেন্ড হওয়ার অন্যতম কারণ হলো কাভার লেটার স্প্যামিং। যাকে বাংলা কথায় কপি পেস্ট বলে। একই ধরনের কভার লেটার বারবার স্প্যাম করা একজন ফ্রিল্যান্সারের আপওয়ার্ক একাউন্ট হারানোর জন্য দায়ী হতে পারে।
কন্টাক্ট ইনফরমেশন শেয়ার
আপওয়ার্ক পলিসিতে মার্কেটপ্লেসে কোনো ধরনের কন্টাক্ট ইনফরমেশন শেয়ার করা যাবে না। অনেক সময় ক্লায়েন্টই তাদের জব পোস্টে ফ্রিল্যান্সারদের স্কাইপি আইডি চেয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের সাথে এ বিষয়ে নিশ্চয়তা নিতে হবে যে সকল আর্থিক লেনদেন আপওয়ার্কেই হবে। এই নিশ্চয়তা নিয়ে কাজ করলে ফ্রিল্যান্সারদের কোনো প্রকার সমস্যা হবে না।
মাত্রাতিরিক্ত ম্যানুয়াল আওয়ার যোগ করা
ক্লায়েন্ট নতুন অথবা কাজ দেওয়ার পরে যদি কোনো কারনে Hourly Limit সেট না করে থাকে তাহলে ফ্রিল্যান্সার সেই সুযোগের সত ব্যবহার করতে পারে। ট্র্যাকার দ্বারা কাজের সময় গুলো ট্র্যাক না করে নিজের ইচ্ছা মতো বসিয়ে ম্যানুয়াল আওয়ার বসিয়ে দিলে ক্লায়েন্ট জেনে গেলে বিপদের মুখে পড়ে যাবে। আপওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ যদি এই বিষয়গুলো জানে তবে তারা ফ্রিল্যান্সারদের একাউন্ট ব্যান কিংবা সাসপেন্ড করতে পারে।
বায়ারের সাথে অন্যায্য বাকবিতন্ডা করা
বায়ারের সাথে ফ্রিল্যান্সাররা যদি কোনো অন্যায্য বাকবিতন্ডা করে থাকে তাহলে বায়ার চাইলে ফ্রিল্যান্সারের বিরুদ্ধে আপওয়ার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ জানাতে পারবে। তখন যদি আপওয়ার্ক ওই ফ্রিল্যান্সার এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমান পেয়ে যায় তাহলে সেই ফ্রিল্যান্সারের একাউন্ট ব্যান কিংব সাসপেন্ড করে পারে। তাই আপওয়ার্কে কোনো বায়ার বা ক্লায়েন্টের সাথে কোনো প্রকার ঝামেলাতে না জড়ানোই সবচেয়ে ভালো হবে।
বায়ার বা ক্লায়েন্টের একাউন্ট সাসপেন্ড কেন হয়?
শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সারদের একাউন্ট যে সাসপেন্ড কিংবা ব্যান হয়ে যায় তা কিন্তু না। অনেক সময় ক্লায়েন্ট বা বায়ারের একাউন্টও ব্যান হয়ে যেতে পারে। ক্লায়েন্ট বা বায়ার যদি কোনো এজেন্সি হয়ে থাকে এবং তারা যদি নিজেদের এজেন্সির লোকদের কাজের জন্য হায়ার করে তাহলে একাউন্ট ব্যান হবার সম্ভাবনা থাকে। এএছাড়াও পেমেন্ট পদ্ধতি হিসাবে ভুয়া পেপাল আইডি ব্যবহার করলেও বায়ার বা ক্লায়েন্টের আইডি সাসপেন্ড হয়ে যেতে পারে।
এছাড়া অনেক সময় বায়ারদের কার্ড কিংবা একাউন্টে টাকা না থাকলে একাউন্ট এর কাজ ব্যাহত হতে পারে। সেক্ষেত্রে পুনরায় টাকা ঢুকিয়ে নিলে আগের মতোই কাজ চলবে। আবার ফ্রিল্যান্সারদের সাথে জব চলমান অবস্থায় যদি ক্লায়েন্টের মেসেজের উত্তর না দেয়, তাহলেও ক্লায়েন্ট এ ব্যাপারে আপওয়ার্ক সাপোর্ট সেন্টারে জানাতে পারবে। তখন আপওয়ার্ক ওই বায়ার বা ক্লায়েন্টের উপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
আপওয়ার্ক অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। আপওয়ার্কে সততা এবং নিষ্ঠার সাথে কাজ করে অনেকেই তাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে। আপওয়ার্কের একাউন্ট ব্যান হবার কারন সম্পর্কিত আমাদের এই পোষ্টটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। নিত্য নতুন প্রযুক্তি বিষয়ক সকল প্রকার তথ্য এবং টিপস পেতে আমাদের ওয়েবসাইটি নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।
জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url