হোয়াটসঅ্যাপ নাকি টেলিগ্রাম? কোনটি সেরা?
বর্তমান সময়ে মেসেজিং অ্যাপগুলোর মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রাম খুবই জনপ্রিয়। বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হওয়া সত্বেও প্রতিনিয়ত মানুষ টেলিগ্রামের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তাই হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রামের মধ্যে কোন অ্যাপটি ভালো তা মানুষের মনে প্রশ্ন জাগানো খুবই স্বাভাবিক। কোন অ্যাপটি বেশি ভালো। আজকের আর্টিকেলে আমরা হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রাম এর ফিচার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করবো।
হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রামের মধ্যে কোন অ্যাপটি বেশি সেরা এটি আসলে নির্ভর করে অ্যাপগুলোর ফিচার, নিরাপত্তা সুবিধা এবং ব্যবহারকারীর প্রয়োজনীয়তার উপরে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রাম এর ফিচার সম্পর্কে।
টেলিগ্রাম অ্যাপের ফিচার
নিচে টেলিগ্রাম অ্যাপের ফিচারগুলো আলোচনা করা হলো:
ইউজারনেম সুবিধা
টেলিগ্রাম অ্যাপে কোনো নাম্বার ছাড়াই যেকোনো ব্যবহারকারীর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব। টেলিগ্রাম অ্যাপে ব্যবহারকারীদের ইউজারনেম থাকায় সেটি সার্চ করেই তার সাথে কথা বলা যায়।
BOT সুবিধা
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং প্রোগ্রামের একদম এডভান্স লেভেলের একটি প্রোগ্রাম হলো BOT। এই প্রোগ্রামটি অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে সক্ষম। যেমন: আপনি যদি ইমেজ BOT কে কোন নাম দেন তাহলে সে তার ওপর ভিত্তি করে আপনাকে ছবি খুঁজে এনে দিবে। টেলিগ্রামেও ব্যবহারকারী এই সুবিধাটি ভোগ করতে পারবে। এগুলোর মধ্যে স্টিকার BOT, ইমেজ BOT এবং gif BOT অন্যতম।
চ্যানেলের সুবিধা
হোয়াটসঅ্যাপের গ্রুপের সাথে অনেকটা মিল রয়েছে টেলিগ্রামের চ্যানেলের। তবে চ্যানেলের কাজ গ্রুপের থেকে বেশি এবং অন্যরকম হয়ে থাকে।একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য থাকতে পারে, তবে একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে সদস্য সংখ্যার জন্য কোনও নির্দিষ্ট সীমা নেই। তবে এক্ষেত্রে কোন সদস্য চ্যানেলের মধ্যে পোস্ট করতে পারবে সে ব্যাপারে চ্যানেলের ক্রিয়েটর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। সীমিত সংখ্যক লোক একটি চ্যানেলে পোস্ট করতে পারে, তবে চ্যানেলের সমস্ত সদস্যরা এটি দেখতে পারেন। মূলত কোনো বড় সংখ্যার ম্যানেজমেন্ট টিমকে লিড দেওয়ার ক্ষেত্রে এই সুবিধাটি অনেক সহায়তা করে থাকে।
অসীম সার্ভার স্টোরেজ
টেলিগ্রাম অ্যাপে অসীম সার্ভার স্টোরেজের সুবিধা রয়েছে। এখানকার সমস্ত মিডিয়া ফাইল, টেক্সট মেসেজ, ইমেজ, এবং ডকুমেন্ট সমস্ত ক্লাউড স্টোরে সেভ হয়ে থাকে। ফলে টেলিগ্রাম অ্যাপে কোনও ব্যাকআপ বা ডেটা স্টোরেজ নিয়ে চিন্তা করার দরকার হয় না। এমনকি একাধিকবার অ্যাপ থেকে লগ আউট করলেও ব্যবহারকারীর সমস্ত তথ্য এখানে গচ্ছিত থাকে।
ভয়েস কল
অন্য যেকোনো মেসেজিং অ্যাপের মতোই টেলিগ্রামে ভয়েস কলের সুবিধা পাওয়া যায়।
মিডিয়া কম্প্রেশন
টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীরা যদি চান তাহলে অ্যাপের মাধ্যমে ছবি কিংবা ভিডিও কে কম্প্রেশন করেও পাঠাতে পারবেন। ফলে যেকোনো বড় ফাইল খুব ছোট পরিসরে পাঠানো যায়।
যেকোনো ধরনের ফাইল পাঠানো যায়
টেলিগ্রাম অ্যাপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং ব্যবহার উপযোগী বৈশিষ্ট্য হল এই অ্যাপের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের ফাইল পাঠানো যায়। অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া এই ফিচারটি না থাকায় ব্যবহারকারীদের কাছে এই ফিচারটির কারনে টেলিগ্রাম জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সিক্রেট চ্যাটের সুবিধা
টেলিগ্রাম অ্যাপের আরেকটি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল সিক্রেট চ্যাটের সুবিধা। এই চ্যাট এন্ড টু এন্ড এনক্রিপটেড থাকে। এছাড়াও এতে সেলফ ডেস্ট্রাক্ট টাইমার থাকায় ব্যবহারকারী সময় নির্ধারণ করে দিলে সেই সময়ের মধ্যে এই ফিচার উক্ত ম্যাসেজ নষ্ট করে ফেলবে। টেলিগ্রামের দাবী এই ফিচার কোনো ভাবেই হ্যাক করা সম্ভব নয়।
মাল্টি প্লাটফর্ম সাপোর্ট
টেলিগ্রাম অ্যাপটি সমস্ত প্ল্যাটফর্মে নির্বিঘ্নে ব্যবহার করা সম্ভব। এই অ্যাপটি এন্ড্রয়েড, আইওএস, উইন্ডোজ, ম্যাকওস এবং যেকোনো ব্রাউজার এর মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়।
হোয়াটসঅ্যাপের ফিচার
নিচে হোয়াটসঅ্যাপে ফিচারগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
ভয়েস এবং ভিডিও কল
টেলিগ্রামে শুধুমাত্র ভয়েস কলের সুবিধা পাওয়া গেলেও হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস এবং ভিডিও দুই ধরনের কলেরই সুবিধা পাওয়া যায়। মোবাইলে কিংবা কম্পিউটার যার মাধ্যমেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন না কেন যার ইন্টারনেট কানেকশনের মান যত শক্তিশালী হবে তার ভয়েস এবং ভিডিও কলের মান তত উন্নত হবে। এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপে কল করার ক্ষেত্রে ডেটা খুবই কম খরচ হয় বিধায় ব্যবহারকারীদের কাছে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
প্রতিটি চ্যাট এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন যুক্ত
টেলিগ্রামে যেখানে শুধুমাত্র তাদের সিক্রেট চ্যাটে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন সুবিধা পাওয়া যায় সেখানে হোয়াটসঅ্যাপের প্রতিটি চ্যাটে এই সুবিধা পাওয়া সম্ভব। তাই এক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী অতিরিক্ত নিরাপত্তা সুবিধা পান।
ডেলিভারি এবং রিড নোটিফিকেশন
কাউকে কোন মেসেজ পাঠানো হলে সেই মেসেজটি কখন ডেলিভার হলো অথবা যাকে মেসেজ পাঠানো হয়েছে সে মেসেজ পড়েছে কি না সব কিছুই হোয়াটসঅ্যাপে দেখা সম্ভব। এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপে ব্যবহারকারী জানতে পারে পোস্ট করা যেকোনো স্ট্যাটাস কতজন মানুষ দেখেছে।
হাই কোয়ালিটির ছবি প্রেরণ
হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারী খুব সহজেই তার যেকোনো ছবি সর্বোচ্চ রেজুলেশনে পাঠাতে পারে। অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছবি প্রেরণ করলে ছবি বেশিরভাগ সময়ই ফেটে যায়। তবে হোয়াটসঅ্যাপে ডকুমেন্ট হিসেবে ছবি পাঠালে ছবির আসল রেজুলেশন রাখা সম্ভব।
লাইভ লোকেশন শেয়ারিং
হোয়াটসঅ্যাপের আরও একটি জনপ্রিয় ফিচার হলো লাইভ লোকেশন শেয়ারিং। হোয়াটসঅ্যাপের এই ফিচারের মাধ্যমে আপনি আপনার বর্তমান লাইভ লোকেশন যে কারো সাথে শেয়ার করতে পারবেন। এছাড়া লাইভ লোকেশন শেয়ার করার ক্ষেত্রে আপনি টাইমার সেট করে রাখতে পারবেন। যার ফলে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে লাইভ লোকেশন শেয়ার করা বন্ধ হয়ে যাবে।
ডাটা ব্যাকআপ ও রিস্টোর
হোয়াটসঅ্যাপে অল্প কিছু স্টেপ ফলো করে আপনি আপনার হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ, ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য ফাইল গুগল ড্রাইভ অথবা আইক্লাউড এ ব্যাকআপ করতে পারবেন এবং আপনি সেই ডাটা যেকোনো জায়গায় রিস্টোর করে রাখতে পারবেন। যার ফলে আপনি যদি আপনার ফোন পরিবর্তন করেন তারপর ও ডাটা আপনার কাছেই থাকবে।
হোয়াটসঅ্যাপ নাকি টেলিগ্রাম, কে সেরা?
দুটি মেসেজিং অ্যাপেরই নিজস্ব কিছু গুনের পাশাপাশি কিছু কমতি রয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপে যেমন ভিডিও কলের সুবিধা সকল চ্যাটে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন সুবিধা রয়েছে যেগুলো টেলিগ্রামে পাওয়া যায় না। তেমনি ক্লাউড স্টোরেজের ক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে টেলিগ্রাম অনেকটা এগিয়ে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বট, সব ধরনের ফাইল শেয়ারিং এর সুবিধা সব কিছুই হোয়াটসঅ্যাপে না থাকলেও টেলিগ্রামে আছে।
আরো পড়ুন: হোয়াটসঅ্যাপ কল লিংক ফিচার ব্যবহারের নিয়ম
কোনটি সেরা সেটি আসলে নির্ভর করবে আপনার ব্যবহারের উপরে। আপনি আপনার মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন থেকে কেমন সুবিধা ভোগ করতে চান সেটির উপর ভিত্তি করে যেকোনো একটিকে সেরা বলতে পারবেন। হোয়াটসঅ্যাপ নাকি টেলিগ্রাম? কোনটি সেরা?। এই বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারবেন। নিত্য নতুন তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক আপডেট পেতে নিয়মিত ভিজিট করুন এই ওয়েবসাইটে। ধন্যবাদ।
জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url